২ শামুয়েল ২৪:১ – আল্লাহ্‌ নাকি শয়তান?

২ শামুয়েল ২৪:১—“একটি আদমশুমারী করতে কে হযরত দাউদকে উত্তেজিত করে তুলেছেন?”

দুটাই ঠিক—আল্লাহ্‌র অনুমতিতে শয়তান দাউদকে উত্তেজিত করে তুলেছিলেন। একটি খুনের ক্ষেত্রে যেমন বলা যায় বন্দুকের গুলিও হত্যা করেছে, আবার হত্যাকারীও হত্যা করেছে, তেমনই এই ক্ষেত্রে বলা যায় শয়তানও দাউদকে করিয়েছে, আবার আল্লাহ্‌ দাউদকে করিয়েছে।

এই ক্ষেত্রে মাবুদ দেখেছিলেন যে হযরত দাউদ শক্তিশালী বাদশাহ্‌ হয়ে অতিরিক্ত গর্বিত হয়ে গিয়েছিল, এবং আল্লাহ্‌র উপর নির্ভর না করে তিনি তার বাহিনীর উপরে বিশ্বাস রাখছিল। শয়তান ভাবছিলেন যে এই অবস্থা একটি আদমশুমারী করার জন্য দাউদকে উত্তেজিত করে তুললে, দাউদের সর্বনাশ হবে। কিন্তু আল্লাহ্‌র সর্বজ্ঞ ক্ষমতায় তিনি জানতেন যে এর মাধ্যমে দাউদ তওবা করে আল্লাহ্‌র কাছে আবার ফিরে আসবেন, অর্থাৎ সর্বশেষে এই আদমশুমারীর মাধ্যমে দাউদের মঙ্গল হবে। সেইজন্য দাউদকে প্রভাবিত করার জন্য আল্লাহ্‌ শয়তানকে অনুমতি দিয়েছিলেন। হযরত আইয়ুবের ক্ষেত্রেও একই জিনিস দেখা যায়; শয়তান ভাবছিলেন যে আইয়ুবের ক্ষতি করলে অবশ্যই আইয়ুব আল্লাহ্‌কে অভিশাপ করবে, তখন আইয়ুবকে আঘাত করার জন্য আল্লাহ্‌ শয়তানকে অনুমতি দিয়েছেন কারণ আল্লাহ্‌ জানতেন হযরত আইয়ুবের বিশ্বস্ততা টিকে থাকবে। উভয় ক্ষেত্রে, শয়তানের পরিকল্পনা ছিল সীমিত, কিন্তু আল্লাহ্‌ শয়তানের সীমিত পরিকল্পনা তার নিজের মহা বিজয়ের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। শয়তান যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম।” (সূরা আল আনফাল ৮:৩০)

কোরআন শরীফে আমরা একই ধরণের জটিলতা পাই। কিছু কিছু আয়াতে বলা হয়েছে যে পৌত্তলিকরা যে ফেরেশতাদের সেজদা করত (৩:৮০) সেই ফেরেশতাদের কারো প্রাণ নেওয়ার ক্ষমতা নাই (ফুরকান ২৫:৩), আবার অন্যান্য কিছু আয়াতে বলা হয়েছে যে মানুষদের প্রাণ হরণ করার ক্ষমতা ফেরেশতাদের ছিল (আন-নিসা ৪:৯৭, ১৬:২৮)। এই ক্ষেত্রেও অবশ্যই আল্লাহ্‌ তার হাতিয়ার হিসেবে সেই ফেরেশতাদের ব্যবহার করেছেন।

২ শামুয়েল ২৩:৮ – ৮০০ নাকি ৩০০?

২ শামুয়েল ২৩:৮—“নবী দাউদের শক্তিশালী লোকদের প্রধান যুদ্ধে ৮০০ লোককে হত্যা করেছিলেন, নাকি মাত্র ৩০০ জনকে হত্যা করেছিলেন (১ খান্দাননামা ১১:১১)?”

হয়ত একই ব্যক্তির দুটি আলাদা ঘটনার কথা বলা হচ্ছে এখানে, না হয় হয়ত একটি বর্ণনায় আংশিক সংখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং একটিতে পূর্ণ সংখ্যা দেওয়া হয়েছে (৮০০জন হত্যা হলে অবশ্য ৩০০জনের হত্যা করা হয়েছিল!)।…

১,৭০০ ঘোড়সওয়ার নাকি ৭,০০০?

২ শামুয়েল ৮:৪—“হযরত দাউদ সোবার রাজার ১,৭০০ ঘোড়সওয়ার আটক করলেন নাকি ৭,০০০ (১ খান্দাননামা ১৮:৪)?”

আসলে ২ শামুয়েল ৮:৪ এর মূল লেখায় খান্দাননামার মত ছিল ৭,০০০ (“এক হাজাত রথ সাত হাজার ঘোড়সওয়ার”)। প্রাচীন একটি পান্ডুলিপিতে যখন “রথ” (רֶכֶב) শব্দটা ভুল করে বাদ দেওয়া হল, তখন সেটা হয়ে গেল “এক হাজার সাত হাজার ঘোড়সওয়ার” যার ফলে পরের লিপিকর এটা ঠিক করলেন “এক হাজার সাত শত ঘোড়সওয়ার”।

তবুও এটাও উল্লখযোগ্য যে সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপির মধ্যে কিছু কিছু পাণ্ডুলিপিতে আসল মূল সংখ্যা (৭,০০০) রয়েছে ১ শামুয়েলে। অর্থাৎ, লিপিকরদের এই ভুল সব পাণ্ডুলিপিতে আসেনি।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

সিন্দুকটা কবে সরিয়েছে?

২ শামুয়েল ৫,৬—“নবী দাউদ কোন্‌ সময়ে সাক্ষ্য-সিন্দুকটা জেরুজালেমে এনেছিলেন; ফিলিস্তিনীয়দের পরাজিত করার পরে (২ শামুয়েল ৫,৬ অধ্যায়) না আগে (১ খান্দাননামা ১৩,১৪ অধ্যায়)?”

এখানে আসলে কোন সমস্যা নেই, কারণ ১ খান্দাননামা ১৫ পর্যন্ত পড়লে জানা যায় যে নবী দাউদ (আঃ) ফিলিস্তিনীয়দের পরাজিত করার পরে সাক্ষ্য-সিন্দুকটি নিয়ে আনলেন। কারণটা হল, বনি-ইসরাইলীয়রা দুই বার সাক্ষ্য-সিন্দুকটি সরিয়ে দিলেন। প্রথমবারে ফিলিস্তিনীয়দের পরাজিত করার আগে এরা বালি-এহুদা থেকে সিন্দুকটা বের করে আনল, যেমন ২ শামুয়েল ৫ ও ৬ অধ্যায়ে ও ১ খান্দাননামা ১৫ অধ্যায়ে বলা হয়। যখন নবী শামুয়েল দাউদের বিজয়ের বর্ণনা শেষ করেন, তখন তিনি প্রথম ও দ্বিতীয় সফরের কথা একসঙ্গে বলেন। কিন্তু ১ খান্দাননামাতে, ঘটনাগুলোর ক্রম এই রকম হয়— প্রথম সিন্দুকটা বালি-এহুদা থেকে বের করে আনা হয়, তারপর দাউদ ফিলিস্তিনীয়দের পরাজিত করেন, এবং তারপর সিন্দুকটা ওবেদ-ইদোমের বাড়ীতে নিয়ে যাওয়া হয়।

তাই এই দুই বর্ণনা পরস্পর-বিরোধী নয়, বরং প্রথম বর্ণনায় সিন্দুকের দুই যাত্রা একসঙ্গে বলা হয়, এবং দ্বিতীয় বর্ণনায় অন্যভাবে ইতিহাসটা বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনায় ঘটনার ক্রম একই।

কোরআন শরীফেও এমন ঘটনার ক্রমের জটিলতা রয়েছে—সূরা বাকারাতে প্রথমে হযরত আদম (আঃ)-এর পতনের কথা বলা হয়, তারপর ইসরাইলের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমতের কথা বলা হয়, তারপর ফেরাউনের ডুবে যাওয়ার ঘটনা, তারপর হযরত মূসা এবং সোনার বাছুরের মূর্তি, তারপরে মূসার বিরুদ্ধে ইসরাইলের বিরক্তি প্রকাশ, তারপরে সোনার বাছুরের ঘটনা আবার, তারপর মূসা এবং ঈসা, তারপর মূসা এবং সোনার বাছুর আবার, তারপর হযরত সোলায়মান এবং হযরত ইবরাহিম।

জেরুজালেমের দখল

ইউসা ১০:২৩,৪০—“এই আয়াত অনুযায়ী ইউসা এবং বনি-ইসরাইল জেরুজালেম শহর দখল করলেন, কিন্তু ইউসা ১৫:৬৩ অনুযায়ী তার তাই করেনি”

ইউসাতে আসলে বলা হয় নি যে এরা জেরুজালেম শহর দখল করলেন। ১০ অধ্যায়ে, জেরুজালেমের রাজা নবী ইউসার বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালিয়ে যুদ্ধে মারা গেলেন। নবী ইউসা তখন গিবিয়োন পর্যন্ত পুরো এলাকাটা ধ্বংস করলেন (জেরুজালেম না, কারণ সেটা এই নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে)। এর পরে ১৫ অধ্যায় থেকে আমরা জানতে পাই যে বনি-ইসরাইল সৈন্যদল জেরুজালেম থেকে যেবূষীয় লোকদের বের করতে পারেন নি, যার ফলে এরা যেবূষীয়দের সঙ্গে একটা চুক্তি করে তাদের সঙ্গে বসাবাস করতে লাগল।

১ জোড়া নাকি সাত?

পয়দায়েশ ৬:১৯-২০—“জাহাজে কি হযরত নূহের প্রতিটি প্রাণীর ১ জোড়া (পয়দায়েশ ৬:১৯-২০) আনার কথা ছিল নাকি সাত জোড়া (পয়দায়েশ ৭:২ এবং ৭:৮,৯) আনার কথা ছিল?”

এটা সহজ – পয়দায়েশ ৭ অধ্যায়ে বলা হয়েছে যে প্রতিটি ‘পাক’ প্রাণীর সাত জোড়া আনাতে হয়, কিন্তু পয়দায়েশ ৬ অধ্যায়ে অন্যান্য প্রাণীর জন্য একটা করে জোড়া আনার কথা বলা হচ্ছিল। পয়দায়েশ ৭:২ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যেন ‘পাক’ প্রাণীগুলো সাত জোড়া করে এবং নাপাক প্রাণীগুলো এক জোড়া করে জাহাজে আনা হয়। অবশ্যই এখানে কোন অমিল নেই।

সাত জোড়া করে পাক প্রাণীগুলো আনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট; মহাবন্যার পরে হযরত নূহ্‌ কোরবানী দিয়েছিলেন এবং শুধু এক জোড়া থাকলে পাক প্রাণীগুলো বিলুপ্ত হয়ে যেত। কিন্তু নাপাক প্রাণী যেহেতু কোরবানী করা হয় না সেহেতু একটা নিলে যথেষ্ট হত।

কাবিলের ‘ভবিষ্যদ্বানী’ ভুল?

পয়দায়েশ ৪:১২-১৬—“এখানে একটি ভুল ভবিষ্যদ্বানী আছে, কারণ ১২ আয়াতে বলা হয়েছে যে কাবিল পলাতক হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু ১৬ আয়াতে বলা হয় যে তিনি নোদ নামে একটা দেশে বাস করতে লাগল।”

ভবিষ্যদ্বানী দুটা কথা বলেছে – যে তার আপন দেশ থেকে কাবিল নির্বাসিত হবে এবং যে তিনি একজন נוּע (ফেরারী) এবং נוּד (মুসাফির) হবে। হিব্রুতে এই দুই শব্দ ‘ফেরারী’ এবং ‘মুসাফির’ মূলত বোঝায় যে তাঁকে হত্যা করার জন্য মানুষ তাকে তাড়িয়ে দেবে। কিন্তু ১২ এবং ১৬ আয়াতের মধ্যে লক্ষ্য করতে হবে যে আল্লাহ্‌ তার শাস্তি কমিয়ে দিয়েছেন যখন কাবিল হতাশ হয়ে গেল। আল্লাহ্‌র রহমতে তিনি বলেছেন যে, হ্যাঁ, তিনি নির্বাসিত হবে, কিন্তু

মালোচনা করেছে, তিনি হয়ত জানে না যে কোরআন শরীফও এই প্রথম মানুষদের লম্বা আয়ু সমর্থন করে:

“আমি তো নূহ্‌কে তাহার সম্প্রদায়ের নিকট প্রেরণ করিয়াছিলাম। সে উহাদের মধ্যে অবস্থান করিয়াছিল পঞ্চাশ কম হাজার বছর।” (সূরা আনকাবূত ২৯:১৪)

তওরাত শরীফেও বলা হয় যে হযরত নূহ (আঃ) এর বয়স ছিল ৯৫০ বছর।

‘বিরোধসমূহ’ বুঝা

বিখ্যাত বাইবেল বিশেষজ্ঞ ড. গ্লীসোন আর্চার (পিএইচডি হার্ভার্ড) তাঁর সারা জীবনের কিতাবুল মোকাদ্দস অধ্যয়নের বিষয়টি নিম্নোক্ত ভাবে সংক্ষেপ করেছেন:

হার্ভার্ডের একজন আন্ডার গ্রাজুয়েট ছাত্র হিসাবে এপোলোজেটিকস ও পাককিতাবীয় প্রমাণাদির দ্বারা আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম; আর তাই আমি পাককিতাবীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের জন্য পরিশ্রম করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়ে আমি গ্রিক, ল্যাটিন ও সেইসঙ্গে ফরাসি ও জার্মান ভাষাতেও প্রশিক্ষণ নিলাম। সেমিনারিতে আমার প্রধান বিষয় ছিল হিব্রু, অরামীয় ও আরবি; আর স্নাতোকোত্তর বছরগুলিতে আমি সিরীয় ও অক্কাদীয় ভাষা এবং এই প্রত্যেকটি বিষয়গুলির উপর নৈর্বাচনিক পাঠের শিক্ষাদানের সঙ্গেও যুক্ত হলাম। আগে, হাইস্কুলে আমার শেষ দুই বছরে মধ্যরাজ্য মিসরীয় স্টাডিস বিষয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ দেখা দিয়েছিল এবং পরে এই ক্ষেত্রে শিক্ষা দেওয়ার সময় এই আগ্রহ আরো বেড়ে গিয়েছিল। শিকাগোর ওরিয়েন্টাল ইসস্টিটিউটে আমি অষ্টাদশ শতকের রাজবংশীয় ঐতিহাসিক দলিলপত্র সম্বন্ধে বিশেষ অধ্যয়ন করি এবং সেইসঙ্গে কপ্টিক ও সুমেরীয় ভাষাগুলোও অধ্যয়ন করি। প্রাচীন ভাষায় এই অধ্যয়ন কাজের সঙ্গে আমি ল’-স্কুলের একটি পূর্ণ কোর্সের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, এবং তার পর ১৯৩৯ সালে ম্যাসাচুসেট্স বার-এ ভর্তি হই। এতে আমি আইনী সাক্ষ্য-প্রমাণের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক ভিত্তি লাভ করি।

আমি একের পর এক আপাত এই অসঙ্গতিগুলি নিয়ে কাজ করে এবং বাইবেলের তথ্যাদি ও ভাষিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, বা বৈজ্ঞানিক তথাকথিত অসঙ্গতি সম্বন্ধে গবেষণা করে দেখেছি, পাক-কিতাবের নির্ভরযোগ্যতার উপর আমার আস্থা শুধু বাড়তে থাকে। এই-ও পাই, যে পাক-কিতাবের বিরুদ্ধে মানব জাতির প্রতিটি অসঙ্গতির অভিযোগ স্বয়ং পাককিতাবীয় কথা অথবা বস্তুনিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য দিয়ে পুরোপুরি সমাধান করা হয়েছে। তার দ্বারা পাককিতাব সম্বন্ধে আমার আস্থা ও বিশ্বাস বারবার নিশ্চিত ও দৃঢ় হয়েছে। প্রাচীন মিশরীয়, সুমেরীয়, বা অক্কাদীয় দলীল থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সবই কিতাবুল মোকাদ্দসের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ; আর তাই নাস্তিক বা সমালোচকদের বিদ্বেষমূলক যুক্তি বা দন্দ্বাহ্বান (চ্যালেঞ্জ) থেকে প্রশিক্ষিত বাইবেলের শিক্ষার্থীর কোন ভয় পাওয়া উচিত না।
এই বইয়ের পিছন দিকে এই উৎসগুলির একটি পূর্ণ তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের উপর আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য শেষ দিকে সহায়ক গ্রন্থাবলীর একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে।

পাককিতাব সম্পর্কিত সমালোচকদের ভুল ব্যাখ্যাগুলি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়:

মূল ভাষাগুলি অগ্রাহ্য করা- আমি এই পর্যন্ত একজন-ও মুসলমান বাইবেল-সমালোচককে পাই নি যিনি বাইবেলের মূল ভাষাগুলি (হিব্রু ও গ্রিক) ভালভাবে পড়তে জানেন, যদিও বিশ্বে লক্ষ লক্ষ বাইবেল শিক্ষার্থী সেগুলি পড়তে জানেন। তাদের বিরোধগুলি প্রায়ই ইংরেজি শব্দের অর্থভিত্তিক, যেমন এরা দাবি করেন যে יום এর অর্থ কেবল ‘দিন’, অথবা ארץ এর অর্থ কেবল গোলক (গেস্নাব), অথবা גּרה עלה এর অর্থ কেবল rumination (জাবর কাটা) কিন্তু refection নয়।

পাককিতাবের সঙ্গে অপরিচিতি- যারা পুরো বাইবেলটি পড়েন নি কেবল তাদের কাছেই অনেক অসঙ্গতি দেখা দেয়। আমি একজন আগ্রহী বাইবেল-সমালোচকের সঙ্গে আলাপ করেছি যিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে পাককিতাব সম্পর্কিত অনেক অসঙ্গতি মুখস্থ করেছেন, কিন্তু তিনি স্বীকার করলেন যে তিনি বাইবেল বা কোরআন কখনও পড়েন নি।

কথিত “অসঙ্গতিসমূহ” যেগুলো কোরআন ও হাদিসেও দেখা যায়- সমালোচকরা যখন নবীদের ৯৫০-বছর বয়সের বর্ণনা, ২৪-ঘণ্টার সৃষ্টির দিনগুলি, ইউসার পক্ষে সূর্যের “স্থির হয়ে দাঁড়ানো’, অথবা আলোর আগেই গাছ-পালার সৃষ্টি বিষয়ে বাইবেলকে আক্রমণ করে, এরা ভুলে যায় যে এইসব বর্ণনা কোরআন শরীফ ও সহীহ হাদিসেও আছে।

অস্বীকৃত অনুলেখকের ভ্রম থেকে যুক্তি দেখানো- ঐতিহাসিক তথ্যাদিতে পাওয়া যায় যে, কোরআন শরীফ ও কিতাবুল মোকাদ্দস উভয় গ্রন্থেরই কিছু পাণ্ডুলিপিতে কপি করার সময় কিছু কিছু ছোট-খাঁটো ভুল হয়েছে, এবং তার পরিমাণ সমগ্র গ্রন্থের ১% এরও কম। এগুলি চিহ্নিত ও দূরীকরণের জন্য একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে, যার নাম textual criticism। বিশেষ করে সাংখ্যিক অসাঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে, যে সংখ্যাগুলি দীর্ঘদিন ধরে অনুলেখকের ভ্রম বলে প্রমাণীত বলে চলে আসছে সমালোচকরা সেগুলি অনুলিপিকারদের ভ্রমগুলি থেকে ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের অনুলেখকের ভ্রম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য অনুলিপিকারদের ভ্রম প্রবন্ধটি দেখুন।

ভ্রমপ্রবণ মানুষের উদ্ধৃতিকে খোদায়ী উক্তি হিসাবে ভুলভাবে পড়া- বাইবেল ও কোরআন উভয় কিতাবেই অন্য মানুষের উক্তি দেয় যার মধ্যে মিথ্যা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “উজায়ের হচ্ছেন আল্লাহ্‌র পুত্র”, কিন্তু এটি নিতান্তই একটি উদ্ধৃতিমাত্র। বাইবেলের সমালোচকরা প্রায়ই এই ধরণের উদ্ধৃতি (যেমন নহিমীয়, আইয়ুব, ও হান্নার কথা) তোলে ভুলভাবে ব্যবহার করেন।

অপরিণত বিচার- কেপলার যখন তাঁর প্রকৃতি বিষয়ক অধ্যয়নে একটি আপাত অসঙ্গতি দেখতেন তখন তিনি প্রকৃতির নিয়ম বাদ দিতেন না; তিনি প্রকৃতির উপর আস্থা রাখতেন। কয়েক দশক আগেও বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মৌমাছি (bumble bee) এর পক্ষে ওড়া অসম্ভব হবে; কিন্তু তারা তখন একসঙ্গে পদার্থবিদ্যাকে ত্যাগ করেন নি, তারা বরং স্বীকার করেন যে, উত্তরটি তাদের জানা নেই , এবং পদার্থ বিদ্যার উপর তাদের বিশ্বাস অব্যাহত রেখেছিলেন।

ব্যাপকতর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া বা লুকিয়ে রাখা – এটা সমালোচকদের একটা প্রচলিত উপায়- তাদের মতামতের বিপরীতে নিরানব্বইটি অনুচ্ছেদ অবহেলা করে তারা বাছাইকরা দু’একটি আয়াতের ভুলব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের ভ্রান্ত ধারণাটি উপস্থাপন করেন।

ইচ্ছাকৃত মিথ্যা- সমালোচকরা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বলবে না যে, বাইবেলের বিপক্ষে পিঁপড়াদের ‘শাসনকর্তা’ বা ‘প্রধানকর্মী’ (foreman) আছে।

বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেখুন:

<?…