মসীহের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বানী

আসুন আমরা হযরত মুহাম্মদের সম্পর্কে এইসব অসম্ভাব্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলো, মসীহের সম্পর্কে তৌরাত, জবুর, এবং নবীদের কিতাবে পাওয়া কয়েকটি অকাট্য পরিষ্কার ভবিষ্যদ্বানীর সংঙ্গে তুলনা করি। আমরা প্রথমে ইশাইয়া কিতাবের ৫৩ অধ্যায়ের সেই বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে শুরু করবো। যারা ঈসা নবীর জীবনীর সঙ্গে সুপরিচিত, তাদের কাছে মসীহের বিষয়ে শত শত বছর আগে লেখা এই বর্ণনা কীভাবে হুবহু তার জীবনের সাথে মিলে যায় তা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য লাগে:

আমাদের দেওয়া খবরে কে বিশ্বাস করেছে?
কার কাছেই বা মাবুদের শক্তিশালী হাত প্রকাশিত হয়েছেন?

তিনি তাঁর সামনে নরম চারার মত,
শুকনা মাটিতে লাগানো গাছের মত বড় হলেন।
তাঁর এমন সৌন্দর্য বা জাঁকজমক নেই যে,
তাঁর দিকে আমরা ফিরে তাকাই;
তাঁর চেহারাও এমন নয় যে, আমাদের আকর্ষণ করতে পারে।

লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে ও অগ্রাহ্য করেছে;
তিনি যন্ত্রণা ভোগ করেছেন এবং রোগের সংগে তাঁর পরিচয় ছিল।
লোকে যাকে দেখলে মুখ ফিরায় তিনি তার মত হয়েছেন;
লোকে তাঁকে ঘৃণা করেছে এবং আমরা তাঁকে সম্মান করি নি।

সত্যি, তিনিই আমাদের সব রোগ তুলে নিয়েছেন
আর আমাদের যন্ত্রণা বহন করেছেন;
কিন্তু আমরা ভেবেছি আল্লাহ্ তাঁকে আঘাত করেছেন,
তাঁকে মেরেছেন ও কষ্ট দিয়েছেন।

আমাদের গুনাহের জন্যই তাঁকে বিদ্ধ করা হয়েছে;
আমাদের অন্যায়ের জন্য তাঁকে চুরমার করা হয়েছে।
যে শাস্তির ফলে আমাদের শান্তি এসেছে
সেই শাস্তি তাঁকেই দেওয়া হয়েছে;
তিনি যে আঘাত পেয়েছেন তার দ্বারাই আমরা সুস্থ হয়েছি।

আমরা সবাই ভেড়ার মত করে বিপথে গিয়েছি;
আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের পথের দিকে ফিরেছি।
মাবুদ আমাদের সকলের অন্যায় তাঁর উপর চাপিয়েছেন।

তিনি অত্যাচারিত হলেন ও কষ্ট ভোগ করলেন,
কিন্তু তবুও তিনি মুখ খুললেন না;
জবাই করতে নেওয়া ভেড়ার বাচ্চার মত,
লোম ছাঁটাইকারীদের সামনে চুপ করে থাকা ভেড়ীর মত
তিনি মুখ খুললেন না।

জুলুম ও অন্যায় বিচার করে তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।
সেই সময়কার লোকদের মধ্যে কে খেয়াল করেছিল যে,
আমার লোকদের গুনাহের জন্য তাঁকে জীবিতদের দেশ থেকে
শেষ করে ফেলা হয়েছে?
সেই শাস্তি তো তাদেরই পাওনা ছিল।

যদিও তিনি কোন অনিষ্ট করেন নি
কিংবা তাঁর মুখে কোন ছলনার কথা ছিল না,
তবুও দুষ্টদের সংগে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল
আর মৃত্যুর দ্বারা তিনি ধনীর সংগী হয়েছিলেন।

১০আসলে মাবুদ তাঁর ইচ্ছা অনুসারে তাঁকে চুরমার করেছিলেন
আর তাঁকে কষ্ট ভোগ করিয়েছিলেন।
মাবুদের গোলাম যখন তাঁর প্রাণকে দোষের কোরবানী হিসাবে দেবেন
তখন তিনি তাঁর সন্তানদের দেখতে পাবেন
আর তাঁর আয়ু বাড়ানো হবে;
তাঁর দ্বারাই মাবুদের ইচ্ছা পূর্ণ হবে।

১১তিনি তাঁর কষ্টভোগের ফল দেখে তৃপ্ত হবেন;
মাবুদ বলছেন, আমার ন্যায়বান গোলামকে গভীরভাবে জানবার মধ্য দিয়ে
অনেককে ধার্মিক বলে গ্রহণ করা হবে,
কারণ তিনি তাদের সব অন্যায় বহন করবেন।

১২সেইজন্য মহৎ লোকদের মধ্যে আমি তাঁকে একটা অংশ দেব
আর তিনি বলবানদের সংগে বিজয়ের ফল ভাগ করবেন,
কারণ তিনি নিজের ইচ্ছায় প্রাণ দিয়েছিলেন।
তাঁকে গুনাহ্‌গারদের সংগে গোণা হয়েছিল;
তিনি অনেকের গুনাহ্ বহন করেছিলেন
আর গুনাহ্‌গারদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

(ইশাইয়া ৫৩:১-১২)

১৯৪৭ সালে গোটা ইশাইয়া নবীর কিতাবের একটা পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে যা ঈসা নবীর জন্মের ১০০ বছর আগে লিখিত, এবং সেটার মধ্যে এই অধ্যায় অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।

নিচে এই মসীহ্‌ সম্পর্কে আরও কিছু ভবিষ্যদ্বানী তুলে ধরা হলো যার বেশিরভাগই তার কষ্টভোগ, বিচার, ও মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়েছে। মসীহ্‌ সম্পর্কে এই ভবিষ্যদ্বানীগুলো তার জন্মের ১০০০ থেকে ৪০০ বছর আগে সেই সব নবীরা লিখে গেছেন যারা ইবরাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুব নবীদের বংশধর। নিম্নে প্রথমে ভবিষ্যদ্বাণীসহ তাদের ঠিকানা এবং সেগুলোর পূর্ণতার বিবরণসহ ইঞ্জিল শরীফে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে:

হযরত দাউদের বংশে আসবেন

(২ শামুয়েল ৭:১২-১৪ এবং জাকারিয়া ১২:১০; ইঞ্জিলে দেখুন লূক ৩:৩১)

তাঁর জন্ম হবে বেথেলহেম গ্রামে
(মিকাহ্‌ ৫:২; ইঞ্জিল দেখুন লূক ২:৪-৭)

কুমারী মেয়ের গর্ভে তাঁর জন্ম হবে
(ইশাইয়া ৭:১৪; ইঞ্জিলে দেখুন লূক ১:১৩-৩৮)

সমস্ত জাতির জন্যে নাজাত আনবে
(ইশাইয়া ৪৯:৬; ইঞ্জিলে দেখুন লূক ২:৩০-৩২, ইউহোন্না ৩:১৬)

গাধার বাচ্চার পিঠে জেরুজালেমে প্রবেশ
(জাকারিয়া ৯:৯; ইঞ্জিলে দেখুন লূক ১৯:২৮-৩৬)

ত্রিশটা রূপার টুকরা (সোনা নয়) দিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হল
(জাকারিয়া ১১:১২খ; দেখুন ইঞ্জিলে মথি ২৬:১৫)

ত্রিশটা রূপার টুকরা মাবুদের ঘরে “ফেলে” দেওয়া হল
(জাকারিয়া ১১:১৩খ; দেখুন ইঞ্জিলে মথি ২৭:৫)

সেই রূপা কুমারের কাছে দেওয়া হল
(জাকারিয়া ১১:১৩; দেখুন ইঞ্জিলে মথি ২৭:৭)

তাঁর মৃত্যুর সময়ে তাঁর অনুসারীগণ পালিয়ে গেল
(জাকারিয়া ১৩:৭; ইঞ্জিলে দেখুন মার্ক ১৪:৫০ এবং মথি ২৬:৩১)

নালিশকারীদের সামনে তিনি চুপ থাকবেন
(ইশাইয়া ৫৩:৭, দেখুন মথি ২৭:১২-১৯)

তিনি নিজের ইচ্ছায় প্রাণ দিয়েছিলেন
(ইশাইয়া ৫৩:১২; দেখুন ইঞ্জিলে ইউহোন্না ১০:১৮)

আমাদের গুনাহের জন্য তাঁকে বিদ্ধ ও চুরমার করা হবে
(ইশাইয়া ৫৩:৫, ইঞ্জিলে দেখুন মথি ২৭:২৬)

তাঁকে অপমান করা হবে ও তাঁর উপর থুথু ফেলা হবে
(ইশাইয়া ৫০:৬; দেখুন ইঞ্জিলে মথি ২৬:৬৭)

গুনাহ্‌গারদের সংগে তিনি মারা যান
(ইশাইয়া ৫৩:১২; দেখুন ইঞ্জিলে মথি ২৭:৩৮)

তিনি গুনাহ্‌গারদের জন্য অনুরোধ করেছিলেন
(ইশাইয়া ৫৩:১২; দেখুন ইঞ্জিলে লূক ২৩:৩৪)

ধনী লোকের কবরে তাঁকে দাফন করা হবে
(ইশাইয়া ৫৩:৯; দেখুন মথি ২৯:৫৭-৬০)

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *