মথি ৯:১৮ – মেয়েটি মারা গেছে?

মথি ৯:১৮—“যায়ীর ঈসাকে কী বলেছিলেন – যে তার মেয়ে “এইমাত্র মারা গেছে” নাকি “মারা যাবার মত হয়েছে” (মার্ক ৫:২৩)?”

সম্ভবত যায়ীর উভয় কথাই বলেছিলেন— প্রথম “আমার মেয়ে মারা যাবার মত হয়েছে”, এবং এই কথা বলার পরপরই বাড়ী থেকে খবর আসল যে তার মেয়ে “এইমাত্র মারা গেছে”।

আবার হয়ত তিনি প্রথমে ঈসার কাছে স্বীকার করতে চাননি যে তার মেয়ে গারা গেলেন, যেন ঈসা চলে আসে। কিন্তু বলতে বলতে তিনি সাহস পেয়ে খুলাখুলিভাবে স্বীকার করলেন যে মেয়েটি মারা গিয়েছিলেন।

মথি ৪:১৮-২২ – গালীল সাগরের তীরে নাকি জর্দান নদীর কাছে?

মথি ৪:১৮-২২—“ঈসা মসীহের সঙ্গে পিতর ও আন্দ্রিয়ের প্রথম দেখা হয়েছে গালীল সাগরের তীরে নাকি জর্দান নদীর কাছে (ইউহোন্না ১:৪২-৪৩)?”

এই দুটি আয়াতে এমন কথা কোথাও স্পষ্টভাবে লেখা হয় নি যে এই সময় ছিল তাদের প্রথম সাক্ষাৎ। সম্ভবত ইউহোন্নাতে এদের প্রথম সাক্ষাতের ঘটনার কথা বলা হয়েছে, এবং মথিতে গালীল সাগরের কাছে দ্বিতীয় সাক্ষাতের কথা বলা হয়েছে। নাহলে তো এমনভাবে অপরিচিত ব্যক্তিকে ডাকা অদ্ভুত হত যদি তাদের আগে থেকে সম্পর্ক না থাকত। জর্দান নদীর কাছে ঈসা মসীহ্ আগেই তাঁর চরিত্র, কুদরতী কাজ ও শিক্ষা তাদের কাছে দেখিয়েছিলেন, যার কারণে তারা পরে গালীল প্রদেশে বিনাপ্রশ্নে ঈসার ডাকে সারা দিয়েছিলেন।

মথি ৪:৮ – পৃথিবী সমতল?

মথি ৪:৮—“এখানে বলা হয়েছে যে পৃথিবী সমতল, কিন্তু পৃথিবী গোলাকার।”

সমালোচক যদি ভালভাবে পড়লেন, তিনি লক্ষ্য করতেন যে এটা আসলে এক মুহূর্তের মধ্যে একটি অলৌকিক দর্শন, যেমন লূক ৪:৫ আয়াতে স্পষ্ট আছে: “এর পরে ইবলিস তাঁকে একটা উঁচু জায়গায় নিয়ে গেল এবং মুহূর্তের মধ্যে দুনিয়ার সব রাজ্যগুলো দেখালো…”। লূক এবং মথি অবশ্যই মনে করেননি যে রোম শহর একটি উঁচু পাহাড় থেকে দেখা যাবে—এরা বরং একটি অলৌকিক দর্শনের কথা বলেছিলেন। একই মাপকাঠিতে আমরা প্রশ্ন করতে পারি কেমন করে নবীজীর মি’রাজ হল, কেমন করে তিনি ‘বুরাক’ নামের এক স্বর্গীয় বাহন চড়ে জেরুজালেমে গেলেন। কোরআনেও কিছু আয়াত আছে যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে সমতল পৃথিবীর কথা বলে—

“এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে?

মথি ৩:১৩-১৪ – তার তরিকাবন্দীর আগে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ঈসার সাক্ষাৎ হয়েছিলে?

মথি ৩:১৩-১৪—“তার তরিকাবন্দীর আগে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ঈসার সাক্ষাৎ হয়েছিলে নাকি হয়নি (ইউহোন্না ১:৩৩)?”

ঈসার তরিকাবন্দী পর্যন্ত, ইয়াহিয়া ঈসাকে চিনতেন শুধু অন্য শহরের একজন দূর-সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে। তিনি হয়ত চিন্তা করতেন যে তিনি মসীহ্, কিন্তু পাক-রূহ্ যখন একটি কবুতরের মত হয়ে ঈসার উপর নেমে আসলেন তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন যে ঈসা সত্যিই আল্লাহ্‌র সেই ওয়াদাকৃত মসীহ্।

মথি ১:১৬ – মরিয়মের পিতা কি ইয়াকুব নাকি আলী?

মথি ১:১৬—“ঈসার মা মরিয়মের স্বামী ইউসুফের পিতা কি ইয়াকুব (মথি ১:১৬) নাকি আলী (লূক ৩:২৩)?

একটি সাধারণ ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মথিতে ঈসার আইনগত বংশতালিকা তার পিতা ইউসুফের মাধ্যমে, এবং লূকে ঈসার জন্মগত বংশতালিকা তার মা মরিয়মের মাধ্যমে আছে। তাহলে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, “তাহলে কেন লূকের বংশতালিকায় ‘মরিয়ম আলীর ছেলে’ লেখা হয়নি বরং লেখা আছে ‘ ইউসুফ আলীর ছেলে’?”।…

দানিয়েল ৪:১০-১১ – পৃথিবী সমতল?

দানিয়েল ৪:১০-১১—“এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী সমতল, কারণ গোলাকার পৃথিবী হলে কোন গাছে সব দিক থেকে দেখা যেত না।”

এখানে শুধু বর্ণনা করা হচ্ছে কীভাবে একজন পৌত্তলিক রাজা তার একটি অদ্ভুদ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। হয়ত বাদশাহ্ বখতে-নাসার মনে করতেন যে পৃথিবী সমতল— তাতে কিতাবুল মোকাদ্দসের কী সমস্যা হয়?…

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“একটি অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী?”

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“এখানে ভবিষদ্বানী করা হয়েছে যে বখতে-নাসার টায়ার ধ্বংস করবেন, কিন্তু শুধুমাত্র মহামতি আলেকজান্ডার টায়ার শহর ধ্বংস করেছেন।”

এই ভবিষ্যদ্বানীতে কোথাও বলা হয়নি যে শুধুমাত্র বখতে-নাসার টায়ারের ধ্বংস করবে, কিন্তু ঠিক তার বিপরীত কথা বলা হয়েছে। এই ভবিষ্যদ্বানীর শুরুতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌ টায়ার শহর ধ্বংস করবে “অনেক জাতি” দিয়ে (২৬:৩)। এটা থেকে বোঝা যায় যে পরবর্তী ভবিষ্যদ্বানী বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে হবে। আসলে যদি বখতে-নাসার একাই টায়ারের শহরের ধ্বংস করতেন, তাহলে ভবিষ্যদ্বানী ভুল হত।

প্রাচীন টায়ার শহরের আসলে দু’টি অংশ ছিল— একটি মূল ভূখণ্ডে ছিল, একটি এই মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপের উপরে। বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার টায়ারকে আক্রমন করলেন, এবং মূল ভূখণ্ডের শহরটা ধ্বংস করলেন, কিন্তু তিনি দ্বীপের অংশটা ধ্বংস করতে পারেননি। এইভাবে ৭-১১ আয়াত পূর্ণ হয়েছে। ইহিষ্কেল তো জানতেন যে বখতে-নাসার টায়ারকে পুরপুরিভাবে ধ্বংস করেননি, কারণ ২৯:১৮ আয়াতে তিনি তাই লিখেছিলেন। ইহিষ্কেল বিশ্বাস করতেন যে বাকী ভবিষ্যদ্বানী অন্য এক জাতির দ্বারা একদিন পূর্ণ হবে।

টায়ারের বিরুদ্ধে মহামতি আলেকজান্ডারের যুদ্ধের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় হেজকিলের ভবিষ্যদানী সুন্দর ভাবে পূর্ণ হয়েছে। জাতিরা মনে করত যে টায়ার ধ্বংস করা সম্ভব না। ইহিষ্কেল একটি অস্বাভাবিক কথা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে টায়ার ধ্বংস করার পর সেখানে ভাংগা পাথরও থাকবে না, এবং ধুলা-ময়লা চেঁছে ফেলে হবে (২৬:৪)। মহামতি আলেকজান্ডার টায়ারকে পরাজিত করলেন দ্বীপ ও ডাঙার মধ্যে একটি উঁচু রাস্তা বানানোর মধ্য দিয়ে। এই বাঁধ তৈরি করার জন্য তিনি ভবিষ্যদ্বানীর কথামত টায়ার শহরের সমস্ত ভাংগা পাথর সেখানে সরিয়ে ফেললেন। কত আশ্চর্য একটি ভবিষ্যদ্বানী!…

ইহিষ্কেল ২৩ – অশ্লীলতা?

ইহিষ্কেল ২৩—“কিতাবুল মোকাদ্দসে ‘অশ্লীলতা’ রয়েছে”

এই অধ্যায়ে আল্লাহ্‌র প্রতি ইসরাইল ও সামারীয়ের অবিশ্বস্ততা দু’টি বেশ্যার অবিশ্বস্ততার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। আল্লাহ্‌র চোখে তাদের মূর্তিপূজা এবং অবিশ্বস্ততা যে কত জঘন্য, ভয়ংকর ও নোংরা, সেটা এই তুলনার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ইসরাইল ও সামারীয়দের বোঝাতে চাচ্ছেন। তাদের লজ্জা জাগানোর জন্য তিনি সবচেয়ে জঘন্য পাপের সঙ্গে মূর্তিপূজা তুলনা করেছে। কোরআন শরীফে এমন তুলনা ব্যবহার করা হয়েছে। সূরা আল হুজরাত ৪৯:১২ আয়াতে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সঙ্গে নিন্দা তুলনা করা হয়েছে। জেনা ও বেশ্যাগিরি যত জঘন্য, আপন ভাইয়ের মাংস খাওয়া একই রকম জঘন্য। দু’টি গ্রন্থের তুলনার উদ্দেশ্য একই— অসাড়-বিবেক লোকদের বিবেকে ধাক্কা দেওয়া। হেজকিলের এই অধ্যায়ের শেষে এইসব কথা মূল উদ্দেশ্য পাওয়া যায়—

“তোমাদের কুকাজের ফল তোমাদেরই ভোগ করতে হবে
এবং মূর্তিপূজার গুনাহের ফল বহন করতে হবে।
তখন তোমরা জানবে যে, আমিই আল্লাহ্ মালিক।”
(ইহিষ্কেল ২৩:৪৯)

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০ – একটি অপূর্ণ বিষ্যদ্বানী?

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০—“এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে যে দাউদের সিংহাসনে বসবার জন্য যিহোয়াকীম কেউ থাকবে না, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৬ অনুযায়ী যিহোয়াকীমের মৃত্যুর পরে তার ছেলে যিহোয়াখীন তার জায়গায় বাদশাহ্‌ হলেন।”

এখানে কোন পরস্পর-বিরোধী কথা নাই, বরং মূল হিব্রু শব্দ “ইয়াশাব” ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০তে বলা হয়েছে যে যিহোযাকীমের পরে কেউ দাউদের সিংহাসনে “বসবে” (יושׁב “ইয়াশাব” ) না। এই ‘ইয়াশাব’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় “রয়ে যাওয়া”, “থাকা”, “বাস করা”, “প্রতিষ্ঠিত হওয়া”—অর্থাৎ স্থিতিশীল ভাবে সিংহাসনে বসা।

যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন কোনভাবেই সিংহাসনে “ইয়াশাব” করেনি—কারণ তার রাজত্বকালের মাত্র তৃতীয় মাসে বখতে-নাসারের বাহিনী জেরুজালেম দখল করলেন এবং যেহোয়াখীনকে নির্বাসনে পাঠানো হল। অর্থাৎ যিহোয়াকীমের বংশধরে যে সিংহাসনে থাকবে না সেই ভবিষ্যদ্বানী আসলে পূর্ণ হয়েছিল ।

কোরআন শরীফের মধ্যে সেরকম জটিল একটি ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে:

“রোমকগণ পরাজিত হইয়াছে—নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু উহারা উহাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হইবে” (সূরা রূম ৩০:২,৩)

প্রসিদ্ধ কোরআন অনুবাদক ইউসুফ আলীর কথা অনুযায়ী, আরবী শব্দ “শীঘ্রই” (بِضع বিধু’উন) এর অর্থ ৩ থেকে ৯ বছর; অথবা ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআনের টিকা #১৩৩০ অনুযায়ী ৩-১০ বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে “শীঘ্রই” বোঝাচ্ছে ৩ থেকে ৯ বছর (আল-বাইজাওয়ী)। পারস্য রাজ্য রোমীয়দের পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করেছেন ৬১৪ অথবা ৬১৫ সালে। কিন্তু বিখ্যাত ইসলামি ঐতিহাসিক আত-তাবারী এবং আল-বাইজাওয়ী অনুযায়ী পারস্যদের পরাজয় হল ১৩-১৪ বছর পরে (৬২৮ সালে)। মনে হচ্ছে ইয়ারমিয়ার উপরোক্ত জটিলতা থেকে এই জটিলতা কম না।

ইয়ারমিয়া ৮:৮ – তাওরাত শরীফ কি পরিবর্তন হয়েছিল।?

ইয়ারমিয়া ৮:৮—“এই আয়াত প্রমাণ করে যে তাওরাত শরীফ পরিবর্তন হয়েছিল।”

“তোমরা কেমন করে বল, ‘আমরা জ্ঞানী এবং মাবুদের শরীয়ত আমাদের কাছে আছে।’ আসলে আলেমেরা শরীয়ত ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে মিথ্যা কথা লিখেছে।”
(ইয়ারমিয়া ৮:৮)

এখানে মূসার শরীয়ত পরিবর্তন করার কথা বলা হয় নি বরং আলেমগণ শরীয়তের ব্যাখ্যা (তাফসীর) ভুলভাবে প্রচার করছে। ইয়ারমিয়া অবশ্যই শরীয়তের নির্ভরযোগ্যতা সন্দেহ করেনি, কারণ তিনি বলেছিলেন:

“তুমি তাদের এই কথা বলবে যে, মাবুদ বলছেন,
‘তোমরা এতদিন আমার কথা শোন নি এবং
তোমাদের সামনে আমি যে শরীয়ত রেখেছি তা পালন কর নি” (ইয়ারমিয়া ২৬:৪)

বনি-ইসরাইলদের কাছে হযরত ইয়ারমিয়ার মূল বাণী ছিল এই—“তোমরা মূসার শরীয়তের কাছে ফিরে আস”। তাদের শরীয়ত যদি বিকৃত ও পরিবর্তিত হত, তাহলে তিনি অবশ্যই সেটা পালন করতে বলেনি।

তাহলে কোন ধরণের ভুল ব্যাখ্যার কথা ৮:৮-এ বলা হচ্ছে?…