মথি ২৩:৯ – পিতার প্রতি অসম্মান?

মথি ২৩:৯—“এখানে ঈসা কি নিজের পিতাকে “পিতা” বলতে নিষেধ করছেন?”

এই আয়াত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে হলে প্রসঙ্গ ভালভাবে বুঝতে হবে। ঈসা মসীহ্ এই পুরো অনুচ্ছেদে ইহুদী আলেম ও ফরীশীদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, পারিবারিক সম্পর্কের কথা এখানে বলা হচ্ছে না। এখানে ঈসা ফরীশীদের বিভিন্ন অনুপযুক্ত গুরু-শিষ্য উপাধি মানা করেছিলেন। লম্বা লম্বা নাম দিয়ে ইহুদী ধর্মিয় নেতারা দুনিয়াবী সম্মান পেতে পছন্দ করতেন (আজকাল ইসলামী সমাজে একই রকম দুনিয়াবী সম্মানের ভালবাসা দেখা যায় – “মাহ্বুব-ই-খোদা আল-হজ্জ মাওলানা সূফী-সাধক হযরত…” ইত্যাদি ইত্যাদি)। তখনকার ইহুদী ফরীশীগণ “রাব্বী” (শিক্ষক) এবং “উস্তাদ” উপাধিগুলো ভালবাসতেন এবং তার সঙ্গে নিজেকে বানাতেন তাদের শিষ্যদের “পিতা”। এভাবে অন্য মানুষের কাছে আত্মসমর্পন করার বিরুদ্ধে ঈসা মসীহ্ নিজের অভ্যাস মত hyperbole ব্যবহার করেছিলেন। ঈসা মসীহ্ তার শ্রোতাদের সতর্ক করেছিলেন যে রূহানিক বিষয়ে কোন একজন সীমিত মানুষকে নিজের একমাত্র “উস্তাদ” বা “পিতা” বানানো উচিত না। ঈসা মসীহ্ বলেছিলেন যে ধর্মীয় নেতাদের কথা সবসময় বিনা প্রশ্নে মানা উচিত না বরং নিজেই কিতাব খুলে গবেষণা করা উচিত।

ধর্মীয় নেতার ক্ষেত্রে “পিতা” বললে তার কর্তৃত্ব অতিরিক্ত হয়ে যায়, কারণ ছোটবেলায় যেমন পিতার কথা বিনা প্রশ্নে মানতে হয়, তেমনভাবে ধর্মীয় নেতাদের কথা বিনা প্রশ্নে মানা উচিত নয়। এই পুরো অধ্যায়ের আলোকে বোঝা যায় যে এটাই হল ঈসার কথার সঠিক ব্যাখ্যা।

আইয়ুব ৪১:১ – রূপকথার কাল্পনিক জীব?

আইয়ুব ৪১:১—“এখানে একটি রূপকথার কাল্পনিক জীবের বর্ণনা কেমন করে থাকতে পারে?”

কিতাবুল মোকাদ্দসে মাঝে মাঝে শয়তানকে তুলনা করা হয় বিভিন্ন রূপকথার জন্তুর সঙ্গে যেমন ‘দানব’ (প্রকাশিত কালাম ১২:৯) বা “লিবিয়াথন” (ইশাইয়া ২৭:১)। এমন আয়াতে বলা হয় না যে সেসব জন্তু বাস্তব, বরং সেগুলোতে শুধু শয়তানের খারাপ বৈশিষ্ট্য কিছু পরিচিত ভয়ংকর জন্তুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। আইয়ুব কিতাবে এইসব আয়াত হয়ত এমন করা হচ্ছে, আল্লাহ্‌র সর্বশক্তিমান ক্ষমতা কাল্পনিক জন্তুর সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

আইয়ুব ৪০:১৫-২৪ আয়াতের “বেহেমোৎ” নিঃসন্দেহে এক রকম বড় বুনো ষাঁড় বা জলহস্তী। অধিকাংশ ব্যাখ্যাকারী মনে করেন যে আইয়ুব ৪১:১-৩৪ আয়াতের “লিবিয়াথন” হচ্ছে একটি বড় কুমির। আবার হয়ত বোঝানো হচ্ছে একটি প্রাচীন লুপ্ত প্রাণী। কিছুদিন আগে বৈজ্ঞানীকেরা একটি প্রাচীন ৪৩-ফুট লম্বা ও ১০০০-কিলোগ্রাম ওজনের সাপের হাড় খুঁজে পেয়েছে, যে কুমির খেত এবং ডাইনোসরদের অনেক পরে লুপ্ত হয়েছিল। আইয়ুব কিতাবে এই প্রাণীদের প্রাচীনত্ব উল্লেখ হয়েছে ৪০:১৯ আয়াতে: “আল্লাহ্‌র সৃষ্টির মধ্যে তার স্থান প্রধান”।

কোরআন শরীফে আমরা পড়ি যে হযরত সোলায়মান একটি ‘ইফ্রিত’-এর সঙ্গে কথা বলছিলেন (সূরা নাম্‌ল ২৭:১৫-৪৪)। বিখ্যাত কোরআন অনুবাদক মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ বলেন যে ‘ইফ্রিত’ হচ্ছে “একটি মন্দ শয়তান যেটা বিভিন্ন রূপকথায় পাওয়া যায়”। Encyclopedia Britannica এর সজ্ঞা অনুযায়ী, ‘ইফ্রিত’ হচ্ছে ধোঁয়ার তৈরী একটি বড় পাখাওয়ালা জন্তু যারা মাটির নিচে বাস করে। আবার মি’রাজে নবীজী ‘আল-বুরাক’ নামে একটি সাদা পাখাওয়ালা অশ্ব চড়েছিলেন। এই দুই জন্তুর অস্তিত্ব নিয়ে কোন সমস্যা না থাকলে কিতাবুল মোকাদ্দসের বুনো ষাঁড়ের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৮ – যেহোয়াখীন কত দিন রাজত্ব করেছিলেন?

২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৮—“যেহোয়াখীন জেরুজালেমের তিন মাস রাজত্ব করলেন (২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৮) নাকি ৩ মাস ১০ দিন (২ খান্দাননামা ৩৬:৯)?”

খান্দাননামায় মাস ও দিনের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা দেয়া হয়েছে, বাদশাহ্‌নামায় কেবল মাসের সংখ্যা দেয়া হয়েছে। দিনের সুনির্দিষ্ট সংখ্যা বাদ দিলে কী সমস্যা? সময়ের হিসাব করলে সবসময় কাছাকাছি সংখ্যা দিতে হয়, নাহলে আমরা কি দাবী করবো যেন সবসময় মাস, দিন, ঘন্টা, মিনিট এমনকি সেকেন্ডের সুনির্দিষ্ট দিতে হয়?…

১ বাদশাহ্‌নামা ৭:২৬ – সোলায়মানের পাত্রে কত লিটার পানি ধরত?

১ বাদশাহ্‌নামা ৭:২৬—“সোলায়মানের পাত্রে চুয়াল্লিশ হাজার লিটার পানি ধরত নাকি ২ খান্দাননামা ৪:৫ এর কথামত ছেষট্টি হাজার লিটার ধরত?”

১ বাদশাহ্‌নামাতে বলা হয়েছে যে পাত্রের মধ্যে সাধারণত চুয়াল্লিশ হাজার লিটার পানি “রাখা হত” (হিব্রু כּוּל ‘কুল’ ), কিন্তু ২ খান্দাননামাতে বলা হয়েছে যে সর্বোচ্চ ছেষট্টি হাজার লিটার “রাখা যেত” (হিব্রু חָזַק হাজাক্‌ )। সমস্যাটা শুধু অনুবাদে রয়েছে—মূল ভাষায় গেলে কোন সমস্যা নাই।

২ শামুয়েল ২৪:৯ – বাহিনীর মোট সংখ্যা কত?

২ শামুয়েল ২৪:৯—(প্রথম প্রশ্ন) “এখানে বলা হয়েছে ইসরাইলের বাহিনীর মোট সংখ্যা আট লক্ষ এবং এহুদার ৫ লক্ষ, কিন্তু ১ খান্দাননামা ২১:৫,৬ আয়াত অনুযায়ী ইসরাইলীয় বাহিনীর সংখ্যা ছিল ১১ লক্ষ এবং এহুদার ৪.৭ লক্ষ।”

২ শামুয়েলে অনুযায়ী “তলোয়ার চালাতে পারে এমন ‘বলবান লোক’ (হিব্রু אִישׁ חַיִל ঈয়শ হায়ীল )” তাদের সংখ্যা আট লক্ষ, কিন্তু সেই হিসাবের মধ্যে ১ খান্দাননামা ২৭:১-১৫ আয়াতে বর্ণিত ২৮৮ হাজারের স্থায়ী সৈন্যবাহিনী ছিল না, এবং ২ খান্দাননামা ১:১৪ আয়াতে বর্ণিত ১২ হাজার সৈন্যের জেরুজালেম শহরের বিশেষ সৈন্যদল ছিল না। এগুলো যোগ করলে আমরা ১১ লক্ষ পাই, হুবহু সেই ২১ খান্দাননামা ২১:৫ আয়াতের সংখ্যা!…

২ শামুয়েল ২১:৮ – মীখলের কয়টা সন্তান?

২ শামুয়েল ২১:৮—“মীখলের পাঁচটা সন্তান ছিল নাকি এর কোন সন্তানই ছিল না (২ শামুয়েল ৬:২৩)?”

দুটি প্রাচীন হিব্রু পাণ্ডুলিপিতে, সিরিয় অনুবাদে এবং কিছু কিছু সেপ্টুয়াজিন্ট পাণ্ডুলিপিতে আছে ‘মেরব’; অন্য পাণ্ডুলিপিতে আছে ‘মীখল’। নিশ্চিয় সঠিক মূল পাঠ হচ্ছে ‘মেরব’, এবং কিছু কিছু পাণ্ডুলিপিতে লিপিকরের একটি ভুল হয়েছে। ১ শামুয়েল ১৮:১৯ আয়াত এই পাঠ সমর্থন করেন, কারণ পরে অদ্রীয়েল দাউদের স্ত্রী মেরবকে বিয়ে করেছিলেন।

মাখা কার মেয়ে?

২ শামুয়েল ১৩:২৭—“বাদশাহ্‌ অবিয়ের মা কে ছিল—গিবিয়ার উরীয়েলের মেয়ে মাখা (২ খান্দাননামা ১৩:২) নাকি অবশালোমের মেয়ে মাখা (২ খান্দাননামা ১১:২০ ও ২ শামুয়েল ১৩:২৭)?”

নিচে বংশতালিকা দেওয়া আছে:

        অবশালোম/অবিশালোম
|
তামর ——— উরীয়েল
|
মাখা/মিখাইয়া ——— রহবিয়াম
|
অবিয়

 


হিব্রুতে “মেয়ে” (בַּת বাথ্‌ ) শব্দটা “নাতিনী” হিসেবেও ব্যবহার করা হয় (উদাহরণস্বরূপ ২ শামুয়েল ১:২৪ এবং পয়দায়েশ ৪৬:১৫ দেখুন)। তাই অবিয়ের মা উরীয়েলের মেয়ে এবং অবশালোমের নাতিনী। মিখাইয়া হচ্ছে মিখার একটি ভিন্ন উচ্চারণ, হিব্রু নামের ক্ষেত্রে যেমন করে প্রায়ই হয়।

লুতের জঘন্য কাজ

পয়দায়েশ ১৯:৩০-৩৮—“তওরাত শরীফ কেমন করে বলতে পারে যে হযরত লুত (আঃ) তার আপন মেয়েদের সঙ্গে সহবাস করলেন? সেটা অপমানজনক এবং লজ্জাজনক”

এটা অবশ্যই একটি জঘন্য অত্যন্ত খারাপ ঘটনার ইতিহাস। আমরা যখন এই অধ্যায় পড়ি আমাদের কাছে এগুলো অবিস্বাস্য এবং বিশ্রী লাগে, কিন্তু তাও আসল বিষয়টা ভালভাবে বুঝে নেয়া প্রয়োজন।

প্রথম প্রশ্ন হল, লুত কতটুকু দায়ী ছিল?…

কোরআন অনুযায়ী কি খ্রীষ্টানদের কিতাব পরিবর্তন হয়েছিল?

“কোরআন বলে যে ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের কিতাব পরিবর্তন করা হয়েছে”

value=”http://www.youtube.com/v/Geu_Qq-N2iQ&hl=id_ID&fs=1?version=3&autohide=1&rel=0″ > type=”application/x-shockwave-flash”wmode=”transparent”allowscriptaccess=”always”width=”100%”>

বেশ কয়েক জায়গায় কোরআন শরীফে ইহুদীদের (খ্রীষ্টানদেরকে নয়) সমালোচনা করা হয়েছে যে তারা কিতাব থেকে উদ্ধৃতি দেওয়ার সময় শব্দ বিকৃত করে (حُيَرِّفُونَهُ -২:৭৫), গোপন করে (৬:৬১, ২:১৪০), পড়ার সময় তাদের জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে (يَلْؤنَ السِنَتَهُم -৩:৭৮) এবং এমনকি তেলাওয়াত করার সময়ে এরা শব্দগুলি সঠিক স্থান থেকে পরিবর্তন করে বলে (حُيَرِّفُونَ الكَلِمَ عَنْ مَوَاضِعِهِ – ৫:১২-১৪)। উদাহরণস্বরূপ:

আর নিশ্চয় তাহাদের মধ্যে একদল লোক আছেই যাহারা কিতাবকে জিহ্বা দ্বারা বিকৃত করে যাহাতে তোমরা উহাকে আল্লাহ্‌র কিতাবের অংশ মনে কর, কিন্তু উহা কিতাবের অংশ নহে, এবং তাহারা বলে,‘উহা আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে’ ; কিন্তু উহা আল্লাহ্‌র পক্ষ হইতে নহে। (আলে-‘ইমরান ৩:৭৮)

কোরআন কিন্তু একবারের জন্যও বলে না যে, কিতাবের লিখিত কোন অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে, বা আসল কিতাবগুলি আজকের কিতাবগুলি থেকে ভিন্ন। এর বদলে, ইহুদী ও খ্রীষ্টান কিতাবগুলি সম্বন্ধে কোরআনে অনেক ভাল কথা বলা হয়েছে:

“ইঞ্জিল অনুসারীগণ যেন আল্লাহ্‌ উহাতে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ্‌ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না , তাহারাই ফাসিক।” (সূরা মায়িদা ৫:৪৭)

“বল, হে কিতাবধারীগণ!…

তওরাত ও ইঞ্জিল কি হারিয়ে গেছে?

“মুহাম্মদের আগেই তৌরাত ও ইঞ্জিল হারিয়ে গেছে”


কোরআন শরীফ স্পষ্টভাবে বলে যে, মুহাম্মদের সময়ে (৬১০-৬৩২ খ্রীষ্টাব্দ) আসল তৌরাত ইহুদীদের কাছে ছিল, আক্ষরিকভাবে তাদের হস্তের মধ্যে (بَيْنَ يَدَيْهِ, বাইন ইয়াদাইহি) (সূরা আলে-‘ইমরান ৩ আয়াত)। সূরা আল-আ’রাফে বলা হয়েছে যে, তৌরাত ও ইঞ্জিল “ তাদের কাছে আছে ” (৭:১৫৭)।

ইঞ্জিল অনুসারীগণ যেন আল্লাহ্‌ উহাতে যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে বিধান দেয়। আল্লাহ্‌ যাহা অবতীর্ণ করিয়াছেন তদনুসারে যাহারা বিধান দেয় না , তাহারাই ফাসিক। (সূরা মায়িদা ৫:৪৭)

কোরআনে যাদেরকে ইঞ্জিল অনুসারী বলা হয়েছে তাদের কাছে যদি ইঞ্জিল না থাকতো তবে তারা কিভাবে ইঞ্জিল দ্বারা বিচার করতে পারতো?…