সোলায়মান – আল্লাহ্‌র কালামে ‘অশ্লীল কথা’?

সোলায়মান—“আল্লাহ্‌র কালামে এমন ধরনের অশ্লীল কথা থাকতে পারে না”

আল্লাহ্‌র কালামে জীবনের সমস্ত বিষয়ের জন্য হেদায়েত আছে। সোলায়মান কিতাব হল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের একটি কবিতা, এবং এর মধ্যেকার সমস্ত বর্ণনা বিবাহের মধ্যে উপযুক্ত। এই কিতাবের দুই ব্যক্তির ‘প্রিয়’ এবং ‘প্রিয়া’ নাম থেকে বোঝা যায় এরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। কবিতা মধ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে “স্ত্রী” বলেননি বরং তাকে “প্রিয়া” করে ডাকলেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলে সেটা কি খারাপ না ভাল? অবশ্যই ভাল। আমরা বিশ্বাস করি না যে স্বামী-স্ত্রীর মিলন একটি খারাপ জিনিস, বরং উপযুক্ত সম্পর্কের মধ্যে এটা একটি খুবই সুন্দর জিনিস। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে বিবাহ এবং বিয়ের সম্পর্ক একটি নেয়ামত এবং ভাল, এবং হাদিসের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর যৌন জীবন নিয়ে খুব বিস্তারিত কথা আছে।

আধুনিক যুগে পৃথিবী জুড়ে টেলেভিশন দেখলে মনে হয় যে সবাই মনে করে প্রেম এবং কাম ভাল শুধু বিবাহের বাইরেই! তাই সোলায়মানের মত একটি লেখা ভাল, যেখানে বিবাহের মধ্যে ভালবাসার আদর্শ পাওয়া যায়। বিবাহের নেয়ামত মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই সোলায়মান কিতাব দেওয়া হয়েছে, যেন বিবাহের মধ্যে আমরা ভালবাসার আগুন জ্বলতে রাখি, বিবাহের বাইরে নয়।

অনেকে আবার এই কিতাব ব্যাখ্যা করে একটি রূপক কবিতা হিসেবে। বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌র বান্দাদের জন্য আল্লাহ্‌র মহব্বতের একটি রূপক ছবি এখানে আছে। তেমনই ভাবে ইসলামি সূফি-সাধকেরা ভালবাসার কবিতা দিয়ে আল্লাহ্‌র মহব্বত প্রেমিক-প্রেমিকার ভালবাসার সঙ্গে তুলনা করে, যেমন রাবিয়ার বিখ্যাত কবিতাগুলো।

কোরআন শরীফের মধ্যেও যৌন বিষয় নিয়ে আয়াত রয়েছে – যেমন বাকারাতে বলা হয়েছে—

“তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র,
অতএব তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যেভাবে ইচ্ছা গমন করিতে পার।” (সূরা বাকারা ২:২২৩)

সাহীহ বোখারীতে এর ব্যাখ্যা পাওয়া যায়:

কিতাবুত তাফসীর, #৪১৬৮ – জাবের থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ ইয়াহুদিরা বলতো যে স্ত্রীর সঙ্গে পেছনের দিক থেকে সঙ্গম করলে সন্তান বক্রদৃষ্টি বা বিকলাঙ্গ হয়। তাই আল্লাহ্‌ তা’আলা এ ভ্রান্ত ধারণা অপনোদন করে এই আয়াত অবতীর্ণ করেন—তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের জন্য শস্যক্ষেত্র। তোমরা যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের কৃষি ভূমিতে যাও।

তেমনইভাবে কোরআন শরীফে জান্নাতবাসীদের জন্য রয়েছে “প্রবাল ও পদ্মরাগ রমণীগণ”(আর-রাহ্‌মান ৫৬-৫৯), “সমবয়স্কা পূর্ণযৌবনা তরুনী” (নাবা ৩১-৩৪) অর্থাৎ “তারা হবে উঁচু ও স্ফীত বক্ষের অধিকারিণী”। এই হুরগণ হচ্ছে “চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা” (সূরা ওয়াক্বিয়া ৩৫-৩৮) এর ব্যাখ্যা ইবনে কাসীরে পাওয়া যায়—

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “একজন জান্নাতীর বাহাত্তরটি করে স্ত্রী হবে, যারা হবে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট…জান্নাতী ব্যক্তি তাদের এক একজনের কাছে যাবে। প্রত্যেক এমন প্রাসাদে অবস্থান করবে যা হবে পদ্মরাগ নির্মিত। আর ঐ পালঙ্গের উপর থাকবে যা সোনার তার দিয়ে বানানো থাকবে এবং তাতে মণি-মুক্তা বসানো থাকবে…এই স্ত্রী এমন নমনীয়া ও উজ্জ্বল হবে যে, স্বামী তার কোমরে হাত রেখে বক্ষের দিকে তাকালে সবই দেখতে পাবে। … জান্নাতী স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শান্তিময় মিলনে মশগুল হয়ে পড়বে। স্বামী-স্ত্রী কেউই ক্লান্ত হবে না। কেউই কারো প্রতি বিরক্ত হবে না। স্বামী যখনই স্ত্রীকে কাছে করবে তখনই তাকে কুমারী পাবে। তার অঙ্গ অবসন্ন হবে না এবং তার কাছে কিছুই কঠিনও ঠেকবে না। সেখানে বিশেষ পানি (শুক্র) থাকবে না যাতে ঘৃণা আসে। তারা দু’জন এভাবে লিপ্ত থাকবে এমতাবস্থায় জান্নাতী ব্যক্তির কানে শব্দ আসবেঃ “এটা তো আমাদের খুব ভালই জানা আছে যে, আপনাদের কারো মনের আকাঙ্ক্ষা মিটবে না, কিন্তু আপনার অন্যান্য স্ত্রীরাও তো আছে?” তখন ঐ জান্নাতী ব্যক্তি বের হয়ে আসবে এবং এক একজনের কাছে যাবে। যার কাছে যাবে সেই তাকে দেখে বলে উঠবেঃ “আল্লাহ্‌র কসম! জান্নাত আমার জন্যে আপনার চেয়ে ভাল জিনিস আর কিছুই নেই। আপনার চেয়ে অধিক ভালবাসা আমার কারো প্রতি নেই।”

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সঃ)! জান্নাতে জান্নাতী লোক স্ত্রী সঙ্গমও করবে কি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যাঁ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে সেই আল্লাহ্‌র শপথ! সত্যি জান্নাতবাসী জান্নাতে স্ত্রী সঙ্গম করবে এবং খুব ভালভাবে উত্তম পন্থাতেই করবে। যখন তারা পৃথক হবে তখনই স্ত্রী এমনই পাক সাফ কুমারী হবে যাবে যে, তাকে যেন কেউ স্পর্শ করেনি।”

হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হবে বর্ণিত আছে যে, জিজ্ঞেস করা হয়ঃ “হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সঃ)! আমরা কি জান্নতে আমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হবো?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ্‌ (সঃ) বলেনঃ “প্রতিদিন একজন লোক একশজন কুমারীর সাথে মিলিত হবে।”

একই মাপকাঠি ব্যবহার করতে হবে – যদি হাদীসের এই সব বর্ণনা ইমানদারদের জন্য উপযুক্ত হয়, তাহলে সোলায়মান কিতাবও উপযুক্ত। আসলে ইতিহাস জুড়ে কিতাবুল মোকাদ্দস সমাজে শ্লীলতা ও পবিত্রতা রক্ষণ করার একটি বড় কারণ হয়েছে।

১. (মাওলানা জওহর অনুদিত জামে’ সহীহ্‌ আল বোখারী, ২য় খণ্ড, খান; বাংলাবাজার, ২০০৮, পৃষ্ঠা ১১৬)
২. সূরা নাবা ৭৮:৩৩ আয়াতের তফসীর (তাফসীর ইবনে কাসীর, অষ্টাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯)
৩. সূরা ওয়াকি’আহ্‌ ৫৬:৩৬ আয়াতের তফসীর (তাফসীর ইবনে কাসীর, অষ্টাদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৮)

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *