ঈসা মসীহ্‌ কি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?

 

মসীহ্‌ কি সত্যিই
ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন?

জাকির নায়েকের যুক্তিখণ্ডন

 

 


সূচিপত্র

কোরআন শরীফ ও ইসলাম কী বলে?
হযরত ঈসার মৃত্যু সম্পর্কে ইসলামী মতবাদগুলো
হযরত ঈসার মৃত্যু সম্পর্কে কোরআন শরীফ
অজ্ঞান মতবাদ (Swoon Theory)

ইঞ্জিল শরীফ কী বলে?
ইঞ্জিলে ঈসার ক্রুশীয় মৃত্যুর ১২টি অনস্বীকার্য উদ্ধৃতি
ইঞ্জিলে ঈসার ক্রুশীয় মৃত্যুর ১২টি অনস্বীকার্য উদ্ধৃতি

তৌরাত ও জবুর শরীফ কী বলে?
তৌরাত শরীফে মসীহের মৃত্যুর কথা
কাফ্‌ফারা ও কোরবানী
সর্বশেষ কোরবানী
ঈসা মসীহ্‌র মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বানীগুলি
নিজের মৃত্যু সম্পর্কে ঈসা মসীহের ভবিষ্যদ্বানীগুলি

জাকির নায়েকের যুক্তিখণ্ডন
ঈসা মসীহের উম্মত তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সাক্ষী ছিলেন
একটি পুনরুত্থিত দেহ
প্রথম চিহ্ন: ধ্বংসিত বাইতুল মোকাদ্দস
দ্বিতীয় চিহ্ন: নবী ইউনুসের চিহ্ন
ঐতিহাসিক তথ্যাদি

উপসংহার


ভূমিকা

ইদানিং কালে, ওয়াহাবি পৃষ্ঠপোষকতায় PeaceTV টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে জাকির নায়েক ও আহমেদ দিদাতের ধর্মীয় মতামতগুলো ভারতীয় উপমহাদেশে প্রচার হয়েছে। এই চ্যানেলে অনেক ভাল কথা শোনা যায়—শালীনতা মেনে চলার উপদেশ, আল্লাহ্‌কে ভয় করার উপদেশ, ও ধর্মগ্রন্থ মাতৃভাষায় পড়ার উপদেশ। কিন্তু সে প্রোগ্রামগুলোর মধ্যেও কিছু ভ্রান্ত কাদিয়ানি ও ওয়াহাবী ধারণা প্রচার করা হচ্ছে, যেগুলো আল্লাহ্‌র কিতাবের আসল কথার বিপরীত।

যেমন, জাকির নায়েক ও আহমেদ দিদাত Swoon Theory (অজ্ঞান মতবাদ) নামক একটি কাদিয়ানি মতবাদ প্রচার করেন ঈসা মসীহ্‌র মৃত্যু সম্পর্কে, যেটা সর্বপ্রথমে আবিষ্কার করেছেন পশ্চিমা নাস্তিকেরা এবং মুসলমান চিন্তাধারায় প্রথম উপস্থাপন করেছেন ভ্রান্ত কাদিয়ানি দলটি। আসল পণ্ডিতরা এই Swoon Theory অবজ্ঞা করেন, এমনকি অ-খ্রীষ্টানরাও, এবং সেটা কিতাবের সত্যটা বিকৃত করে।

এই পুস্তকে আমরা কোরআন শরীফ, ইঞ্জিল শরীফ, এবং ইতিহাস দেখার চেষ্টা করব— এই প্রশ্নে, যে ঈসা মসীহ্‌ শলিবে মারা গেলেন কিনা। আমরা প্রশ্নগুলো এই ক্রমেই বিশ্লেষণ করব:


প্রথম খণ্ড

কোরআন শরীফ ও ইসলাম কী বলে?

হযরত ঈসা মসীহ্‌র মৃত্যু সম্পর্কে ইসলামী মতবাদগুলো

জাকির নায়েক অনুযায়ী, ইসলাম ও কোরআন একবাক্যে মসীহের মৃত্যু অস্বীকার করেন, কিন্তু ব্যাপারটা সেরকম নয়। ঈসা মসীহের মৃত্যু সম্পর্কে নায়েকের ব্যাখ্যা হচ্ছে Swoon Theory নামক ১৯ শতাব্দীর পশ্চিমাতে-আবিষ্কৃত একটি অস্বীকৃত মতবাদ যেটা ইসলামী চিন্তাধারায় প্রথম উপস্থাপন করেছেন কাদিয়ানিরা। বর্তমান কালের অনেক মুসলমান মনে করেন যে ইসলাম অনুযায়ী হযরত ঈসা মারা যান নি বরং দৈহিকভাবে বেহেশতে তুলে নেওয়া হয়েছিল। আসলে, প্রধান মুফাস্‌সিরুন (ইসলামি তাফসীরবিদ) যেমন আল-তাবারী ও আল-রাজি এই ধারনা ভুলপ্রমাণ করেছেন, এরা বলেন যে মসীহ্‌র দৈহিক মৃত্যু হয়েছিল, এটি একটি কোরআন-সঙ্গত ব্যাখ্যা। কোরআন বলেন:

“হে ঈসা! আমি তোমাকে মরতে (মুতাওয়াফ্‌ফিকা ) দিব এবং আমার কাছে তোমাকে তুলিয়া লইব…” (সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৫৫)

প্রাচীন মুসলমান তাফসীরকারী আল-তাবারি এই আয়াতের চারটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেন, যার মধ্যে একটা হলো ঈসা আক্ষরিক অর্থে মারা গেছেন। তিনি লেখেন:

“এখানে ব্যবহৃত মৃত্যু (ওয়াফাত) শব্দটির মানে হচ্ছে আসল, আক্ষরিক মৃত্যু, অর্থাৎ “আমি তোমাকে আক্ষরিক অর্থে মরতে দিব।”

এইভাবে তাবারি কিছু হাদিস দিয়ে এই ব্যাখ্যার সমর্থন করেন। তাবারি কিন্তু নিজে বেশী পছন্দ করেন “অনুকল্প মতবাদ” (substitution theory), অর্থাৎ যে ঈসার রূপে অন্য একজন নির্দোষ ব্যক্তি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। বিখ্যাত তাফসীরকারী ফখরুদ্দিন রাজিও স্বীকার করেন যে কোরআনের এই অনুচ্ছেদের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে ঈসার আক্ষরিক দৈহিক মৃত্যু। কিন্তু, ছয়টি কারণে তিনি তাবারির পছন্দীয় ‘অনুকল্প মতবাদ’টি ভুলপ্রমাণ করেন (পৃষ্ঠা ৬ দেখুন) এবং আজকাল এই তত্ত্বের জনপ্রিয়তা নেই। মুসলমান অধ্যাপক ডাঃ কামাল হোসেন লেখেন:

ঈসা মসীহ্‌র জায়গায় একজন অনুকল্প মারা যাওয়ার ধারণাটি কোরআনে ব্যাখ্যা করা একটি অতি অমার্জিত ব্যাখ্যা। জনগণের কাছে এদের অনেক বোঝানোর প্রয়োজন ছিল। ইদানিংকালে কোন শিক্ষিত মুসলমান এটা বিশ্বাস করেন না।

ডাঃ মাহ্‌মুদ আইয়ুব লেখেন:

উদ্দেশ্য বা আকার যেটাই হোক না কেন, এই অনুকল্প মতবাদটি চলবে না…সেটা খোদায়ী ন্যায্যতা এবং মানবজাতির সঙ্গে আল্লাহ্‌র প্রাথমিক চুক্তিকে ব্যঙ্গ করে।

তাই আমরা দেখি যে হযরত ঈসার মৃত্যু সম্বন্ধে কোন একটি প্রধান “ইসলামি” মতামত নেই। প্রাচীন মুসলিম কর্তৃপক্ষগণ স্বীকার করতেন যে ঈসার আক্ষরিক মৃত্যু এটিও কোরআনের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা। এঁদের পছন্দ মতবাদ (অনুকল্প মতবাদটি) তাদের নিজের কথা অনুযায়ী অসম্ভাবনাপূর্ণ এবং তা মুসলমান চিন্তাধারায় আজকাল অস্বীকার করা হয়।


 

কোরআন শরীফ কি সত্যিই
হযরত ঈসার মৃত্যু অস্বীকার করে?

হযরত ঈসার মৃত্যু সম্বন্ধে কোরআন শরীফে চারটি আয়াত রয়েছে। আসুন আমরা সেই আয়াতগুলো বিশ্লেষণ করে দেখি:


وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـكِن شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلاَّ اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا ﴿١٥٧﴾ بَل رَّفَعَهُ اللّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزًا حَكِيمًا

আর ‘আমরা আল্লাহ্‌র রাসূল মার্‌ইয়াম তনয় ঈসা মাসীহ্‌কে হত্যা করিয়াছি’ তাহাদের এই উক্তির জন্য। অথচ তাহারা তাহাকে হত্যা করে নাই, ক্রুশবিদ্ধও করে নাই; কিন্তু তাহাদের এইরূপ বিভ্রম হইয়াছিল। যাহারা তাহার সম্বন্ধে মতভেদ করিয়াছিল তাহারা নিশ্চয় এই সম্বন্ধে সংশয়যুক্ত ছিল; এই সম্পর্কে অনুমানের অনুসরণ ব্যতীত তাহাদের কোন জ্ঞানই ছিল না। ইহা নিশ্চিত যে, তাহারা তাহাকে হত্যা করে নাই; বরং আল্লাহ্‌ তাহাকে তাঁহার নিকট তুলিয়া লইয়াছেন এবং আল্লাহ্‌ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা নিসা ৪:১৫৭, ১৫৮)

ঈসা মসীহ্‌র ক্রুশীয় মৃত্যু অস্বীকার করার জন্য এই আয়াত প্রায় ব্যবহার করা হয়, কিন্তু লক্ষ্য করুণ যে এখানে ঈসার ক্রূশীয় মৃত্যু অস্বীকার করা হচ্ছে না বরং যে ‘তারা’, অর্থাৎ ইহুদীগণ, ঈসাকে ক্রুশে দেন নি। আসলে এই ব্যাপারে ইঞ্জিলের শিক্ষাও একই রকম। হযরত ঈসা মসীহ্‌র বিরুদ্ধে সমস্ত মিথ্যা অভিযোগ প্রথমে এনেছেন ইহুদীরা। কিন্তু, যেহেতু তখনকার প্যালেস্টাইন রোমীয় শাসনে ছিল, সেহেতু মসীহ্‌কে হত্যা করার জন্য ইহুদীদের কোন অধিকার ছিল না। মসীহ্‌ নিজেই মৃত্যুর আগে ভবিষ্যদ্বানী করেছেন ইহুদীর হাতে নয় বরং অ-ইহুদী রোমীয়দের হাতেই তার মৃত্যু ঘটবে (মথি ২০:১৯)।

সূরা নিসার পরের আয়াতে (১৫৮) বলা হয় যে আল্লাহ্‌ ঈসাকে ‘তাঁর কাছে তুলে নিয়েছেন’ (আরবী রাফা’ )। প্রশ্নটা হল, এই তুলে নেওয়ার আগে ঈসা মসীহ্‌ কি মরেছিলেন? আসুন আমরা সূরা আলে-‘ইমরানে দেখি—

إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ
হে ‘ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করিতেছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলিয়া লইতেছি’
(সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৫৫)

এখানে ‘তুলে নেওয়ার’ আগে একটি ‘কাল পূর্ণ করা’ বা ‘মৃত্যুর’ কথা বলা হয়, কারণ مُتَوَفِّيكَ মুতাওয়াফফীকা শব্দের সাধারণ অনুবাদ হচ্ছে মৃত্যু। আরবীতে ‘মৃত্যুর’ সাধারণ ‘মওত’ বা ‘ওয়াফাত’ দিয়ে অনুবাদ হয়, এবং ‘ওয়াফাত’ এখানে এবং সূরা মায়িদা ১১৭ আয়াতে ব্যবহার করা হয়েছে—

وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنتَ أَنتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ وَأَنتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ
‘যত দিন আমি তাহাদের মধ্যে ছিলাম তত দিন আমি ছিলাম তাহাদের কার্যকলাপের সাক্ষী, কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলিয়া লইলে তখন তুমিই তো ছিলে তো ছিলে তাহাদের কার্যকলাপের তত্ত্বাবধায়ক এবং তুমিই সর্ববিষয়ে সাক্ষী।’ (মায়িদা ১১৭)

এই আয়াত অনুযায়ী ঈসার ‘তুলিয়ে নেওয়া’ অর্থাৎ ‘মৃত্যু’ (تَوَفَّيْتَنِي তাওয়াফফাইতানী ) ঘটেছে তার জীবনের শেষে। বোখারী শরীফের একটি হাদীসে হযরত মুহাম্মদ (স) এই আয়াত দিয়ে নিজেকে ঈসার সঙ্গে তুলনা করেছে যে হযরত ঈসার মত তিনি সাক্ষী ছিলেন এবং তারপর মারা যাবেন (বোখারী শরীফ, কিতাবুত তাফসীর, #৪২৫৯)।

সূরা মার্‌ইয়ামে আমরা পড়ি—

وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
‘আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মলাভ করিয়াছি, যেদিন আমার মৃত্যু হইবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হইবে।’ (সূরা মার্‌ইয়াম ১৯:৩৩)

এখানে ঘটনাগুলোর ক্রম পরিষ্কার – জন্ম, মৃত্যু, এবং পুনরুত্থান। এখানে আবার ‘মৃত্যু’ নিয়ে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না (وَيَوْمَ أَمُوتُ ‘ইয়োম আল-মওত’ )। এই আয়াতের তাফসীর সৈয়দ কুতব এইভাবে লিখেছেন—

ঈসার মৃত্যু (موت মওত ) এবং পুনরুত্থান (بعث মা’থ ) সম্বন্ধে এই আয়াত পরিষ্কার – তা বিতর্ক করা বা এড়িয়ে যাওয়ার কোন জায়গা নাই।

হযরত ঈসা মসীহ্‌ যে ক্রুশে মারা গেছে তাতে অস্থির হওয়ার কিছু নাই, কারণ আলে-‘ইমরানে যেমন বলা হয়েছে—

যাহারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হইয়াছে তাহাদের কখনুই মৃত মনে করিও না, বরং তাহারা জীবিত এবং তাহাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে তাহারা জীবিকাপ্রাপ্ত। (আল-‘ইমরান ৩:১৬৯)

আসলে এই মসীহের মৃত্যু অস্বীকার করার একটি ভুল ধারণা রয়েছে যে আল্লাহ্‌—প্র্রেরিত একজন নবী বা রাসূল হত্যা করা অসম্ভব ব্যাপার। আসলে কোরআন শরীফ এর বিপরীত কথা বলে যে, অতীতে মন্দ মানুষ “নবীগণকে হত্যা করেছেন” (২:৬১, ২:৯১; ৩:২১; ৩:১১২, ইত্যাদি)। এবং মসীহ্‌র মৃত্যু আপাত দৃষ্টিতে একটি পরাজয় হলেও ঈসার পুনরুত্থানের দ্বারা প্রকাশ হয়েছে যে শেষ হিসাবে সেটা মন্দতা ও মৃত্যুর উপর একটি মহান বিজয়ই ছিল। ইচ্ছাকৃতভাবেই মসীহ্‌ জীবন সঁপে দিয়েছিলেন, এবং মৃত্যুর অনেক আগে থেকেই তিনি বলেছিলেন,

“আমি আমার প্রাণ দেব যেন তা আবার ফিরিয়ে নিতে পারি। কেউই আমার প্রাণ আমার কাছ থেকে নিয়ে যাবে না, কিন্তু আমি নিজেই তা দেব। প্রাণ দেবারও ক্ষমতা আমার আছে, আবার প্রাণ ফিরিয়ে নেবারও ক্ষমতা আমার আছে। এই দায়িত্ব আমি আমার পিতার কাছ থেকে পেয়েছি।” (ইউহোন্না ১০:১৭-১৮)

পুনরুত্থান ঘটনার কারণে ঈসার ইচ্ছাকৃত মৃত্যু স্পষ্ট বিজয় ছিল, কারণ তিনি আল্লাহ্‌র কুদরতে মৃত্যু থেকে “উত্থিত” হয়েছিল (সূরা মরিয়াম ৩৩) এবং জেরুজালেমে কমপক্ষে ৫০০জন সাক্ষীর কাছে প্রকাশিত হয়েছিল (১ করিন্থীয় ১৫:৬)।

তবু কেবলমাত্র ইহুদী-রোমীয় উভয়ই মসীহ্‌র মৃত্যু ঘটায়নি, বরং সেটা স্বয়ং আল্লাহ্‌রই পরিকল্পনা ছিল। সূরা আনফালে আমরা এর একটি সুন্দর উদাহরণ দেখি:

তোমরা তাহাদিগকে হত্যা কর নাই, আল্লাহ্‌ই তাহাদিগকে হত্যা করিয়াছেন, এবং তুমি যখন নিক্ষেপ করিয়াছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ কর নাই, আল্লাহ্‌ই নিক্ষেপ করিয়াছিলেন।”
(সূরা আনফাল ৮:১৭)

এই আয়াতে বদর যুদ্ধের বিজয়ে মুসলমান সৈন্যদের প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হচ্ছে। এরা গর্বে বলতেছিলেন যে সেই বিজয় এদেরই কীর্তি ছিল, কিন্তু এই আয়াত এদের গর্ব ধমক করে বলতেছে যে আসলে আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা ও ক্ষমতার ফলে এরা জয়ী। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা পূর্ণ করার পথে এরা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র হাতিয়ার ছিল।

একইভাবে সূরা নিসা ১৫৭ আয়াতে ইহুদীদের ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে যে এদের গর্ব ভিত্তিহীন এবং ভুল, কারণ এদের দাবিমত এরা আসলে মসীহ্‌কে হত্যা করেননি। ধারাবাহিকভাবে মসীহ্‌র মৃত্যুর একটি বর্ণনা দেওয়াতো এই আয়াতের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু পুর্ববর্তী আসমানী কিতাব থেকে আমরা জানি যে রোমীয়রা আসলে মসীহ্‌কে হত্যা করেছিলেন, আবার সেটা আল্লাহ্‌র মহাপরিকল্পনা অনুসারেই হয়েছিল।

 

অজ্ঞান মতবাদ (Swoon Theory)

ইদানিং জাকির নায়েক ও আহমেদ দিদাত মসীহের মৃত্যু নিয়ে Swoon Theory (অজ্ঞান মতবাদ) নামক একটি কাদিয়ানি মতবাদ প্রচার করে যাচ্ছেন। সেটা সর্বপ্রথমে আবিষ্কার করেছেন পশ্চিমা কিছু নাস্তিকেরা এবং সেটা মুসলমান চিন্তাধারায় প্রথম উপস্থাপন করেছেন ভ্রান্ত কাদিয়ানি দলটি। আসলে এই Swoon Theory পুরোপুরি ভুলপ্রমাণিত হয়েছে, এমনকি আজকাল অধিকাংশ খ্রীষ্টধর্ম-বিপক্ষ সমালোচকরাও Swoon Theory এর দুর্বলতা স্বীকার করে সেটা বাদ দিয়েছেন।

এই Swoon Theory এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরলে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে। এই তত্ত্ব প্রবর্তন করেছেন ইউরোপীয় লেখক Venturini প্রায় দু’শ বছর আগে (অর্থাৎ মসীহের প্রায় ১৮শ বছর পরই)। প্রথমে কিছু গ্রহণযোগ্যতা লাভ করার পরে ১৯শতকে David Strauss নামে একজন জার্মান যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্ববিদ এই মতবাদের বিপক্ষে জোরালো প্রমাণ পেশ করেন। খ্রীষ্টধর্মের শিক্ষার বিপক্ষে হলেও Strauss স্বীকার করলেন যে এই Swoon Theory অতি দুর্বল এবং অবিশ্বাসযোগ্য। তিনি বলেনঃ

অর্ধমৃত অবস্থায় কবর থেকে বেরিয়ে আসা অসুস্থ্, দুর্বল ও আহত ব্যক্তির পক্ষে নিজেকে একজন মৃত্যুঞ্জয়ী বীর ও জীবন্ত রাজার ভাব দেওয়া অসম্ভব; যে ভাব তার উম্মতদের ভবিষ্যত জীবন ও তবলিগ কাজের ভিত্তি ছিল।

প্রায় একশো বছর আগে মুসলিম জগতে এই Swoon Theory উপস্থাপন করেছেন কাদিয়ানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা গোলাম আহমেদ, এবং পাশাপাশি নিজেকে ওয়াদাকৃত “মসীহ” মাহদি এবং একজন “গৌণ নবী” হিসেবে দাবি করেন। পরে দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাদিয়ানিদের Swoon Theory প্রচার করেছেন আহমাদ দিদাত, যদিও সেখানকার অনেক সুন্নি নেতা ও প্রকাশক দিদাতের এই পন্থাকে অ-মুসলিম কাদিয়ানী মিথ্যা বলে বিরোধীতা করেছেন। দিদাত তার মাতৃভূমিতে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলার পরেও এখন তার শিষ্য জাকির নায়েকের মাধ্যমে দিদাতের মতবাদগুলো ভারতবর্ষের দ্বারে পৌঁছাচ্ছে। জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে শীর্ষস্থানীয় ইসলামি মুফতি-মওলানাগণ প্রায়ই ফতোয়া দিয়ে থাকেন, যেমন দারুল উলুম দেওবন্দ (ভারতবর্ষের শীর্ষ মাদ্রাসা)। এরা বলেন “…ভুল ধারণা ছড়িয়ে তিনি ইলম ও হিকমতের পথ থেকে সরে গেছেন এবং সরল মুসলমানদের ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”

ইমাম ফখরুদ্দিন আল-রাজি (রঃ) Substitution Theory নিয়ে যে ছয়টি জটিলতার উল্লেখ করেছেন, সেগুলো Swoon Theory এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য—

১। এই মতবাদ বিশ্বাস করতে সমস্ত ঐতিহাসিক তথ্যের সততা সন্দেহ করতে হয় এবং অবশেষে মৌলিক বিষয়েও সন্দেহ করতে হয়২। হযরত ঈসা মসীহ্‌ যেহেতু “পাক-রূহ্‌ দ্বারা শক্তিশালী” ছিলেন (মায়িদা ১১০ আয়াত) সেহেতু তিনি কেন নিজেকে রক্ষা করেননি?৩। সর্বশক্তিমান হয়ে আল্লাহ্‌ যেহেতু মুহূর্তের মধ্যে মসীহ্‌কে তুলতে সক্ষম, তাহলে এই পুরো ছলনার কী প্রয়োজন ছিল?

৪। এই মতবাদ অনুযায়ী সাক্ষীদের উপর ভুল ধারণা চাপানো হয়েছে—“শেষ হিসাবে সেটা হল জোর করে জনগণের উপর অজ্ঞতা ও প্রতারণা চাপিয়ে দেওয়া, এবং সেটাতো আল্লাহ্‌র জ্ঞানের যোগ্য নয়।”

৫। পূর্ব পশ্চিমে ঈসায়ীরা সকলে … সাক্ষ্য দিয়েছেন যে এরা তাকে ক্রুশে মরতে দেখেছেন। আমরা যদি তাদের এই সাক্ষ্য অস্বীকার করি, তাতে ঐতিহাসিক সাক্ষ্যের উপর সন্দেহ আনা হচ্ছে, এবং তাতে মুহাম্মদের নবুয়াতও সন্দেহ করতে হয় এমনকি ঈসার নবুয়াত, এদের অস্তিত্ব ও সকল নবীদের অস্তিত্ব।

ইমাম রাজির উক্ত এসব জটিলতা সেকালের Substitution Theory এবং আজকের Swoon Theory উভয়ই মতবাদ ভুলপ্রমাণ করেন, কিন্তু ইঞ্জিলের দৃষ্টিতে কোরআনের সঠিক ব্যাখ্যা করলে (যে ইহুদীরা নয় বরং রোমীয়রাই মসীহ্‌কে ক্রুশবিদ্ধ করেছেন) তাহলে এসব ব্যাখ্যার জটিলতা সুন্দরভাবে সমাধান হয়। একটি চার্ট দিয়ে কোরআনে মসীহ্‌র মৃত্যু নিয়ে এই তিনটি ব্যাখ্যার তুলনা করা যায়—

 

বিভিন্ন ব্যাখ্যার তুলনা

 

 

জটিলতাঃ

Substitution Theory

Swoon
Theory

ইহুদীরা নয়
বরং রোমীয়রা
স্পষ্ট ঐতিহাসের বিপরীত

 

   
আল্লাহ্‌কে একজন ঠক বানায়

x

x

 
পুরো ঘটনাটি অর্থহীন ও উদ্দেশ্যহীন হয়

x

x

 
শেষ হিসাবে আল্লাহ্‌ ও মসীহ্‌ দুর্বল ও পরাজিত হয়

x

x

 
পবিত্র ইঞ্জিল শরীফের সাক্ষ্যের বিপরীত

x

x

 
তৌরাত জবুর ও ইম্বিয়াতে আল্লাহ্‌র প্রকাশিত পরিকল্পনার বিপরীত

x

x

 

অবশ্যই কোরআনের এই আয়াত অস্পষ্ট, এবং দুই দিকেই কোনো নিশ্চিত ইঙ্গিত দেয় না। অস্পষ্ট আয়াতের ক্ষেত্রে অহংকারের বশে নিজের মনগড়া ব্যাখ্যা ঢুকিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে সূরা আলে-‘ইমরান ৭ আয়াতে আমাদের সতর্ক করা হয়। কিন্তু যেখানে কোরআন অস্পষ্ট হয়, সেখানে অবশ্যই কোরআনের কথামত ইঞ্জিল শরীফের পরামর্শ নেওয়া উচিত—

“আমি তোমাদের প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমরা পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর” (সূরা ইউনুস ১০:৯৪)

আমরা যদি কোরআনের এই নির্দেশমত ইঞ্জিলে দেখি, তাহলে আমরা এই ব্যাপারে খুবই স্পষ্ট উত্তর পাই। আমরা বুঝি শুধু মসীহ্‌র মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ঘটনাগুলো নয় বরং এর তাৎপর্য ও গুরুত্ব এবং কেন তা প্রথম থেকেই আল্লাহ্‌র পরিকল্পনায় ছিল।


 

দ্বিতীয় খণ্ড

ইঞ্জিল শরীফ কী বলে?

রকনুদ্দিন পিও নামক অপরিচিত একজন খ্রীষ্টান ধর্মযাজকের সাথে জাকির নায়েক এই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ করতে গিয়ে জাকির নায়েক একটি হাস্যকর দাবি করেন, তিনি বলেন ইঞ্জিলে কোথাও বলা হয় নি যে হযরত ঈসা মারা গেছেন এবং সেহেতু crucifixion (ক্রুশবিদ্ধ হওয়া— যার জন্য আসামির মৃত্যু লাগে) আসলে হয়নি। এর বদলে নায়েকের কথা অনুযায়ী একটি cruci-fiction (বানানো গল্প) ইঞ্জিল বর্ণনা করছে, যেহেতু ইঞ্জিলে বলা হয় নি যে ঈসা মারা গিয়েছিলেন।

কিন্তু ইঞ্জিলে মসীহ্‌র ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার বর্ণনা দেখলে আমরা কি পাই? আমরা তখন দেখি যে জাকির নায়েকই আমাদের fiction বলছেন কারণ তিনি ইঞ্জিলের বর্ণনার পুরোপুরি ভুলব্যাখ্যা দেন। ইঞ্জিলের সাথে যারা সুপরিচিত তাদের কাছে নায়েকের এই যুক্তি এত দুরবল যা বলার মত নয়। আমরা যদি কোরআন শরীফ দিয়ে প্রমাণ করতে চেষ্টা করি যে মুহাম্মদ (সাঃ) নিজেকে একজন নবী মনে করেননি অথবা কোরআনে বেহেশত-দোজখের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয়, তা এমন ধরণেরই যুক্তিহীন কথা হত। আমি একজন বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের কথা শুনেছি যিনি ক্লাসে বলেন কোরআন শরীফের মূল বিষয় হল হিন্দু দর্শনের পুনর্জন্ম ধারণা। এই অধ্যাপকের পদমর্যাদার কারণে ছাত্ররা কেউ তার এই পাগলামি যুক্তি চ্যালেঞ্জ করতে সাহস পায় না। জাকির নায়েকের অবস্থাটাও ঠিক সেই রকম। একজন চতুর বক্তা ও তর্কবিদ হয়ে তিনি এই রকম অসম্ভব দাবী তুলে ধরতে পারেন। তার অধিকাংশ শ্রোতারা যেহেতু সম্পূর্ণ কোরআন বা ইঞ্জিল নিজের মাতৃভাষায় বুঝে পড়ে নি সেহেতু তার কাজ আরও সহজ হয়।

এখানে পবিত্র ইঞ্জিল থেকে কিছু আয়াত দেওয়া হচ্ছে যেগুলো দিয়ে নায়েকের দাবী ভুলপ্রমাণ করা আরো সহজ হয়—

 

মসীহ্‌ যে ক্রুশে মারা গেলেন তার ১২টি অনস্বীকার্য উদ্ধৃতি

  1. “পরে ঈসার কাছে এসে সৈন্যরা তাঁকে মৃত দেখে তাঁর পা ভাঙলো না।” (ইউহোন্না ১৯:৩৩)
  2. “ঈসা আবার জোরে চিত্কার করবার পরে প্রাণত্যাগ করলেন ।” (মথি ২৭:৫০)
  3. “এর পরে ঈসা জোরে চিত্কার করে প্রাণত্যাগ করলেন ।” (মার্ক ১৫:৩৭)
  4. ফেরেশতা স্ত্রীলোকদের বললেন, “তোমরা ভয় কোরো না, কারণ আমি জানি, যাঁকে ক্রুশের উপর হত্যা করা হয়েছিল তোমরা সেই ঈসা কে খুঁজছ …তোমরা তাড়াতাড়ি গিয়ে তাঁর সাহাবীদের বল তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন ।” (মথি ২৮:৫,৭)
  5. “যে সেনাপতি ঈসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল সে ঈসাকে এইভাবে মারা যেতে দেখে বলল, “সত্যিই ইনি ইব্‌নুল্লাহ্ ছিলেন।” যেমন করে “কয়েকজন স্ত্রীলোকও দেখেছিলেন” (মার্ক ১৫:৩৯,৪০)
  6. “পীলাত আশ্চর্য হলেন যে, ঈসা এত তাড়াতাড়ি মারা গেছেন । সত্যি সত্যি ঈসার মৃত্যে হয়েছে কি না, তা সেনাপতিকে ডেকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন। যখন সেনাপতির কাছ থেকে তিনি জানতে পারলেন যে, সত্যিই তাঁর মৃত্যু হয়েছে তখন লাশটি ইউসুফকে দিলেন।” (মার্ক ১৫:৪৪-৪৫)
  7. “নাসরত গ্রামের ঈসা, যাকে ক্রুশের উপর হত্যা করা হয়েছিল, তাঁকেই তোমরা খুঁজছো? তিনি এখানে নেই, তিনি জীবিত হয়ে উঠেছেন।” (মার্ক ১৬:৬)
  8. ঈসা তাকে বললেন, “আমি তোমাকে সত্যি বলছি, তুমি আজকেই আমার সংগে জান্নাতুল-ফেরদৌসে উপস্থিত হবে।” (লূক ২৩:৪৩)
  9. “ঈসা চিৎকার করে বললেন, “পিতা, আমি তোমার হাতে আমার রূহ্‌ তুলে দিলাম।” এই কথা বলে তিনি প্রাণত্যাগ করলেন। (লূক ২৩:৪৬)
  10. “ঈসা সেই সিরকা খাওয়ার পরে বললেন, “শেষ হয়েছে।“ তারপর তিনি মাথা নীচু করে তাঁর রূহ্‌ সমর্পণ করলেন। (ইউহোন্না ১৯:৩০)
  11. “একজন সৈন্য তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে খোঁচা মারল, আর তখনই সেখান থেকে রক্ত আর পানি বের হয়ে আসল। [যেটা শুধুমাত্র মরা মানুষের শরীরে হয়] (ইউহোন্না ১৯:৩৪)
  12. মৃত্যু থেকে ঈসার জীবিত হয়ে উঠবার যে দরকার আছে, পাক-কিতাবের সেই কথা তাঁরা আগে বুঝতে পারেন নি।” (ইউহোন্না ২০:৯)

পবিত্র ইঞ্জিল যে বহুবার মসীহের ক্রুশে মৃত্যুর কথা বলে তা অনস্বীকার্য। জাকির নায়েকের দাবি বার বার ভুলপ্রমাণ হয় কিতাবের পরিষ্কার কথা দিয়ে। জাকির নায়েক বলেন যে ইঞ্জিল হযরত ঈসার মৃত্যুর কথা বলেন না। আসলে, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে মসীহের ক্রুশে মৃত্যুর কথা বলা আছে যেন তা নিয়ে কোনো সন্দেহ না থাকে।

এই চারটি দলিলের স্পষ্ট সাক্ষ্য ছাড়া, ইঞ্জিল শরীফের আরও বিভিন্ন খণ্ডে ঈসা মসীহের মৃত্যু কমপক্ষে ২৭টি অন্য জায়গায় লেখা আছে— প্রেরিত ২:২৩,২৪, ১৩:২৮, রোমীয় ৪:২৫, ৫:১০, ৬:৩,৪,৫,৯,১০; প্রথম করিন্থীয় ১১:২৬, ১৫:২১; দ্বিতীয় করিন্থীয় ৪:১০, ইফিষীয় ২:১৬; ফিলিপীয় ২:৮, ৩:১০; কলসীয় ১:২২; ইবরানী ২:৯,১৪; ৯:১৪; প্রথম পিতর ৩:১৮; প্রকাশিত কালাম ১:১৮; ইউহোন্না ১১:৫১; প্রথম পিতর ২:২৪, ইউহোন্না ১১:৫১, কলসীয় ১:২০ এবং ইবরাণী ১২:২।


 

তৃতীয় খণ্ড

 

তৌরাত ও জবুর শরীফ কী বলে?

যখন ঈসা মসীহ্‌র একজন সাহাবী তাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করলেন, তখন ঈসা মসীহ্‌ তাকে এইভাবে বললেন—

“তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতাকে ডাকলে তিনি এখনই আমাকে হাজার হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে দেবেন না? কিন্তু তাহলে পাক-কিতাবের কথা কিভাবে পূর্ণ হবে?” (মথি ২৬:৫৩)

হযরত ঈসা বলেছিলেন যে তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়া একটি পরাজয় নয় বরং তা হল দীর্ঘদিন আগে তৌরাত জবুর ও নবীদের কিতাবে প্রকাশিত আল্লাহ্‌র মহাপরিকল্পনার পূ্র্ণতা। ঈসা মসীহ্‌র শত শত বছর আগের এইসব কিতাব মসীহ্‌র মৃত্যু বিভিন্নভাবে ভবিষ্যদ্বানী করেন। একসাথে সেগুলো ক্রমে ক্রমে প্রকাশ করেন মানব জাতির জন্য আল্লাহ্‌র মহাপরিকল্পনা, বিদ্রোহী ও অবাধ্য মানব জাতিকে তার কাছে ফিরিয়ে আনার একটি পরিকল্পনা। এখন আমরা আল্লাহ্‌তা’লার এই মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে দেখব এবং মসীহ্‌র মৃত্যু নিয়ে কিছু ভবিষ্যদ্বানী দেখব।

আল্লাহর নাজিলকৃত প্রথম কিতাব তৌরাত শরিফের পয়দায়েশ খণ্ড পড়লে সেখানে দুনিয়ার সৃষ্টির বিবরণ ও আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ সৃষ্টির বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা আছে। এর পরপরই লেখা আছে কীভাবে হযরত আদম ও বিবি হাওয়া আল্লাহর হুকুম অমান্য করেন এবং তাদেরকে অবাধ্যতার শাস্তি স্বরূপ বেহেস্তের বাগান থেকে বিতাড়িত করা হয়।

তারপরেও আল্লাহ মানব জাতিকে ভুলে যান নি। তিনি হযরত ইবরাহিম নবীকে ডাক দেন এবং তাকে ওয়াদা করেন যে তার মধ্যে দিয়ে তিনি এক মহান জাতি সৃষ্টি করবেন। পয়দায়েশের ১২:১-৩ আয়াতে আল্লাহ ইবরাহিমকে বলেন যে তার বংশের মধ্যে দিয়েই দুনিয়ার সমস্ত জাতি দোয়া পাবে। আল্লাহর এই ওয়াদার প্রথম ধাপ ইবরাহিম নবীর ৪০০ বছর পরে মূসা নবীর সময়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন আল্লাহ ইবরাহিমের পুত্র ইসহাক ও ইয়াকুবের বংশধরদের মধ্যে থেকে ১২ গোষ্ঠির এক বড় জাতি গড়ে তুলেন। সেই জাতির কাছেই পরবর্তীতে আল্লাহ তার কিতাবগুলো নাজিল করতে শুরু করেন এবং তার ওয়াদা অনুযায়ী কীভাবে তার সৃষ্ট মানব জাতিকে গুনাহের হাত থেকে নাজাত করবেন তা প্রকাশ করতে থাকেন।

 

কাফ্‌ফারা ও কোরবানী

মূসা নবীর কাছে আল্লাহ্‌তা’লা প্রকাশ করেন মানুষের গুনাহ কত গুরুতর এবং তা থেকে বাঁচবার আল্লাহ্‌র ব্যবস্থা কী। তিনি সেই সময়ে গুনাহ থেকে মাফ পাবার জন্য কোরবানীর ব্যবস্থা চালু করেন। পাপের ক্ষমা পাওয়ার জন্যে কাফ্‌ফারা হিসেবে একটি পশু-কোরবানী দিতে হতো। তৌরাত শরীফের তৃত্বীয় খণ্ড লেবীয় কিতাবে বিভিন্ন গুনাহের জন্য বিভিন্ন কোরবানীর নিয়মের বর্ণনা দেওয়া আছে। প্রতিটা ক্ষেত্রেই মানুষকে তার গুনাহের মাফ পাবার জন্য গরু, ছাগল বা ভেড়াকে কোরবানী দিতে হতো।

এই কোরবানী-ব্যবস্থার প্রথম উদ্দেশ্য ছিল যেন মানুষ বুঝতে পারে তাদের গুনাহ কতো ভয়াবহ। ইঞ্জিলে যেমন বলা আছে, “গুনাহের বেতন মৃত্যু” (রোমীয় ৬:২৩)। এই কোরবানী-ব্যবস্থার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য ছিল পাপ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় বোঝানোর জন্য, অর্থাৎ গুনাহ্‌গারের পরিবর্তে নিষ্কলঙ্ক জীবের মৃত্যু, রক্তের বদলে রক্ত। ইঞ্জিল শরীফের ইবরানী কিতাবের ৯:২২ আয়াতে যেমন লেখা আছে, “মূসার শরীয়ত মতে প্রায় প্রত্যেক জিনিসই রক্তের দ্বারা পাক-সাফ করা হয় এবং রক্তপাত না হলে গুনাহের মাফ হয় না।” আমরা এই একই ধারণা পাই ইসলামি ‘আকিকা দু’য়াতে। ছেলের জন্যে দুটি ছাগল বা মেয়ের জন্যে একটি ছাগলের কোরবানী করা হয় এবং কোরবানীর আগে এই দোয়া পাঠ করা হয়—

بِسْمِ اللهِ وَبِا للهِ اَللَّهُمَّ هَاذِهِ عَقِيْقَةٌ عَنْ….بْنِ….لَحْمُهَا بِلَحْمِهِ وَدَمُهَا بِدَ مِهِ وَ عَظْمُهَا بِعَظْمِهِ وَشَعْرُهَا بِشَعْرِهِ وَ جِلْدُهَابِجِلْدِهِ اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا وَقَاءًلاِلِ مُحَمَّدٍ عَلَيْهِ وَاَلِهِ السَّلاَمُ
হে আল্লাহ্‌! এই আকিকাটি আমার এই ছেলে অমুকের…। তাহার রক্তের পরিবর্তে ইহার রক্ত, তাহার গোশতের পরিবর্তে ইহার গোশ্‌ত, তাহার হাড়ের পরিবর্তে ইহার হাড়, তাহার চামড়ার পরিবর্তে ইহার চামড়া, তাহার পশমের পরিবর্তে ইহার পশম। হে আল্লাহ, আমার পুত্রকে দোযখের আগুন হইতে ইহাকে জালিম কর। আল্লাহ্‌র নামে, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ।

উল্লেখ্য যে হযরত আদম (আঃ), নূহ্‌ (আঃ), এবং ইবরাহিম (আঃ) এদের সকলের কোরবানীর ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌ নিজেই কোরবানীর পশু জোগাড় করেছেন। কিন্তু যখন মানুষের মন কঠিন ছিল তখন আল্লাহ্‌ মানুষকে নিজের কোরবানীর পশু জোগাড় করার অনুমতি দিয়েছেন।

 

সর্বশেষ কোরবানী

মূসার কাছে দেওয়া এই পশু-কোরবানীর ব্যবস্থা যদি সর্বশেষ ব্যবস্থা হতো, তাহলে বিভিন্ন কারণে মানুষের তেমন আশা থাকতো না। সেই কোরবানীগুলোর কোন শেষ ছিল না; তা এক অশেষ চক্রের মতো সবসময় প্রত্যেক পাপের পর নতুন একটি কোরবানী দিতে হতো। বিশেষ করে গরীবদের পক্ষে এতো বেশি পশু কোরবানী দেওয়া সম্ভব ছিল না, এবং কিছু কিছু পাপের জন্যে কোন পশু-কোরবানীর কাফ্‌ফারা ছিল না।

কিন্তু আল্লাহর রহমতে এই পশু-কোরবানীর ব্যবস্থা কোন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা ছিল না—এর মূল উদ্দেশ্য আসলে ছিল ভবিষ্যতে সেই মহান চূড়ান্ত কোরবানীর প্রয়োজন বুঝিয়ে দেওয়া। বিভিন্ন আসমানী কিতাবের মূল একটি বিষয় হচ্ছে সেই ওয়াদাকৃত সর্বশেষ কোরবানীর কথা। সেই ওয়াদাকৃত কোরবানীর সম্বন্ধে যে আয়াতগুলো আছে সেগুলোতে একজন ব্যক্তির আসার কথা বলা হয় যার উপাধি “মসীহ্‌” অর্থাৎ আল্লাহ্‌র “মনোনীত”। তৌরাত, জবুর ও নবীদের কিতাবে অনেক চিহ্ন দ্বারা এই মসীহকে চিনে নেওয়া যাবে। যেমন এই মনোনীত ব্যাক্তি এক সতী মেয়ের গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন, তিনি দাউদের বংশে তার পূর্বপুরুষদের গ্রামে জন্মগ্রহণ করবেন। তিনি অনেক অলৌকিক ও মোজেজা কাজ করবেন, এমনকি তিনি মৃত লোককে জীবন ফিরিয়ে দিবেন। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হল যে নিষ্পাপ হলেও তার মিথ্যা বিচার হবে ও মৃত্যু হবে এবং নিখুঁত কোরবানী হিসেবে সমস্ত মানুষের পাপের শাস্তি তিনি বহন করে তাদের মুক্ত করবেন। এইভাবে তিনি সমস্ত পশু-কোরবানীর ব্যবস্থা পূরণ করবেন বা শেষ করবেন।

 

ঈসা মসীহ্‌র মৃত্যুর ভবিষ্যদ্বানীগুলি

নিচে আমি এই ওয়াদাকৃত মসীহ সম্বন্ধে বিভিন্ন নবীর ভবিষ্যদ্বাণীগুলো তুলে ধরছি, বিশেষ করে তার গ্রেফতার, বিচার এবং মৃত্যু নিয়ে। এগুলো সব মসীহ্‌র জন্মের শত শত বছর আগে লিখিত বিভিন্ন নবীদের কিতাব থেকে। ভবিষ্যদ্বানীর ঠিকানার সাথে সাথে ইঞ্জিলে তার পূরণের ঠিকানা দেওয়া আছে।

  1. তিনি বন্ধু দ্বারা প্রতারিত হবেন—(জবুর শরীফ ৪১:৯ এবং মথি ১০:৪)
  2. তাকে ত্রিশটি রূপার (সোনার নয়) টাকার পরিবর্তে ধরিয়ে দেওয়া হবে-(জাকারিয়া ১১:১২ এবং মথি ২৬:১৫)
  3. সেই ত্রিশটা রূপার টাকা মাবুদের ঘরে ছুড়ে ফেলা হবে-(জাকারিয়া ১১:১৩ এবং মথি ২৭:৫)
  4. সেই টাকা দিয়ে একটা কুমারের জমি কেনা হলো-(জাকারিয়া ১১:১৩ এবং মথি ২৭:৭)
  5. তার সাহাবীরা তাকে ছেড়ে চলে যাবেন (জাকারিয়া ১৩:৭ এবং মার্ক ১৪:৫০/ মথি ২৬:৩১)
  6. মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে তাকে দোষী করা হবে-(জবুর শরীফ ৩৫:১১ মথি২৬:৫৯-৬১)
  7. অভিযোগকারীদের সামনে তিনি চুপ থাকবেন-(ইশাইয়া ৫৩:৭ এবং মথি ২৭:১২-১৯)
  8. তিনি ক্ষত বিক্ষত হবেন-(ইশাইয়া ৫৩:৫ এবং মথি ২৬:২৬)
  9. তাকে থুথু দেওয়া হবে-(ইশাইয়া ৫০:৬ এবং মথি ২৬:৬৭)
  10. তাকে উপহাস করা হবে-(জবুর শরীফ ২২:৭,৮ এবং মথি ২৭:৩১)
  11. শলিব বহন করার সময় তার নিচে তিনি পড়ে যাবেন-(জবুর শরীফ ১০৯:২৪,২৫ এবং লূক ২৩:২৬ এবং ইউহোন্না ১৯:২৭)
  12. তার হাত ও পা পেরেক দিয়ে বিদ্ধ করা হবে-(জবুর শরীফ ২২:১৬ এবং লূক ২৩:৩৩)
  13. চোরদের মাঝখানে তাকে শলিবে দেওয়া হবে-(ইশাইয়া ৫৩:১২ এবং মথি ২৭:৩৮)
  14. তার নির্যাতকদের জন্যে তিনি অনুরোধ করলেন-(ইশাইয়া ৫৩:১২ এবং লূক ২৩:৩৪)
  15. হযরত ঈসার মৃত্যুর সময় তার সাহাবীরা দূরে দাঁড়িয়ে থাকবে-(জবুর শরীফ ৩৮:১১ এবং লূক ২৩:৩৪)
  16. হযরত ঈসার শলিবের পাশ দিয়ে যাওয়া লোকেরা তাকে দেখে ঠাট্টা করবে-( জবুর শরীফ ১০৯:২৫ এবং মথি ২৭:৩৯)
  17. তার মৃত্যুর সময় অনেকে তা দাঁড়িয়ে দেখবে-(জবুর শরীফ ২২:১৭ এবং লূক ২৩:৩৫)
  18. সৈন্যরা ঈসার কাপড়গুলো নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিবে- (জবুর শরীফ ২২:১৮ এবং ইউহোন্না ১৯:২৩,২৪২)
  19. শলিবের উপরে ঈসার পিপাসা পাবে-(জবুর শরীফ ৬৯:২১, এবং ইউহোন্না১৯:২৮)
  20. তাকে তেতো মেশানো সিরকা খেতে দেওয়া হবে-(জবুর শরীফ৬৯:২১ এবং মথি ২৭:৩৪)
  21. আল্লাহ তাকে পরিত্যাগ করলে তিনি চিৎকার করে উঠবেন-(জবুর শরীফ ২২:১ এবং মথি ২৭:৪৬)
  22. তার কোন হাড় ভাংগা হবে না-(জবুর শরীফ ৩৪:২০ এবং ইউহোন্না ১৯:৩৩)
  23. তার পাজরে বর্শা দিয়ে আঘাত করা হবে-(জাকারিয়া ১২:১০ এবং ইউহোন্না ২৭:৪৫)
  24. ঈসার মৃত্যুর পর দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে-( আমস ৮:৯ এবং মথি ২৭:৪৫)
  25. এক ধনী ব্যাক্তির কবরে তাকে দাফন করা হবে-(ইশাইয়া ৫৩:৯ এবং মথি ২৭:৫৭-৬০)

কোরআন শরীফ থেকে জানা যায় যে সেই ওয়াদাকৃত “মসীহ্‌” হচ্ছে মরিয়মের পুত্র নাসরত গ্রামের ঈসা। হযরত ঈসাকে ইঞ্জিল ও কোরআন এই দুই কিতাবেই “মসীহ” উপাধি দেওয়া হয়েছে আর মসীহ সম্পর্কে সকল ভবিষ্যদ্বাণী কেবলমাত্র তার জীবনেই পূর্ণ হয়েছে।

 

নিজের মৃত্যু সম্পর্কে ঈসা মসীহের ভবিষ্যদ্বাণী

তাহলে আমরা দেখতে পারি যে ঈসা নবীর মৃত্যু কোন অপ্রত্যাশিত ঘটনা ছিল না বরং যুগের পর যুগ ধরে নবীরা তার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে আসছিলেন। এমনকি নবীদের এইসব ভবিষ্যদ্বাণী ছাড়াও ঈসা নিজেও তার তিন বছরের তবলীগ জীবনে সাহাবীদের কাছে বার বার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে তাকে জেরুজালেমে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে, সেখানে কিতাবের লেখা অনুযায়ী তিনি কষ্টভোগ করবেন এবং মারা যাবেন। মসীহ্‌ ব্যক্তির পূর্ব-পরিকল্পিত মূল উদ্দেশ্য পূরণ করতেই হযরত ঈসাকে মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। আল্লাহ্‌র পরিকল্পনামত পাপের শাস্তির কাফ্‌ফারা হিসেবে নিজের জীবন দান করাই ছিল হযরত ঈসা মসীহ্‌র আগমনের প্রধান উদ্দেশ্য।

তার তবলিগ কাজের পথে বিভিন্ন সময়ে হযরত ঈসা তার সাহাবাদের বলতেন যে “আমার সময় এখনও হয়নি।” শুধুমাত্র তার গ্রেফতার ও বিচার হওয়ার আগের রাতে তিনি শেষবার বলেছেন যে “আমার সময় হয়ে গেছে।” যে সময়ের জন্যে তিনি দুনিয়াতে এসেছেন—তার মৃত্যু এবং পুনরুত্থান। নিচে ঈসা মসীহের নিজের মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্পর্কে করা কিছু ভবিষ্যদ্বাণীর ঠিকানা দেওয়া হলো—

  1. মথি ১২.৩৮-৪০
  2. মথি ১৬.২১
  3. মথি ১৭.২২,২৩
  4. মথি ২০.১৮-২৯
  5. মথি ২৬.৩২
  6. মার্ক ৯.১০
  7. লূক ৯.২২-২৭
  8. লূক ৯.৪৪ ৯। লূক ১২.৫০
  9. লূক ১৭.২৫
  10. লূক ১৮.৩১-৩৩
  11. লূক ২৪.৭
  12. লূক ২৪.২৫-২৭
  13. ইউহোন্না ২.১৯-২২
  14. ইউহোন্না ১২.৩৪
  15. ইউহোন্না ১৪-১৬ অধ্যায়।

লক্ষ্য করুন যে প্রতি বারই ঈসা মসীহ্‌ বেশ পরিষ্কার ও স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তাকে জেরুজালেমে যন্ত্রণা ভোগ ও মৃত্যু বরণ করতে হবে। সাহাবীগণ অবশ্য এই কথা শুনতে চান নি, কিন্তু মসীহ্‌ জোর করে বলতেন যে আল্লাহ্‌র পরিকল্পনা তাই।


 

চতুর্থ খণ্ড

জাকির নায়েকের যুক্তিখণ্ডন

 

ঈসা মসীহ্‌র উম্মত তার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সাক্ষী ছিলেন

হযরত ঈসা যে মারা যাননি তার এই দাবী সমর্থন করার জন্য জাকির নায়েক দাবী করেছেন যে ক্রুশবিদ্ধের ঘটনা উম্মতরা দেখেননি কারণ তার গ্রেফতার হওয়ার সময়ে তারা সবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই কথা বলে জাকির নায়েক তার মিথ্যাচার আবার প্রকাশ করেছেন। তিনি অবশ্যই ইঞ্জিলের বর্ণনা পড়েছেন এবং আরো ভাল জানেন, কিন্তু তবুও তিনি এই মিথ্যা দাবী করেন।

হ্যাঁ, ইঞ্জিল শরীফে লেখা আছে যে ঈসার গ্রেফতারের সময়ে উম্মতেরা প্রথমে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এর পরে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে কীভাবে কিছু উম্মত সৈন্যের পিছনে পিছনে বিচার পর্যন্ত গেল (মথি ২৬:৫৮, মার্ক ১৪:৫৪)। পালিয়ে যাওয়ার পরে উম্মত পিতর ঈসা মসীহের বিচারে আসছিলেন এবং তাকে দেখেছিলেন (লূক ২২:৬১; মার্ক ১৪:৬৬)। আবার ইউহোন্না ১৯:২৬-২৭ আয়াতে লেখা আছে কীভাবে ক্রুশে ঈসা মসীহ্‌ উম্মত ইউহোন্না এবং তার মায়ের সঙ্গে কথা বিনিময় করেছিলেন।

ইঞ্জিলের সুস্পষ্ট আয়াত দিয়ে ভুলপ্রমাণমূলক এমন একটি দাবী কেন করলেন নায়েক? মনে হচ্ছে জাকির নায়েক সত্যের অনুসন্ধান করছেন না বরং শুধু তর্কযুদ্ধে জিতবার চেষ্টা করছেন। তথ্য সাজানো, সত্য লুকিয়ে রাখা অথবা ঠকাতে যা লাগে তিনি তা করতে প্রস্তুত যদি তাতে তিনি জিতেন।

এই ঠকানোর ইচ্ছা আবার প্রকাশ পায় যখন নায়েক দাবী করেন যে মসীহ্‌র পা যেহেতু ভাঙ্গা হয়নি সেহেতু তিনি মারা যাননি। তার কথা অনুযায়ী, পাশাপাশি যে দু’জন অপরাধী ছিল সৈন্যরা তাদের পা ভেঙ্গেছেন যাতে তিনি তাড়াতাড়ি মারা যান, এবং যেহেতু ঈসার পা ভাঙ্গা হয়নি সেহেতু তিনি মারা যাননি। সেদিন তর্কযুদ্ধের শ্রোতারা (যাদের অধিকাংশ ইঞ্জিল পড়েনি) মনে করতেন যে নায়েকের এই প্রমাণ মজবুত। কিন্তু নায়েক গোটা আয়াত বলেন নি, কারণ তা পড়লে তার ‘প্রমাণ’ ভুলপ্রমাণ হত। আয়াতটি এইরকম—

“তখন সৈন্যরা এসে ঈসার সংগে যাদের ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল তাদের দু’জনের পা ভেঙ্গে দিলেন। পরে ঈসার কাছে এসে সৈন্যরা তাঁকে মৃত দেখে তাঁর পা ভাঙল না। কিন্তু একজন সৈন্য তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে খোঁচা মারল, আর তখনই সেখান থেকে রক্ত আর পানি বের হয়ে আসল।” (ইউহোন্না ১৯:৩২-৩৪)

এই আয়াতগুলোতে আমরা আসলে কী দেখি? জাকির নায়েকের কথার ঠিক বিপরীত কথা আমরা দেখি, যে তার দুই পা না ভাঙার কারণই ছিল যে তিনি এর মধ্যে মারা গেলেন। পাশাপাশি অপরাধীদের পা ভাঙ্গানো হল যাতে এদের মৃত্যু আরও তাড়াতাড়ি হয়, কিন্তু ঈসা মসীহ্‌র ক্ষেত্রে এরকম করবার প্রয়োজন ছিল না কারণ তিনি মারা গিয়েছিলেন। ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে অপরাধী ঠিকমত মারা না গেলে দায়িত্বশীল রোমীয় সৈন্যদের দ্বারা তাদের হত্যা করা হত।

শুধু এই নয়, কিন্তু একই অনুচ্ছেদে লেখা আছে যে সৈন্যরা মসীহের পাঁজরে খোঁচা মারল আর তখনই সেখান থেকে রক্ত আর পানি বের হয়ে আসল, তার মৃত্যুর একটি স্পষ্ট চিহ্ন, কারণ শুধুমাত্র মৃত্যুর পরেই রক্ত থেকে পানি এমনভাবে আলাদা হয়ে যায়।

 

একটি পুনরুত্থিত দেহ

ইঞ্জিলে যে ঈসার মৃত্যু বলা হয় নি এরকম মিথ্যা দাবীর পরে নায়েক আরেকটি মিথ্যা দাবী করেন যে মসীহ্‌র মৃত্যুর বিপক্ষে আরেকটি প্রমাণ হচ্ছে তার পুনরুত্থিত দেহ। তিনি ইঞ্জিল শরীফের ১ম করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ের উদ্ধৃতি দেন, যেখানে মসীহ্‌র মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কথা বলা হয়। নায়েক বলেছেন, সেখানে বলা হচ্ছে যে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের শারীরিক দেহ আছে কিন্তু মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হওয়ার পরে আমরা আত্মিক রূহ ধারন করি এবং শারীরিক দেহ আর থাকে না। আর নায়েক বলেন, যেহেতু ঈসা মসীহ্‌র পুনরুত্থানের পরে তার শারীরিক দেহ ছিল, তিনি অবশ্যই মারা যান নি।

আবারও নায়েক ইচ্ছাকৃতভাবে দর্শকদের ভুলিয়ে দিচ্ছেন। সেই ১ম করিন্থীয় ১৫ অধ্যায়ে প্রথমতঃ জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, “মৃতদের কেমন করে জীবিত করে তোলা হবে? কেমন শরীর নিয়েই বা তারা উঠে?” তারপর ৪২-৪৪ আয়াতে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়—

মৃতদের জীবিত হয়ে ওঠাও ঠিক সেই রকম। লাশ দাফন করলে পর তা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু সেই লাশ এমন অবস্থায় জীবিত করে তোলা হবে যা আর কখনও নষ্ট হবে না। তা অসম্মানের সংগে মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু সম্মানের সংগে উঠানো হবে; দুর্বল অবস্থায় মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু শক্তিতে উঠানো হবে; সাধারণ শরীর মাটিতে দেওয়া হয়, কিন্তু অসাধারণ শরীর উঠানো হবে।” (১ করিন্থীয় ১৫:৪২-৪৪)

এই অধ্যায়ের মূল বিষয় অবশ্যই নায়েকের দাবীমত নয়, যে মারা যাবার পরে আমরা দেহ ছাড়া বেহেশতে ঘোরাফেরা করি। কোন আসমানি কিতাব এমন ভুল শিক্ষা দেন না, বরং সবাই একমত হয়ে বলেন যে বেহেশতে আমাদের নতুন দেহ থাকবে। উপরোক্ত অনুচ্ছেদে দুই ধরণের দেহের কথা বলা হচ্ছে— মৃত্যুর আগে যে সাধারণ দেহ এবং মৃত্যুর পরে যে রূহানিক দেহ। উপরের আয়াতগুলোতে যেমন বলা হয়, “সাধারণ শরীর”টা অস্থায়ী এবং দুর্বল, কিন্তু পুনরুত্থিত দেহ হবে রূহানিক যা হবে চিরস্থায়ী, সম্মানিত এবং শক্তিশালী।

ইঞ্জিল পড়লে বোঝা যায় হযরত ঈসা মসীহ্‌ যে উম্মতদের সামনে রুটি ও মাছ খেতেন এর লক্ষ্য তার মৃত্যুর ভুলপ্রমাণ করা নয় বরং এই প্রমাণ করতেন যে তিনি কোন ভূত নয়, কারণ এরা জানতেন যে তিনি মারা গেছেন এবং ভেবেছিলেন তিনি একজন ভূত হয়ে ফিরে আসলেন।

 

প্রথম চিহ্ন: বিধ্বস্ত বাইতুল মোকাদ্দস

তার মৃত্যু নিয়ে ঈসা মসীহ্‌ দু’টি চিহ্নের কথা বলেছেন, যার মধ্যে একটি নায়েক বলেন এবং একটি তিনি লুকিয়ে রাখেন। যে চিহ্ন তিনি অবহেলা করেন সেটা পাওয়া যায় ইউহোন্না ২:১৯-২২ আয়াতে যেখানে ইহুদী নেতাগণ মসীহ্‌র সঙ্গে তর্ক করছেন জেরুজালেমের বাইতুল মোকাদ্দসে। তার শিক্ষা এবং কর্তৃত্বের জন্যে প্রমাণ চাওয়ায় ইহুদীগণকে হযরত ঈসা বলেন—

জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “আল্লাহ্‌র ঘর আপনারা ভেংগে ফেলুন, তিন দিনের মধ্যে আবার আমি তা উঠাব।” এই কথা শুনে ইহুদী নেতারা তাঁকে বললেন, “এই এবাদত-খানাটি তৈরী করতে ছেচল্লিশ বছর লেগেছিল, আর তুমি কি তিন দিনের মধ্যে এটা উঠাবে?” ঈসা কিন্তু আল্লাহ্‌র ঘর বলতে নিজের শরীরের কথাই বলছিলেন। তাই ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠলে পর তাঁর সাহাবীদের মনে পড়ল যে, তিনি ঐ কথাই বলেছিলেন। তখন সাহাবীরা পাক-কিতাবের কথায় এবং ঈসা যে কথা বলেছিলেন তাতে বিশ্বাস করলেন। (ইউহোন্না ২:১৯-২২)

এই অনুচ্ছেদে নিজের দেহকে এবাদতখানার সঙ্গে তুলনা করে ঈসা মসীহ্‌ আবার তার মৃত্যুর কথা বলছেন।

 

দ্বিতীয় চিহ্ন: নবী ইউনুসের চিহ্ন

মসীহ্‌র উক্ত দ্বিতীয় চিহ্নটি, “হযরত ইউনুসের চিহ্ন” জাকির নায়েক ব্যবহার করেছেন। সেখানে ইহুদী আলেমগণ আবার হযরত ঈসার কাছে প্রমাণ বা অলৌকিক চিহ্ন দাবী করলেন যে তার সত্যিকারের কর্তৃত্ব ছিল—

এর পরে কয়েকজন আলেম ও ফরীশী ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আমরা আপনার কাছ থেকে একটা চিহ্ন দেখতে চাই।” ঈসা তাঁদের বললেন, “এই কালের দুষ্ট ও বেঈমান লোকেরা চিহ্নের খোঁজ করেন, কিন্তু ইউনুস নবীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্নই তাদের দেখানো হবে না। ইউনুস যেমন সেই মাছের পেটে তিন দিন ও তিন রাত ছিলেন ইব্‌নে-আদমও তেমনি তিন দিন ও তিন রাত মাটির নীচে থাকবেন।” (মথি ১২:৩৮-৪০)

জাকির নায়েক অনুযায়ী, যেহেতু নবী ইউনুস জীবিত অবস্থায় মাছের পেটে ছিল সেহেতু ঈসাও অবশ্যই জীবিত ছিল মাটির নীচে, অর্থাৎ কবরে। কিন্তু মসীহ্‌ এখানে সে কথা বলতে চান নি। তিনি এই ঘটনার ঠিক আগে বলেছেন যে তিনি জেরুজালেমে গিয়ে কষ্টভোগ করে মারা যাবেন। হযরত ঈসার এই তুলনার মধ্যেই তিনি নির্দেশ করেছেন কোন্‌ দিক দিয়ে এদের দু’জনের মিল আছ, যে এরা দু’জনই তিন দিন ধরে একটি গোপন জায়গা থেকে আবার অলৌকিকভাবে জীবিত অবস্থায় ফিরে আসবেন। তৃতীয় দিনে তিনি যে মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়ে উঠবে সেটাই মসীহ্‌ হবার চিহ্ন হবে। মসীহ্‌ সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন কোন্‌ দিক দিয়ে এদের দু’জনের মিল আছে, এবং তার মধ্যে কোন্‌ অবস্থায় এরা কবরে ছিল তা প্রসঙ্গের বাইরে পরে। উল্লেখ্য যে নবী ইউনুস তার সেই মাছের পেটে থাকার সম্বন্ধে বললেন যে তিনি তখন שְׁאוֹל “শেয়োলে” ছিলেন (যার অর্থ “মাটির নীচে” বা “কবরে”), যার কারণে কিছু কিছু তাফসীরকারী ব্যাখ্যা করেছেন যে তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং আবার পুনরুত্থিত হয়েছিলেন।

আমরা যদি মসীহ্‌র প্রতিটি তুলনার ক্ষেত্রে নায়েকের এই আক্ষরিক যুক্তি ধরে নিই, তাহলে আরেকটি ক্ষেত্রে দেখুন কেমন হয়। হযরত ঈসা বললেন—

“মূসা নবী যেমন মরুভূমিতে সেই সাপকে উঁচুতে তুলেছিলেন তেমনি ইব্‌নে-আদমকেও উঁচুতে তুলতে হবে, যেন যে কেউ তাঁর উপর ঈমান আনে সে অনন্ত জীবন পায়।” (ইউহোন্না ৩:১৪-১৫)

এখানে নায়েকের যুক্তি ধরে নিলে বলতে হয় যে হযরত ঈসা ক্রুশবিদ্ধ ঘটনার আগে ও পরে মৃত ছিল কারণ সেই ব্রোঞ্জ সাপও মৃত ছিল ‘উঁচুতে তোলার’ আগে ও পরে!

 

ঐতিহাসিক দলীল

হয়ত মসীহের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ব্যপারে মুসলমান-খ্রীষ্টান উভয়ই নিরপেক্ষ নয়, তাই আসুন অবিশ্বাসী স্কোলারদের কথা দেখি। ঐতিহাসিক দলীল কী বলে? অবিশ্বাসী সমালোচকরা ঈসা মসীহ্‌র পুনরুত্থান অস্বীকার করতে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু কোন আধুনিক ইতিহাসবিদ অস্বীকার করে না যে তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। কেন? কারণ অতিরিক্ত ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে।

ইঞ্জিল শরীফের সাক্ষ্যের বাইরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলীলে ঈসার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা লেখা আছে। দু’জন রোমীয় অখ্রীষ্টান ইতিহাসলেখক Cornelius Tacitus তার Annals গ্রন্থে লেখেন—

“খ্রীষ্ট শাসনকর্তা পন্তীয় পীলাতের হাতে মৃত্যু বরণ করলেন…” (Annals xv.44)

সামোসাতা শহরের ইতিহাসলেখক Lucian, যিনি খ্রীষ্টধর্মের বিপক্ষে ছিলেন, তিনি ঈসাকে বলেন—

“…যে ব্যক্তি প্যালেষ্টাইনে ক্রুশবিদ্ধ হয়েছেন”

ইহুদী তালমুদ গ্রন্থেও ঈসার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা লেখা আছে—

“উদ্ধার-ঈদের আগের রাতে ঈসার ফাঁসি [বা হত্যা] হল…যেহেতু তার পক্ষে কোন প্রমাণ আনা হয়নি উদ্ধার-ঈদের আগের রাতে তার ফাঁসি হল।”
(Talmud b. Sanhedrin 43a)

রোমীয় জল্লাদের পক্ষে ঈসাকে ভুল করে বাঁচিয়ে দেওয়া অসম্ভব ছিল, কারণ এমন ভুলের শাস্তি রোমীয় বিধান অনুযায়ী মৃত্যু, এবং এরা ক্রুশবিদ্ধ করাতে বিশেষজ্ঞ ছিল।

 

উপসংহার

তাহলে নায়েকের এই ইঞ্জিল থেকে ক্রুশবিদ্ধ ভুলপ্রমাণ করার প্রচেষ্টা আমরা কেমন দৃষ্টিতে দেখব? যে কেউ ইঞ্জিলের সাথে অল্প পরিচিত তারা জানেন যে নায়েক একটি অসম্ভব উদ্যোগ নিয়েছেন। অসম্ভব, যদি তিনি মিথ্যা, চালাকি এবং ছলনা ব্যবহার না করেন। কিন্তু সেটা নায়েক করেছেন, উপরে যেমন করে বোঝা যায়। আসলে, ইঞ্জিলের একান্ত সাক্ষ্য হল যে সত্যি ঈসা ক্রুশে মারা গেলেন এবং পুনরুত্থিত হলেন এবং সেটা মানব জাতির মুক্তির জন্য আল্লাহ্‌র পরিকল্পনামত হলেন। সেই পরিকল্পনা সমস্ত কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে।

* * *
  1. আবু জাফ’র মুহাম্মদ ইবন জারির আল-তাবারি, তফসির আল-তাবারি: জামি’ আল-বায়ান ‘আন তা’ওয়িল আয় আল-কোরআন, সালাহ্‌ ‘আব্দ আল-ফাত্তাহ্‌ আল-খালিদী (সম্পঃ) দামেষ্ক: দার-আল-ক্বালাম, ১৯৯৭।
  2. মুহাম্মদ ফখ্‌র আল—দিন ইবন আল-আল্লামা দিয়া আল-দিন ‘উমার আল-রাজি, তফসির আল-ফখ্‌র আল-রাজি, আল-মুশতাহির বিল-তফসীর আল-কাবির ওয়া-মাফাতিহ্‌ আল-ঘাইব, খলিল মুহ্‌য়ি আল-দিন আল-মাইস (সম্পঃ) বৈরুৎ; দার-আল-ফিক্‌র, ১৯৯০।
  3. City of Wrong, Kenneth Cragg, London, 1960, P. 222.
  4. আইয়ুব মাহ্‌মুদ এম, “Towards an Islamic Christology II”, The Muslim World, Vol. LXX, April 1980, No. 2, P. 104.
  5. David Friedrich Strauss, The Life of Jesus for the People, 2nd ed. Vol. I. London: Williams and Norgate, 1879, p.412.
  6. দারুল ইফতা, দারুল উলুম দেওবন্দ-ভারত প্রশ্ন #১১০,
    (http://darulifta-deoband.org/viewfatwa.jsp?ID=110)
  7. ইমাম ফখরুদ্দিন আল-রাজি, তাফসিরুল কাবির, সূরা আলে-‘ইমরান ৫৫ আয়াতের তাফসীর
  8. আল-হাজ্জ মাওলানা ফজলুল করিম, এম.এ.বি.এল., শরিয়ত শিক্ষা (আজিফা খাতুন, ১৮ বাকশি বাজার রোড, ঢাকা, পৃষ্ঠা ১৫৩)

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *