গীতসংহিতার লেখক

গীতসংহিতা পুস্তকটির লেখক কারা?দাউদ ও সলোমন এর লেখক এমন কোন ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে?

গীতসংহিতা পুস্তকের লেখক মূলত দাউদ (৭৬টি), আসফ (১২টি), কারুনের বংশের (১২টি), মূসা (১টি), ইষ্রাহীয় এথন (১টি), ইষ্রাহীয় হেমন (১টি), ও অন্যান্য নামহীন ৪৬টি। সোলায়মান জবুরের কিছু লিখেননি; তিনি মেসাল কিতাব লিখেছেন। ঐতিহাসিক প্রমাণ বলতে ডেড সি স্ক্রোলের আগে কেউ কেউ মনে করতো যে সেই লেখকের নামগুলো হয়তো আগে মূলে ছিল না, কিন্তু ডেড সি স্ক্রোলে প্রমাণ হলো যে জবুর শরিফের সেই নাম দিয়ে আখ্যায়িত ছিল প্রথম থেকেই। দাউদ যে সেই জবুর শরীফের বেশির ভাগ কাওয়ালী লিখেছে সেটা ঈসা মসীহ বলেছে, কোরআনও বলেছে, এবং এর বিপরীতে এরা কিছু বলেন নি, তাই আমরা যদি তাদের কথা বিশ্বাস করি তাহলে জবুর শরিফের সততাও বিশ্বাস করতে হয়।

বাইবেলে থাকার মাপকাঠি

সমালোচকের এই মতামত দিয়েছে:

Dead Sea Scroll যদি এতই “সহীহ” হয়, তাহলে ওখানে যেসব বই আছে, এর সবগুলো বাইবেলে নাই কেন? ওখানকার book of Enoch, book of Jubilees এগুলো এখনকার বাইবেলে নাই কেন?

এই লেখক সম্ভবত বুঝতে পারেন নি যে ডেড সি স্ক্রল একটি বই না বরং একটি গুহার মধ্যে বই (স্ক্রল) এর ভাণ্ডার। প্রাচীনকালে স্ক্রলের দৈর্ঘ্যের সীমাবদ্ধতার কারণে পুরো পুরাতন নিয়ম একটি স্ক্রলে লেখা যেতো না, বরং ~২০ আলাদা স্ক্রলে লেখা হতো। পিরাতন নিয়মের স্ক্রলের পাশাপাশি অবশ্য অন্য সাহিত্য ও ধর্মীয় লেখালেখি ছিল, তাতে সমস্যা কি?…

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“একটি অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী?”

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“এখানে ভবিষদ্বানী করা হয়েছে যে বখতে-নাসার টায়ার ধ্বংস করবেন, কিন্তু শুধুমাত্র মহামতি আলেকজান্ডার টায়ার শহর ধ্বংস করেছেন।”

এই ভবিষ্যদ্বানীতে কোথাও বলা হয়নি যে শুধুমাত্র বখতে-নাসার টায়ারের ধ্বংস করবে, কিন্তু ঠিক তার বিপরীত কথা বলা হয়েছে। এই ভবিষ্যদ্বানীর শুরুতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌ টায়ার শহর ধ্বংস করবে “অনেক জাতি” দিয়ে (২৬:৩)। এটা থেকে বোঝা যায় যে পরবর্তী ভবিষ্যদ্বানী বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে হবে। আসলে যদি বখতে-নাসার একাই টায়ারের শহরের ধ্বংস করতেন, তাহলে ভবিষ্যদ্বানী ভুল হত।

প্রাচীন টায়ার শহরের আসলে দু’টি অংশ ছিল— একটি মূল ভূখণ্ডে ছিল, একটি এই মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপের উপরে। বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার টায়ারকে আক্রমন করলেন, এবং মূল ভূখণ্ডের শহরটা ধ্বংস করলেন, কিন্তু তিনি দ্বীপের অংশটা ধ্বংস করতে পারেননি। এইভাবে ৭-১১ আয়াত পূর্ণ হয়েছে। ইহিষ্কেল তো জানতেন যে বখতে-নাসার টায়ারকে পুরপুরিভাবে ধ্বংস করেননি, কারণ ২৯:১৮ আয়াতে তিনি তাই লিখেছিলেন। ইহিষ্কেল বিশ্বাস করতেন যে বাকী ভবিষ্যদ্বানী অন্য এক জাতির দ্বারা একদিন পূর্ণ হবে।

টায়ারের বিরুদ্ধে মহামতি আলেকজান্ডারের যুদ্ধের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় হেজকিলের ভবিষ্যদানী সুন্দর ভাবে পূর্ণ হয়েছে। জাতিরা মনে করত যে টায়ার ধ্বংস করা সম্ভব না। ইহিষ্কেল একটি অস্বাভাবিক কথা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে টায়ার ধ্বংস করার পর সেখানে ভাংগা পাথরও থাকবে না, এবং ধুলা-ময়লা চেঁছে ফেলে হবে (২৬:৪)। মহামতি আলেকজান্ডার টায়ারকে পরাজিত করলেন দ্বীপ ও ডাঙার মধ্যে একটি উঁচু রাস্তা বানানোর মধ্য দিয়ে। এই বাঁধ তৈরি করার জন্য তিনি ভবিষ্যদ্বানীর কথামত টায়ার শহরের সমস্ত ভাংগা পাথর সেখানে সরিয়ে ফেললেন। কত আশ্চর্য একটি ভবিষ্যদ্বানী!…

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০ – একটি অপূর্ণ বিষ্যদ্বানী?

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০—“এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে যে দাউদের সিংহাসনে বসবার জন্য যিহোয়াকীম কেউ থাকবে না, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৬ অনুযায়ী যিহোয়াকীমের মৃত্যুর পরে তার ছেলে যিহোয়াখীন তার জায়গায় বাদশাহ্‌ হলেন।”

এখানে কোন পরস্পর-বিরোধী কথা নাই, বরং মূল হিব্রু শব্দ “ইয়াশাব” ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০তে বলা হয়েছে যে যিহোযাকীমের পরে কেউ দাউদের সিংহাসনে “বসবে” (יושׁב “ইয়াশাব” ) না। এই ‘ইয়াশাব’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় “রয়ে যাওয়া”, “থাকা”, “বাস করা”, “প্রতিষ্ঠিত হওয়া”—অর্থাৎ স্থিতিশীল ভাবে সিংহাসনে বসা।

যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন কোনভাবেই সিংহাসনে “ইয়াশাব” করেনি—কারণ তার রাজত্বকালের মাত্র তৃতীয় মাসে বখতে-নাসারের বাহিনী জেরুজালেম দখল করলেন এবং যেহোয়াখীনকে নির্বাসনে পাঠানো হল। অর্থাৎ যিহোয়াকীমের বংশধরে যে সিংহাসনে থাকবে না সেই ভবিষ্যদ্বানী আসলে পূর্ণ হয়েছিল ।

কোরআন শরীফের মধ্যে সেরকম জটিল একটি ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে:

“রোমকগণ পরাজিত হইয়াছে—নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু উহারা উহাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হইবে” (সূরা রূম ৩০:২,৩)

প্রসিদ্ধ কোরআন অনুবাদক ইউসুফ আলীর কথা অনুযায়ী, আরবী শব্দ “শীঘ্রই” (بِضع বিধু’উন) এর অর্থ ৩ থেকে ৯ বছর; অথবা ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআনের টিকা #১৩৩০ অনুযায়ী ৩-১০ বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে “শীঘ্রই” বোঝাচ্ছে ৩ থেকে ৯ বছর (আল-বাইজাওয়ী)। পারস্য রাজ্য রোমীয়দের পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করেছেন ৬১৪ অথবা ৬১৫ সালে। কিন্তু বিখ্যাত ইসলামি ঐতিহাসিক আত-তাবারী এবং আল-বাইজাওয়ী অনুযায়ী পারস্যদের পরাজয় হল ১৩-১৪ বছর পরে (৬২৮ সালে)। মনে হচ্ছে ইয়ারমিয়ার উপরোক্ত জটিলতা থেকে এই জটিলতা কম না।