বাইবেলে জান্নাতি স্ত্রী

 

“বাইবেলে জান্নাতি হুর বা স্বর্গে স্ত্রী”

খ্রীষ্টানরা বলে মুসলিমরা জান্নাতে গেলে ৭২ হুর পাবে আর খ্রীষ্টানদের ক্ষেত্রে এমন নেই তার জন্য তারা বাইবেল থেকে প্রমাণ দেখায়।

যীশু বলেন “জেনে রাখো, পুনরুত্থানের পর লোকেরা বিয়ে করে না, বা তাদের বিয়েও দেওয়া হয় না, তারা বরং স্বর্গদূতদের মতো থাকে৷” রেফারেন্স- (মথি ২২:৩০)

এটা দেখিয়ে বলে তারা স্বর্গে বা জান্নাতে তাদের কোন বিবাহ হবে না অর্থাৎ কোন হুর নেই কিন্তু এই কথাটা যীশু কেন বলেছিল? কাদের বলেছিল? কোন প্রেক্ষাপটে বলেছিল তারা তা দেখে না। এখানে একটি straw man logical fallacy দেওয়া হচ্ছে, অর্থাৎ বিপক্ষের দুর্বল একটি উদাহরণ দাঁড় করে সেটা যুক্তি খণ্ডন করছে। আসলে উনি খ্রীষ্টিয়ানদের যে যুক্তির চিত্র দেখাচ্ছে, আমি সেটা শুনিনি, এবং সেটা খ্রীষ্টিয়ানদের যুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে না। দুটি ভুল এখানে আছে:

  1. ১. যেসব খ্রীষ্টিয়ান ইসলামের জান্নাতের হুর বিষয়টা অভিযোগ করে, তাদের অভিযোগ এই না যে বেহেশতে বিবাহ নেই, বরং তাদের অভিযোগ হল যে হাদিসে হুরদের স্তন ও লজ্জাস্থানের এতো বিস্তারিত অশ্লীল বর্ণনা কেন আছে বেহেশতের লোভ বাড়ানোর জন্য, কেন একাধিক এমন সঙ্গী থাকবে, এবং যৌন-দাস থাকার ব্যাপার তাদের কাছে অরুচিকর (যেমন সেই ক্ষেত্রে বর্তমান স্ত্রীদের আমরা তুচ্ছ করব)।
  2. ২. ঈসায়ী মতবাদ এই না যে বেহেশতে বিবাহ একেবারে থাকবে না, বরং “তারা বিয়েও করবে না এবং তাদের বিয়ে দেওয়াও হবে না; তারা তখন ফেরেশতাদের মত হবে”। কেউ কেউ ব্যাখ্যা করে যে বিয়ে ও যৌন সম্পর্ক একেবারে নাই (যেমন এখানেএখানে), আবার কেউ কেউ মনে করে যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক থাকবে কিন্তু যৌন নয় (যেমন এখানে), আবার কেউ মনে করে যে যৌন সম্পর্কও থাকবে (যেমন এখানে)। কিন্তু সবাই একমত যে বেহেশতের মূল আকর্ষণ যৌন নয় বরং আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকা। ছোট বাচ্চারা যেমন চকলেট খাওয়া থেকে বড় মজা কল্পনা করতে পারে না, তেমনি বেহেশতে আল্লাহর উপস্থিতিতে থাকার আনন্দের তুলনায় যৌন সম্পর্ক তেমন কিছু না।

১। বাইবেল কিন্তু এখানে শেষ না। যীশু বলছে:

“আর যারা আমার জন্য বাড়ি ঘর, ভাই বোন, বাবা-মা, স্ত্রী, ছেলেমেয়ে অথবা জায়গা জমি ছেড়েছে, তারা তার শতগুণ বেশী পাবে এবং অনন্ত জীবনেরও অধিকারী হবে৷” (মথি ১৯:২৯)

বলা হচ্ছে যারা যীশুর জন্য বাড়িঘর ছাড়বে তারা স্বর্গে তার শতগুণ বেশি পাবে এবং স্ত্রী ছেলেমেয়ে ছাড়লে তার শতগুণ পাবে এর মানে স্ত্রী ছাড়লে যীশুর জন্য স্বর্গে তার চেয়ে শতগুণ স্ত্রী পাবে। তার মানে স্বর্গে অনেক স্ত্রী পাবে বাইবেল অনুযায়ী।

দুটি ভুল বলেছে উনি:

  1. ১. বলা হয়নি যে স্বর্গে তারা বাড়িঘর, ভাইবোন, বাবা-মা, স্ত্রী ছেলেমেয়ে পাবে, বরং বলা হয়েছে যে তারা এর “শতগুণ বেশি পাবে” এবং অনন্ত জীবনেরও অধিকারী হবে। অর্থাৎ এই জীবনে সেগুলো পাবে, এবং তার সঙ্গে অনন্ত জীবনও পাবে। সেটা মার্ক ১০:৩০-এ আরও পরিষ্কারভাবে লেখা আছে: “সে এই যুগেই তার একশো গুণ বেশী বাড়ী-ঘর, ভাই-বোন, মা, ছেলে-মেয়ে ও জায়গা-জমি পাবে এবং সংগে সংগে অত্যাচারও ভোগ করবে; আর আগামী যুগে সে অনন্ত জীবন লাভ করবে।”
  2. ১. ঈসায়ী ব্যাখ্যা একমত যে এই সব ‘একশো গুণ বেশি’ ফিরে পাওয়া আক্ষরিক না বরং ত্যাগের সান্ত্বনায় আমরা যে নতুন বন্ধু, নতুন ‘পরিবার’ পাই ঈসায়ী সমাজে।

২। আরেকটা ঘটনা বাইবেলে আছে সংক্ষেপে বলছি
স্বর্গে লোকেরা চিল্লাচিল্লি করছিল “হাল্লিলুইয়া” বলে আর সেখানে মেষপালকদের বিবাহ দিচ্ছে স্বর্গে। (রিভেলেশন ১৯:১-৭) এর মানে স্বর্গেও বিবাহ দেওয়া হবে স্ত্রীও পাবে।

ঈসায়ী ধর্মতত্ত্ব ও প্রকাশিত কালাম খণ্ড (Revelation) সম্বন্ধে তার অজ্ঞতা তিনি এখানে প্রকাশ করছে। প্রকাশিত কালাম ১৯ অধ্যায়ে যে বিয়ের ভোজের কথা আছে সেটা রুপকভাবে ঈসা মসীহ এবং তার ‘কনে’ (অর্থাৎ ঈসায়ী জামাত) এর পুনর্মিলনের কথা বোঝায়। সমালোচকের দাবি ভিত্তিহীন, হাস্যকর, এবং এর সমর্থন কোথাও নেই।

৩। যীশু আরু বলছে “সৃষ্টির শুরুতে ইশ্বর স্ত্রী ও পুরুষ সৃষ্টি করেন। আর তাই মানুষ বাবা মাকে ত্যাগ করে স্ত্রীর প্রতি আসক্ত হয়। আর ঐ দুজন একদেহে পরিণত হয়৷’ তখন তারা আর দুজন নয়, তারা এক৷ (মার্ক ১০:৬-৮) অর্থাৎ স্বামী আর স্ত্রী এক দেহ তারা দুজন নয় বরং একজন তাহলে যীশুর কথা অনুযায়ী স্বর্গে কোন বিয়ে না হলে যেভাবে মথি ২২:৩০ বলা আছে তারপরেও তারপরেও সেখানে স্ত্রী পাবে কারণ তারা এক দেহ।

উপরে আমি এই প্রসঙ্গে লিখেছি, যে বেহেশতে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকবে কি না সেটা নিয়ে ভিন্ন মতামত আছে।

৪। বাইবেল বলছে “স্বর্গে এক বিস্ময়কর সঙ্কেত দেখা গেল৷ একটি স্ত্রীলোককে দেখা গেল, সূর্য় যার বসন, যার পায়ের নীচে ছিল চাঁদ, আর বারোটি নক্ষত্রের এক মুকুট তার মাথায়৷ স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী, প্রসব বেদনায় সে চিত্‌কার করছিল৷” এভাবে আরু আছে বলা।হচ্ছে স্ত্রী লোকটি পুত্র সন্তান জন্ম দিল। (রিভেলেশন ১২:১-১৭) এখন প্রশ্ন হলো যদি স্বর্গে বিয়ে না হয় কোন স্ত্রী না পাওয়া যায় তাহলে এই নারীটি কিভাবে গর্ভবতী হয়েছিল স্বর্গে?

প্রকাশিত কালাম খণ্ড (Revelation) সম্বন্ধে আগাগোড়া কিছু না জেনে আবোলতাবোল লিখছে। প্রথমত, ১৭ অধ্যায়ের এই ঘটনা হচ্ছে বেহেশতের ‘অনন্ত-জীবনের’ ও শেষ বিচারের আগের ঘটনা, যখন শয়তানের ধ্বংস হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, প্রকাশিত কালামের ১৭ অধ্যায়ের এই ‘স্ত্রীলোক’ বোঝায় আধ্যাত্মিক অবিশ্বস্ততা (৪ আয়াত) বা ব্যাবিলন (৫ আয়াত), যেটা সমস্ত ঈসায়ী-বিরোধী সাম্রাজ্যকে বোঝায়। কেউ কখনো ব্যাখ্যা করেন নি যে সেটা একজন সাধারণ মানুষ।

এর থেকে বুঝা যায় বাইবেল অনুযায়ী স্বর্গে বিবাহ হবে পুরুষেরা স্ত্রী পাবে।

এই পুরো straw man যুক্তি থেকে কিছুই প্রমাণ হয়নি।

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Comments are closed.