করিন্থীয়দের কাছে হারানো চিঠি?

১ম ও ২য় করিন্থীয় হচ্ছে সাধু পলের ২টি চিঠি। এগুলোকে খ্রিষ্টান ভাইয়েরা ‘ঈশ্বরের বাণী’ বলে বিশ্বাস করেন। আজকে ১ম করিন্থীয় ৫ম অধ্যায়ে ১টা জিনিস দেখলাম, সাধু পল বলেছেন —

“আমার আগের চিঠিতে আমি তোমাদের লিখেছিলাম, যেন তোমরা যৌন পাপে লিপ্ত লোকেদের সঙ্গে মেলামেশা না কর৷” (বাইবেল, ১ করিন্থীয় ৫:৯)

এখানে সাধু পল আগের একটি চিঠির কথা বলেছেন। এই “আগের চিঠি” কোনটা? সেটা কি ঈশ্বরের বাণী? সেটা কোথায় আছে? ১ম করিন্থীয়ের আগে “০ করিন্থীয়” বলে তো কোনো বই বাইবেলে নেই।

খ্রিষ্টান ভাইয়েরা কি বাইবেল থেকে ঐ চিঠি দেখাতে পারবেন? যদি না পারেন, তাহলে প্রশ্ন: ঐ চিঠিটা কেন ‘ঈশ্বরের বাণী’ হবে না? সাধু পলের কোন কোন চিঠি “ঈশ্বরের বাণী” হবার যোগ্য? এখানে কী criteria অনুসরণ করা হয়?

ভালো প্রশ্ন – বাইবেলে থাকার বা না থাকার মাপকাঠি বা criteria কী?

নিঃসন্দেহে ঈসার সাহাবীগণ অন্যান্য লেখা লিখেছেন, যেমন করিন্থীয় জামাতের কাছে তিনি কমপক্ষে আরেকটি চিঠি লিখেছিলেন। এবং একটি চিঠি আছে (১ ক্লেমেন্ট) যেটা সম্ভবত ইঞ্জিলের শেষ খণ্ড (প্রকাশিত কালাম) লেখার আগেই লেখা হয়েছিল, কিন্তু সেটা ইঞ্জিলের অংশ নয়।

আসলে মাপকাঠি মূলত পাক-রূহের পরিচালনায় প্রথম জামাতের সময়ে গ্রহণযোগ্যতা, ব্যবহার ও স্বীকৃত। যেমন ১ ও ২ করিন্থীয় ব্যবহার হত, কিন্তু হযরত পৌলের অন্য চিঠির ব্যবহারের কোন উল্লেখ নেই। তার মানে প্রথম জামাত সেটা পাক-রুহে অনুপ্রাণিত কিতাব হিসেবে গ্রহণ করলেন না।

ইঞ্জিলের পরের প্রজন্ম থেকে আমাদের অনেক ঈসায়ী লেখালেখি আছে বিভিন্ন এলাকা থেকে এবং ইঞ্জিলের খণ্ড হিসেবে মথি/মার্ক/লূক/ইউহোন্না/প্রেরিত/হযরত পৌলের চিঠিগুলো গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে কোনো অমিল ছিল না। এই চিঠিগুলো সাহাবীদের সময় থেকেই শাস্ত্র হিসেবে স্বীকৃতি চিল, পাক-রুহের পরিচালনায়। যেমন হযরত পিতর লিখেছিলেন:

“মনে রেখো, মানুষকে নাজাত পাবার সুযোগ দেবার জন্য আমাদের প্রভু ধৈর্য ধরে আছেন। এই একই কথা আমাদের প্রিয় ভাই পৌলও আল্লাহর দেওয়া জ্ঞানে তোমাদের কাছে লিখেছেন। তাঁর সব চিঠিতেই তিনি এই সব বিষয় সম্বন্ধে এই একই কথা লিখে থাকেন। সেগুলোর মধ্যে অবশ্য কতগুলো বিষয় আছে যা বোঝা কঠিন। সেইজন্য যারা উম্মত হবার শিক্ষা পায় নি ও যাদের মন অস্থির তারা অন্যান্য কিতাবের মত এগুলোর মানেও ঘুরিয়ে বলে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।” (২ পিতর ৩:১৫,১৬)

“অন্যান্য কিতাবের মত” থেকে বোঝা যায় যে তখনও হযরত পৌল ‘কিতাব’ (scriptures, গ্রাফে) হিসেবে গ্রহণ করা হত ঈসায়ী সমাজে। পিতর আরও লিখেছিলেন:

“…সব কিছুর উপরে এই কথা মনে রেখো যে, কিতাবের মধ্যেকার কোন কথা নবীদের মনগড়া নয়, কারণ নবীরা তাঁদের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন নি; পাক-রূহের দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা আল্লাহর দেওয়া কথা বলেছেন। (২ পিতর ১:২০)

ঈসা মসীহের পরিকল্পনা ছিল যেন তার সাহাবীদের মাধ্যমেই তার সুসংবাদ ছড়িয়ে যায়:

“আমি যে কেবল এদের [সাহাবীদের] জন্য অনুরোধ করছি তা নয়, কিন্তু যারা এদের কথার [লগস, কালাম] মধ্য দিয়ে আমার উপর ঈমান আনবে তাদের জন্যও অনুরোধ করছি, যেন তারা সকলে এক হয়।” (ইউহোন্না ১৭:২১)

তাই মূলত ইঞ্জিলের মাপকাঠি হল যেটা পাক রুহের পরিচালনায় ঈসার সাহাবীদের কাছে থেকে আমাদেরকে দেওয়া হল সেটা ধরে রাখা। ঈসায়ী ইতিহাসে কোনো ‘বিকল্প ইঞ্জিল’ এর মত কিছু ছিল না; যেগুলো সেরকম মনে হয়, যেমন ‘গসপেল অব বার্নাবাস’ সেটা শত শত বছর পরে লেখার জিনিস। কিন্তু এহুদা, মিশর, রোম, এশিয়া, বিভিন্ন জায়গার ঈসায়ী জামাতের কাছে একই ইঞ্জিল ছিল, এবং কখনও যেমন “৩ করিন্থীয়” কোন হারানো কিতাবের স্বীকৃতির কথা আমরা পাই না। ইঞ্জিল শরিফের সীমিত কিছু খণ্ড নিয়ে কিছু বিতর্ক ছিল, যেমন প্রকাশিত কালাম, কিন্তু মূল খণ্ডগুলো নিয়ে কোনো দ্বিমত ছিল না। প্রকাশিত কালাম ২য় শতাব্দির আলোচনায় গ্রহণ করা হয়েছে কারণ সেটা ১) সাহাবী দ্বারা লিখিত, এবং ২) জামাতের প্রথম প্রজন্ম থেকেই স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Comments are closed.