ইম্মানুয়েল ভবিষ্যদ্বাণী কি মিথ্যা?

প্রশ্ন:

জাতির কাছে এক কঠিন প্রশ্ন: বাইবেলের এই ভবিষ্যত বাণী কি মিথ্যা নয়? লজিকালি উত্তর দিবেন।

বাইবেলে ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছিল যে, মরিয়মের ছেলের নাম রাখা হবে ইম্মানুয়েল। ইম্মানুয়েল অর্থ ” ঈশ্বর আমাদের সাথে”। আর যিশু অর্থ “অভিষিক্ত ত্রানকর্তা”। গস্পেল অফ মথি ১/২২,২৩ এ বলা হয়েছে,

“একজন অবিবাহিতা সতী মেয়ে গর্ভবতী হবে, আর তার একটি ছেলে হবে, তার নাম রাখা হবে ইম্মানুয়েল।”(মথি ১:২২,২৩)

বাইবেলে স্পষ্ট বলা হয়েছে তার নাম হবে ইম্মানুয়েল, যার অর্থ “ঈশ্বর আমাদের সাথে”। তাহলে মরিয়মের পুত্রের এমন এক নাম রাখা হবে যার নামের অর্থ হবে “ঈশ্বর আমাদের সাথে।” মরিয়মের পুত্রের নাম কি তাই রাখা হয়েছে যার অর্থ “ঈশ্বর আমাদের সাথে?”

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০ – একটি অপূর্ণ বিষ্যদ্বানী?

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০—“এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে যে দাউদের সিংহাসনে বসবার জন্য যিহোয়াকীম কেউ থাকবে না, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৬ অনুযায়ী যিহোয়াকীমের মৃত্যুর পরে তার ছেলে যিহোয়াখীন তার জায়গায় বাদশাহ্‌ হলেন।”

এখানে কোন পরস্পর-বিরোধী কথা নাই, বরং মূল হিব্রু শব্দ “ইয়াশাব” ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০তে বলা হয়েছে যে যিহোযাকীমের পরে কেউ দাউদের সিংহাসনে “বসবে” (יושׁב “ইয়াশাব” ) না। এই ‘ইয়াশাব’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় “রয়ে যাওয়া”, “থাকা”, “বাস করা”, “প্রতিষ্ঠিত হওয়া”—অর্থাৎ স্থিতিশীল ভাবে সিংহাসনে বসা।

যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন কোনভাবেই সিংহাসনে “ইয়াশাব” করেনি—কারণ তার রাজত্বকালের মাত্র তৃতীয় মাসে বখতে-নাসারের বাহিনী জেরুজালেম দখল করলেন এবং যেহোয়াখীনকে নির্বাসনে পাঠানো হল। অর্থাৎ যিহোয়াকীমের বংশধরে যে সিংহাসনে থাকবে না সেই ভবিষ্যদ্বানী আসলে পূর্ণ হয়েছিল ।

কোরআন শরীফের মধ্যে সেরকম জটিল একটি ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে:

“রোমকগণ পরাজিত হইয়াছে—নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু উহারা উহাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হইবে” (সূরা রূম ৩০:২,৩)

প্রসিদ্ধ কোরআন অনুবাদক ইউসুফ আলীর কথা অনুযায়ী, আরবী শব্দ “শীঘ্রই” (بِضع বিধু’উন) এর অর্থ ৩ থেকে ৯ বছর; অথবা ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআনের টিকা #১৩৩০ অনুযায়ী ৩-১০ বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে “শীঘ্রই” বোঝাচ্ছে ৩ থেকে ৯ বছর (আল-বাইজাওয়ী)। পারস্য রাজ্য রোমীয়দের পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করেছেন ৬১৪ অথবা ৬১৫ সালে। কিন্তু বিখ্যাত ইসলামি ঐতিহাসিক আত-তাবারী এবং আল-বাইজাওয়ী অনুযায়ী পারস্যদের পরাজয় হল ১৩-১৪ বছর পরে (৬২৮ সালে)। মনে হচ্ছে ইয়ারমিয়ার উপরোক্ত জটিলতা থেকে এই জটিলতা কম না।

ইশাইয়া ৭:১৪ – কুমারীর সন্তান?

ইশাইয়া ৭:১৪—“এই ভবিষ্যদ্বানী পূর্ণ হয়নি, কারণ ‘আমলা’ শব্দার্থ অক্ষতযোনি স্ত্রীলোক নয় বরং কুমারী-বয়স, এবং ইঞ্জিল শরীফে ঈসাকে কেউ ‘ইমান্যুয়েল’ বলে ডাকেনি।”

এর প্রথম অভিযোগ- যে হিব্রু শব্দ עלמה আল্‌মা (জাকির নায়েকের কথামত “আম্‌লা” নয়!) শুধু যুব-বয়সী মেয়েকে বোঝায়, সেটা ঠিক না। হিব্রু ‘আল্‌মা’ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয় একজন অক্ষতযোনি মেয়ে। যদি কোন নবী বলে যে একটি আশ্চর্য চিহ্ন দেখানো হবে, যে “একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে”, এর অর্থ সবাই চিনতে পারে—বিনা সঙ্গমে মেয়েটি গর্ভবতী হবে। তাই ঈসা মসীহ্‌র ২০০ বছর আগেই যখন হিব্রু থেকে গ্রীক ভাষায় এই কিতাবের অনুবাদ করা হল, তখন তারা সঠিকভাবে এটা অনুবাদ করেছেন “παρθένος” (অবিবাহিতা সতী মেয়ে) দিয়ে।

এই আয়াত নিয়ে দ্বিতীয় অভিযোগ হল যে ছেলেটিকে বলা হবে “ইম্মানুয়েল”, অর্থাৎ “আমাদের সঙ্গে আল্লাহ্‌”। এই নাম যে মা মরিয়ম দিবে নাকি অন্য কেউ দিবে সেটা মূল হিব্রুতে অস্পষ্ট। কিন্তু ইঞ্জিলে ঈসাকে এই নাম দেওয়া হয়েছে (মথি ১:২৩), এবং ইতিহাস জুড়ে লক্ষ লক্ষ ঈসায়ী ঈসাকে “ইম্মানুয়েল” হিসাবে চেনে। তাই কোন অর্থে এটা অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী হতে পারে?…