প্রকৃত খ্রিস্টান কারা?

প্রশ্ন:

যখনই আমি কোন খ্রিস্টানকে ইসলামের দাওয়াত দিতে যাই তখনই একটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়,,, তারা উলটো আমাকে খ্রিস্টান হওয়ার জন্য বলে!!! যীশু বা ইসা আঃ কে যে অনুসরন করে তাকে যদি খ্রিস্টান বলা হয় তাহলে আমি মনে করি আমি খ্রিস্টানদের থেকেও বড় খ্রিস্টান। কারন :-

  • যীশু শোকরের গোশত খেত না [দ্বিতীয় বিবরন ১৪:৮]( আমিও খাইনা)

ইঞ্জিলের সরাসরি উদ্ধৃতি দিয়ে সবচেয়ে ভালো উত্তর হয়:

ঈসা তাঁদের বললেন, “তোমরা কি এতই অবুঝ?

সকল নবী কি নিষ্পাপ?

সকল নবী কি নিষ্পাপ?

এখন পাপ সম্পর্কে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ করা দরকার। আল্লাহ্‌ যে নবী পয়গম্বরদের পাঠিয়েছিলেন তাঁদের নিয়ে একটি ভূল ধারণা প্রায় সব মানুষই পোষন করে আর তা হল যে সমস্ত নবীরাই নিষ্পাপ। এই ধারণা আল্লাহ্‌র কালাম ও সাধারণ যুক্তির বিপরীত। এটি সাধারণ যুক্তির বিপরীত কারণ নবীরাও আমাদের মতো আদমের বংশভূত এবং তাঁদেরও ওই একই গুনাহ্‌-স্বভাব ও আত্মকেন্দ্রিক জীবন ছিল। এটা আল্লাহ্‌র কালামের বিপরীত কারণ আল্লাহ্‌র কিতাবে নবীদের গুনাহ্‌ সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। আল্লাহ্‌র কালাম নবীদের ভুল-ত্রু টি ও আল্লাহ্‌কে অমান্য করার ঘটনার সাথে তাঁদের গভীর ঈমান ও বাধ্যতার কথাও সুস্পষ্টভাবে বলে। নবীদের জীবন সম্পর্কে সুন্দর ব্যাপারটা হল, যদিও তাঁরা পাপ করেছিল তবুও তাঁরা তওবা করে আল্লাহ্‌র ক্ষমা পেয়েছিলেন।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, কোরআনে নবীরা যে সব পাপ করেছিলেন সে সব বিষয়ে পরিষ্কার বিশ্লেষণ না থাকলেও নবীরা আল্লাহ্‌র কাছে যে অনুশোচনা করেছেন তার উল্লেখ আছে। নবীদের অবাধ্যতার একটা পরিষ্কার চিত্র পেতে হলে এবং তাদেরকে কেন তওবা করতে বলা হয়েছে তা জানতে হলে পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে খোঁজ করতে হবে। এই বিষয়ে কোরআনের কিছু অংশ নিচে দেওয়া হল। এই আয়াতগুলি পরিষ্কারভাবে বুঝায় যে নবীরাও পাপী ছিলেন আর আল্লাহ্‌র ক্ষমা তাঁদের দরকার ছিল।

 

হযরত মূসা (আঃ)

“এবং আশা করি, তিনি [আল্লাহ্‌] কিয়ামত দিবসে আমার আপরাধ মার্জনা করিয়া দিবেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা শু’আরা’ ২৬:৮২)

হযরত ইবরাহীম (আঃ)

“সে [মূসা নবী] নগরীতে প্রবেশ করিল, যখন ইহার অধিবাসীরা ছিলো অসতর্ক। সেথায় সে দুইটি লোককে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখিল, একজন তাহার নিজ দলের এবং আপর জন তাহার শত্রুদলের। মূসার দলের লোকটি উহার শত্রুর বিরুদ্ধে তাহার সাহায্য প্রার্থনা করিল, তখন মূসা উহাকে ঘুসি মারিল; এইভাবে সে তাহাকে হত্যা করিয়া বসিল। মূসা বলিল, ইহা শয়তানের কাণ্ড। সে তো প্রকাশ্য শত্রু ও বিভ্রান-কারী।” (কোরআন শরীফ, সূরা কাসাস ২৮:১৫-১৬)

হযরত ইউনুস (আঃ)

“ইউনুসও ছিলো রাসূলদের একজন। স্মরণ কর, যখন সে পলায়ন করিয়া বোঝাই নৌযানে পৌঁছিল, অতঃপর সে লটারীতে যোগদান করিল এবং পরাভুত হইল। পরে এক বৃহদাকার মৎস্য তাহাকে গিলিয়া ফেলিল, তখন সে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগিল। সে যদি আল্লাহ্‌র পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করিত, তা হইলে তাহাকে উত্থান দিবস পর্যন- থাকিতে হইত উহার উদরে। অতঃপর ইউনুসকে আমি নিক্ষেপ করিলাম এক তৃণহীন প্রান-রে এবং সে ছিলো রুগ্ন। পরে আমি তাহার উপর এক লাউ গাছ উদ্‌গত করিলাম, তাহাকে আমি এক লক্ষ বা ততোধিক লোকের প্রতি প্রেরণ করিয়াছিলাম। এবং তাহারা ঈমান আনিয়াছিল; ফলে আমি তাহাদিগকে কিছু কালের জীবনোপভোগ করিতে দিলাম।” (কোরআন শরীফ, সূরা সাফ্‌ফাত ৩৭:১৩৯-১৪৮)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

“এতএব তুমি [হে মুহাম্মাদ] ধৈর্য ধারণ কর; নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুতি সত্য, তুমি তোমার ক্রটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সকাল ও সন্ধ্যায়।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুমিন ৪০:৫৫

“সুতরাং জানিয়া রাখ [হে মুহাম্মাদ], আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্‌ নাই, ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মু’মিন নর-নারীদের ক্রটির জন্য আল্লাহ্‌ তোমাদের গতিবিধি এবং অবস’ান সম্বন্ধে সম্যক অবগত আছেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা মুহাম্মাদ ৪৭:১৯)

“নিশ্চয়ই [হে মুহাম্মাদ] আমি তোমাদিগকে দিয়াছি সুস্পষ্ট বিজয়, যেন আল্লাহ্‌ তোমার অতীত ও ভবিষ্যত ক্রটিসমূহ মার্জনা করেন এবং তোমার প্রতি তাঁহার অনুগ্রহ পূর্ণ করেন ও তোমাকে সরল পথে পরিচালিত করেন, এবং আল্লাহ্‌ তোমাকে বলিষ্ঠ সাহায্য দান করেন।” (কোরআন শরীফ, সূরা ফাত্‌হ ৪৮:১-৩)

গুনাহ্‌ ও তার খারাপ ফালাফল কী, তা ভালভাবে জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মানুষ মনে করে যে বর্তমান সময়ে প্রচলিত কোন জনপ্রিয় প্রণালী বা তন্ত্র যেমন গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদ ব্যবহারের দ্বারাই দারিদ্র, অসাম্য, দুর্দশার মতো সমস্যাগুলোর সমাধান করা সম্ভব। দুর্ভাগ্যবসত, আল্লাহ্‌র কালাম আমাদের এই রকম এতো সহজ সমাধানের কথা বলে না। সব থেকে ভাল আবিস্কৃত তন্ত্রও মানুষের দ্বারাই চালিত যে নিজেই স্বার্থপর ও কুলষিত এবং তার পরিচালনায় তার তন্ত্র সমাজকে অবিচার ও কষ্টের মধ্যেই নিয়ে যায়।

মানব সমাজের সমস্যাটা বাহিরের এই পন্থাগুলো নিয়ে নয় বরং তা মানুষের হৃদয়ের ভিতরের পন্থাকে নিয়েই। একজন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষ প্রতিদিন গোসল করে ও নিত্য নতুন কাপড় পরিবর্তন করে পরিষ্কার থাকতে পারে ঠিকই কিন্তু সেভাবে যে রোগ তাকে ভিতর থেকে নিঃশেষ করে ফেলছে তাকে কিছুতেই সে দূর করতে পারবে না । মানব সমাজের এই বিশ্বজনীন যে নিপীড়ন তা কোন ভুল প্রথার জন্য নয়, তা বরং মানুষের পাপের জন্যই যা এই প্রথাগুলোকে পরিচালনা করে। অন্য দিকে, যদি একটা খারাপ প্রথা ভাল মানুষদের দ্বারা চালিত হয় তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে তারা সেই প্রথাকে নির্ভুল করে তা ব্যবহার করে পৃথিবিকে কয়েক বছরের মধ্যেই বেহেশতে রূপান্তর করা সম্ভব হত।

প্রধান যে জিনিসটি যা আমাদের দরকার তা হল আমাদের হৃদয়ের পরিষ্কারকরণ । মন পরিবর্তন না হলে শুধু বাহিরকে পরিবর্তন করলেই হবে না। আদম-হাওয়ার পাপের মাধ্যমে যা বেঠিক হল তাকে আবার সঠিক করতে হবে। আমাদের স্বার্থপর কামনা বাসনা ও ইচ্ছা থেকে ফিরে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরতে হবে যাতে আমরা তাঁর রাজ্যের ভাগি হতে পারি।

এই ব্যাপারে আমরা প্রত্যেকেই দুইটি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি। প্রথমত, আমরা কি নিজেরা স্বীকার করতে রাজি আছি যে, আমি পাপি আর আল্লাহ্‌র রহমত ও ক্ষমা না পেলে কেয়ামতের দিনে শুধু ভর্তসনা ও শাস্তি আশা করতে পারি?…

ইউহোন্না ১০:৮ – নবীরা কি চোর ও ডাকাত?”

ইউহোন্না ১০:৮—“ঈসা কীভাবে বলতে পারেন যে আগেকার সমস্ত নবী-পয়গম্বর ছিলেন চোর ও ডাকাত?”

ইঞ্জিলের উপর এই আক্রমন খুব দুর্বল। ইঞ্জিলের একটুমাত্র পড়লে বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ আগেকার নবীদের খুব সম্মান করতেন (যেমন মথি ৫:১৭; মথি ১২:৩; লূক ১৩:২৮; ইউহোন্না জ৮:৩৯,৪০)। এইজন্য বোঝা যায় যে ঈসা মসীহ্ এখানে প্রকৃত নবীদের “চোর ও ডাকাত” বলেননি, বরং ভণ্ড নবী ও ভণ্ড ‘মসীহ’দের “চোর ও ডাকাত” বলেছিলেন (যারা নবীদের যুগের পরে এসে নিজেকে নবী বা মসীহ্ বলে মানুষকে ঠকিয়েছে)। তেমনভাবেও নবী ইহিষ্কেল তাদের সমালোচনা করেছিলেন, যারা নিজেকে ইহুদীদের নেতা বা নবী বলে কিন্তু শুধু নিজেকে সেবা করে। ঈসা মসীহ্ তাদের ‘চোর’ বলেছিলেন কারণ তারা অনেকসময় কৌশলে মানুষকে আকৃষ্ট করতেন এবং ‘ডাকাত’ বলতেন কারণ ভণ্ড নেতারা হিংস্রতা ব্যবহার করতেন।

রংধনুর সৃষ্টি

পয়দায়েশ ৯:১৩—“বৈজ্ঞানিক দিক থেকে সেটা সম্ভব না যে শুধুমাত্র মহাবন্যার পরে আল্লাহ্‌ রংধনু সৃষ্টি করেছেন”

কিতাবুল মোকাদ্দসে তো কিন্তু কোন ইঙ্গিত নাই যে বন্যার আগে রংধনু ছিল না; অবশ্যই তা আগে থেকেই ছিল। আল্লাহ্‌ হযরত নূহ্‌কে বরং বলেছিলেন যে সেটা তার কাছে আল্লাহ্‌র প্রতিজ্ঞা মনে রাখার জন্য একটি বিশেষ চিহ্ন হবে যে তিনি আবার দুনিয়া সেভাবে ধ্বংস করবে না। তেমনই ভাবে পয়দায়েশ ১৫ অধ্যায়ে আল্লাহ্‌ হযরত ইবরাহিমকে তারা দেখিয়ে বলল যে সেটা তার জন্য একটি চিহ্ন হবে কত বংশধর তাকে দেওয়া হবে। তাতে কি আমরা বুঝবো যে তারাগুলো শুধু তখনই সৃষ্টি হয়েছিল?…

শুধু ঈসা নয়, হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘আল্লাহ্‌র কালাম’ বলা হয়

কোরআন অনুযায়ী কেবল হযরত ঈসা “আল্লাহ্‌র কালাম” নয়, বরং সূরা আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে হযরত ইয়াহিয়াকেও ‘কালাম’ বলা হয়”

জাকির নায়েক দাবী করেছেন যে আলে-‘ইমরান ৩৯ আয়াতে তরিকাবন্দিদাতা ইয়াহিয়াকেও “আল্লাহ্‌র কালাম” বলা হয়েছে, অর্থাৎ কেবলমাত্র হযরত ঈসা “আল্লাহ্‌র কালাম” নয়। কিন্তু এই আয়াত পড়লে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় সেখানে হযরত ইয়াহিয়া অন্য একজন প্রেরিত “কালাম”-এর কথা সমর্থন করছেন—

“আল্লাহ্‌ তোমাকে (অর্থাৎ ইয়াহিয়ার পিতা জাকারিয়াকে) ইহাহ্‌ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্‌র বাণীর সমর্থক” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৩৯)

কোরআনের তাফসীরকারী প্রায় একবাক্যে বলেন যে এই আয়াতে উক্ত ‘কালাম’ ঈসাকে বোঝাচ্ছে। যেমন হযরত ইবনে ‘আব্বাস (রা) এর তাফসীর—

তিনি যখন মসজিদে মোনাজাত করছিলেন তখন ফেরেশতা জিবরাইল তার কাছে এসে তাকে একজন সন্তানের সংবাদ দেন যার নাম ইয়াহিয়া, যিনি আল্লাহ্‌র কাছে একটি কালাম সমর্থন করবেন; মরিয়ম-তনয় ঈসা যিনি আল্লাহ্‌র কালাম হবেন, বিনা পিতায় সৃষ্ট…

এবং বিখ্যাত তাফসীরে জালালাইন শরীফে এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—

…“আল্লাহ্‌ তোমাকে ইহাহ্‌ইয়ার সুসংবাদ দিতেছেন, সে হইবে আল্লাহ্‌র বাণীর সমর্থক”—অর্থাৎ ঈসা; তিনি রূহুল্লাহ, তাকে ‘কালাম’ও বলা হয়…”

প্রসিদ্ধ মুফাস্সির শায়েখ তাবারসি এবং আল্লামা জামাখশারি এর সঙ্গে একমত, এবং অবশ্য ইঞ্জিল শরীফে হযরত ইয়াহিয়া (আঃ) এর বিস্তারিত বর্ণনা থেকে দেখা যায় তার প্রধান কাজ ছিল হযরত ঈসার পথ প্রস্তুত করা—

তিনি (ইয়াহিয়া) নূরের বিষয়ে সাক্ষী হিসাবে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন যেন সকলে তাঁর সাক্ষ্য শুনে ঈমান আনতে পারে। তিনি নিজে সেই নূর ছিলেন না কিন্তু সেই নূরের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন। (ইউহোন্না ১:৭, এবং দেখুন ইউহোন্না ১:১৪)

ইঞ্জিলে বলা হয় যে হযরত ঈসা মসীহ্‌র আত্মীয় হযরত ইয়াহিয়া ঈসার পথ প্রস্তুত করলেন এবং লোকদের তাকে অনুসরণ করতে বলেছেন।

  1. জাকির নায়েক, দা’ওয়া ট্রেনিং প্রোগ্রাম, www.irf.net/irf/dtp/dawah_tech/t18/t18a/pg1.htm