কিতাবুল মোকাদ্দস পরিচয়

আরবী ভাষায় ‘আল-কিতাবুল মোকাদ্দস’ (الكتاب المقدس)-এর অর্থ “পবিত্র গ্রন্থ” যেমন ল্যাটিন ভাষা থেকে “বাইবেল” শব্দের অর্থ শুধু “গ্রন্থ”। কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে রয়েছে চারটা খণ্ড:

১. তৌরাত শরীফ (হিব্রু ভাষায়: תורה, আরবীতে: التوراة)
অথবা ‘তওরাহ্‌’ হযরত মূসা (আঃ)-এর কিতাব২. জবুর শরীফ (হিব্রু: תהילים, আরবী: الزبور)
অথবা ‘গীতসংহিতা’ হযরত দাউদ (আঃ) এর কিতাব৩. নবীদের কিতাব (হিব্রু: נביאים, আরবী: الأنبياء)
অথবা ইম্বিয়াত বিভিন্ন নবীদের কিতাব

৪. ইঞ্জিল শরীফ (গ্রীক: Καινὴ Διαθήκη, আরবী: الإنجيل)

 


তৌরাত শরীফ (হিব্রু: תורה, আরবী: التوراة)

সাড়ে তিন হাজার বছর আগে হযরত মূসার কাছে তৌরাত শরীফ অবতীর্ণ হয়েছিল। এই তৌরাত শরীফের মধ্যে আছে সৃষ্টির বর্ণনা এবং হযরত আদম থেকে হযরত ইউসুফ পর্যন্ত বিভিন্ন নবীদের কাজ ও ইতিহাসের বর্ণনা, যেমন হাবিল ও কাবিল, হযরত নূহ্ (আঃ), হযরত ইবরাহীম (আঃ), হযরত ইয়াকুব (আঃ), এবং হযরত ইউসুফ (আঃ)। তৌরাত শরীফ থেকে আমরা শিখি যে পৃথিবীর সর্বপ্রথম অবস্থা নিষ্পাপ এবং পবিত্র ছিল, কিন্তু শয়তানের প্রলোভনে পড়ে হযরত আদম প্রথম গুনাহ্‌ করেছিলেন।

 

 


জবুর শরীফ (হিব্রু: תהילים, আরবী: الزبور)

বনি-ইসরাইলদের বাদশাহ্‌ হযরত দাউদ (আঃ) পাক-রূহের অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন ভক্তিমূলক গজল লিখেছিলেন যেগুলো জবুর শরীফের মধ্যে পাওয়া যায়। এই কাওয়ালীগুলো হল আল্লাহ্‌র প্রতি তওবা, প্রশংসা এবং আরাধনার সুন্দর মোনাজাত। যেমন:

আমি সব সময় তোমার সংগেই আছি;
তুমিই আমার ডান হাত ধরে রেখেছ।
তোমার নির্দেশের মধ্য দিয়ে তুমি আমাকে চালাবে,
আর শেষে তোমার মহিমার মধ্যে আমাকে গ্রহণ করবে।
বেহেশতে তুমিই আমার সব;
তোমাকে পেয়ে দুনিয়াতেও আমার চাওয়ার আর কিছু নেই।
আমার শরীর ও মন ক্ষয় হয়ে যেতে পারে,
কিন্তু আল্লাহ্ আমার দিলের শক্তি
আর আমার চিরকালের সম্পত্তির ভাগ।
(জবুর শরীফ ৭৩:২৩-২৬)

জবুর শরীফে আবার দেখা যায় যে আমাদের ভাল কাজ বা নিজের ধার্মিকতার মাধ্যমে পাপ মোচন করা যায় না অর্থাৎ নাজাত অর্জন করা যায় না, বরং তা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র রহমতের মাধ্যমেই আসে:

“কারণ তোমার চোখে কোন প্রাণীই নির্দোষ নয়।” (১৪৩:২)

হে মাবুদ, তুমি যদি অন্যায়ের হিসাব রাখ,
তবে হে মালিক, কে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে?
কিন্তু তোমার কাছে মাফ আছে,
যেন লোকে তোমাকে ভয় করে। .” (১৩০:৩-৪)

“আমার অন্যায় কাজে আমি তলিয়ে আছি,
কিন্তু তুমিই আমাদের সব গুনাহ্ মাফ করে থাক।” (জবুর ৬৫:৩)

(এখানে ‘মাফ করা’র মূল হিব্রু শব্দ হল כּפר কফর , যার পূর্ণ অর্থ হচ্ছে একটি কাফ্ফারার মাধ্যমে পাপ মোচন করা)

“আমার অন্যায়ের মধ্যে আমি ডুবে গেছি;
তা এমন বোঝার মত হয়েছে যা আমি বইতে পারি না।” (জবুর ৩৮:৪)

“আমার অন্তর নীরবে কেবল আল্লাহ্‌র অপেক্ষা করছে,
কারণ তিনিই আমার উদ্ধারকর্তা।
কেবল তিনিই আমার উঁচু পাহাড় আর আমার উদ্ধার;
তিনিই আমার কেল্লা আমি সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হব না।” (জবুর ৬২:১,২)

“তুমি আমার গুনাহের দিকে চেয়ে দেখো না;
আমার সমস্ত অন্যায় তুমি মাফ কর।” (জবুর ৫১:৯)

 


নবীদের কিতাব (ভিব্রু: נביאים, আরবী: الأنبياء)

কিতাবুল মোকাদ্দসের এই অংশে বিভিন্ন নবীদের কিতাব এবং বাণী পাওয়া যায়, যেমন নবী ইউনুস (আঃ), নবী ইশাইয়া (আঃ), এবং নবী জাকারিয়া (আঃ)। এই সব নবীগুলো বনি-ইসরাইলের কাছে এসে অবাধ্যতার শাস্তি ঘোষণা করেছিলেন এবং বনি-ইসরাইলীয়দের তওবা করতে অনুরোধ করলেন। তা ছাড়া তাঁরা একজন “মসীহ্‌”-এর ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন, যিনি নাজাতের পূর্ণতা নিয়ে আসবেন এবং কষ্টভোগ করে আল্লাহ্‌র রহমত প্রকাশ করবেন। এই মসীহের জীবন এবং কাজের বিভিন্ন বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, যেমন ইশাইয়া ৫৩ অধ্যায়ে:

“আমাদের গুনাহের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে;
আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে।
যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে
সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে;
তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি।
আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি;
আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি।
মাবুদ আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন।
তিনি অত্যাচারিত হলেন ও কষ্ট ভোগ করলেন,
কিন্তু তবুও তিনি মুখ খুললেন না;
জবাই করতে নেওয়া ভেড়ার বাচ্চার মত,
লোম ছোঁটাইকারীদের সামনে চুপ করে থাকা ভেড়ীর মত
তিনি মুখ খুললেন না।

তিনি নিজের ইচ্ছায় প্রাণ দিয়েছিলেন।
তাঁকে গুনাহ্‌গারদের সংগে গোণা হয়েছিল;
তিনি অনেকের গুনাহ্ বহন করেছিলেন
আর গুনাহ্‌গারদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।”
(ঈশাইয়া ৫৩:৫-৭,১২)

মসীহ্‌ সম্পর্কে নবীদের কিতাবের অন্যান্য ভভিষদ্বানী এখানে দেখুন


ইঞ্জিল শরীফ (গ্রীক: Καινὴ Διαθήκη, আরবী: الإنجيل)

তারপর কিতাবুল মোকাদ্দসের শেষ খণ্ড ইঞ্জিল শরীফে ঈসা মসীহ্‌র কাজ এবং শিক্ষা পাওয়া যায়। হযরত ঈসা তৌরাত এবং জবুর বাতিল করতে আসেনি বরং পূর্ণ করতে এসেছিলেন এবং আল্লাহ্‌র রহমতের ব্যবস্থা প্রকাশ করতে এসেছিলেন। ইঞ্জিল শরীফ এবং ঈসা মসীহ্‌র বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পড়ুন:

মসীহ্‌ সমস্ত মানব জাতির জন্য নাকি শুধুমাত্র ইহুদীদের জন্যই?
নাজাতের বিষয়ে মসীহের শিক্ষা
হযরত ঈসা মসীহের পরিচয়
কোরআন শরীফে হযরত ঈসা মসীহের নাম

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *