ইয়াহিয়া ও ঈসা মসীহ

এখানে ইয়াহিয়ার বিষয়ে সেই দুই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি:

প্রথম প্রশ্ন

ঈসা মসীহ বলেছেন মাতৃগর্ভ গর্ভ থেকে যতজন জন্মগ্রহণ করেছে ইয়াহিয়া সবচেয়ে মহান। তাহলে ইয়াহিয়া কি ঈসা মসীহের চেয়েও মহান?

এটা লেখা আছে মথি ১১:১১ আয়াতে:

“আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, মানুষের মধ্যে তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়ার চেয়ে বড় আর কেউ নেই। কিন্তু বেহেশতী রাজ্যের মধ্যে যে সকলের চেয়ে ছোট সে-ও ইয়াহিয়ার চেয়ে মহান।” (মথি ১১:১১)

ঈসা মসীহ যে নতুন ব্যবস্থা (চুক্তি) চালু করেছিলেন তার মৃত্যু ও পুনরুত্থান দিয়ে, সেই নতুন ব্যবস্থার অপর নাম হল “আল্লাহর রাজ্য”। ঈসা মসীহ এখানে বলছে যে তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া এতো মহান হলেও আল্লাহর রাজ্য যারা দেখতে পারবে তারা আরও ভাগ্যবান বা মহান। তরিকাবন্দীদাতা ইয়াহিয়া ঈসা মসীহের প্রচারকালে মারা গেলেন (মার্ক ৬:১৪-২৯) তাই তিনি আল্লাহর রাজ্যের পূর্ণতা দেখতে পায়নি। আল্লাহর রাজ্যে ঈসা মসীহ জনসাধারণদের মধ্যে গোনা হচ্ছে না (“মাতৃগর্ভ গর্ভ থেকে যতজন জন্মগ্রহণ করেছে”)। ইয়াহিয়া স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে ঈসা তার থেকে অনেক মহান:

“ইয়াহিয়া তাঁর বিষয়ে জোর গলায় সাসাক্ষ্য দিয়ে বললেন, “উনিই সেই লোক যাঁর বিষয়ে আমি বলেছিলাম, যিনি আমার পরে আসছেন তিনি আমার চেয়ে মহান, কারণ তিনি আমার অনেক আগে থেকেই আছেন।” (ইউহোন্না ১:১৫)

“এর জবাবে ইয়াহিয়া বললেন, “বেহেশত থেকে দেওয়া না হলে কারও পক্ষে কোন কিছুই পাওয়া সম্ভব নয়। 28 তোমরাই আমাকে বলতে শুনেছ যে, আমি মসীহ নই, কিন্তু আমাকে তাঁর আগে পাঠানো হয়েছে। 29 যার হাতে কন্যাকে দেওয়া হয়েছে, সে-ই বর। বরের বন্ধু দাঁড়িয়ে বরের কথা শোনে এবং তাঁর গলার আওয়াজ শুনে খুব খুশী হয়। ঠিক সেইভাবে আমার আনন্দও আজ পূর্ণ হল। তাঁকে বেড়ে উঠতে হবে আর আমাকে সরে যেতে হবে।যিনি উপর থেকে আসেন তিনি সকলের উপরে। যে দুনিয়া থেকে আসে সে দুনিয়ার, আর সে দুনিয়ার কথাই বলে। কিন্তু যিনি বেহেশত থেকে আসেন তিনিই সকলের উপরে। তিনি যা দেখেছেন আর শুনেছেন তারই সাক্ষ্য দেন, কিন্তু কেউ তাঁর সাক্ষ্য অগ্রাহ্য করে না। যে তাঁর সাক্ষ্য গ্রাহ্য করেছে সে তার দ্বারাই প্রমাণ করেছে যে, আল্লাহ্ যা বলেন তা সত্য। আল্লাহ যাঁকে পাঠিয়েছেন তিনি আল্লাহরই কথা বলেন, কারণ আল্লাহ্ তাঁকে পাক-রূহ্ মেপে দেন না। পিতা পুত্রকে মহব্বত করেন এবং তাঁর হাতে সমস্তই দিয়েছেন। যে কেউ পুত্রের উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়, কিন্তু যে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও পাবে না, বরং আল্লাহর গজব তার উপরে থাকবে। (ইউহোন্না ৩:২৭-৩৬)

তাই সংক্ষেপে:

  1. ১. ঈসা ইয়াহিয়ার চেয়ে মহান (ইউহোন্না ১:১৫)
  2. ২. ইয়াহিয়া ঈসার জুতা খোলার যোগ্যও না (ইউহোন্না ৩:১২)
  3. ৩. ঈসা ইয়াহিয়ার “অনেক আগে থেকেই আছেন” যদিও তিনি বয়সে ৬ মাস ছোট (ইউহোন্না ১:১৫)
  4. ৪. ঈসা আল্লাহর প্রিয় (রুহানিক) পুত্র (ইউহোন্না ৩:৩৫)
  5. ৫. ইয়াহিয়ার কাজের উদ্দেশ্য ছিল ঈসার পথ প্রস্তুত করা

বই ব্যাখ্যার নিয়ম হল যেখানে একটা বিষয় অনেক স্পষ্ট লেখা আছে, সেটা দিয়ে অস্পষ্ট অংশগুলো ব্যাখ্যা করতে হয়। এবং যেহেতু ঈসা “আল্লাহর রাজ্যের একজন” (আসলে এই নতুন ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা) তিনি অবশ্যই ইয়াহিয়া থেকে মহান।

দ্বিতীয় প্রশ্ন

ঈসা মসীহ যদি পাপী না হতেন তাহলে ইয়াহিয়ার কাছে বাপ্তিস্ম কেন নিয়েছিলেন?

ঈসা মসীহ একজন পাপী বলে তিনি বাপ্তিস্ম বা তরীকাবন্দী গ্রহন করেননি, বরং দুটো কারণে:

  1. ১. যেন তার প্রচার কাজের শুরুতেই আল্লাহ সবার সামনে ঘোষণা দিতে পারে যে ঈসা তার প্রিয় রুহানি পুত্র এবং মনোনীত মসীহ (মথি ৩:১৬,১৭)
  2. ২. যেন তিনি তার অনুসারীদের জন্য একটি আদর্শ রেখে যেতে পারে। আল্লাহর ইচ্ছা ছিল যেন ঈসা মসীহ সব দিকে সাধারণ মানুষের মত করে চলে কিন্তু কোনো পাপ ছাড়া:

“আমাদের মহা-ইমাম এমন কেউ নন যিনি আমাদের দুর্বলতার জন্য আমাদের সংগে ব্যথা পান না, কারণ আমাদের মত করে তিনিও সব দিক থেকেই গুনাহের পরীক্ষার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন অথচ গুনাহ্ করেন নি।” (ইবরানী ৪:১৫)

ইয়াহিয়া ও ঈসার আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ঈসা মসীহের তরীকাবন্দী নেওয়ার প্রয়োজন ছিল না (তাওবার চিহ্ন হিসেবে), কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা পূর্ণ করার জন্যই তিনি তরীকাবন্দী নিয়েছিলেন:

“সেই সময় ঈসা তরিকাবন্দী নেবার জন্য গালীল থেকে জর্ডান নদীর ধারে ইয়াহিয়ার কাছে আসলেন। ইয়াহিয়া কিন্তু তাঁকে এই কথা বলে বাধা দিতে চেষ্টা করলেন, “আমারই বরং আপনার কাছে তরিকাবন্দী নেওয়া দরকার; আর আপনি কিনা আসছেন আমার কাছে!” তখন ঈসা তাঁকে বললেন, “কিন্তু এবার এই রকমই হোক, কারণ আল্লাহর ইচ্ছা এইভাবেই আমাদের পূর্ণ করা উচিত।” তখন ইয়াহিয়া রাজী হলেন।” (মথি ৩:১৩-১৫)

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Comments are closed.