দা ভিঞ্চি কোড ও আসল ইতিহাস

দুঃখের ব্যাপার হল, অনেকে বুঝতে পারেনা যে, দা ভিঞ্চি কোড শুধুই একটি কাল্পনিক গল্প যা মানুষকে বিনোদন দিতে বই বিক্রি করতে লিখা হয়েছেএটি ইতিহাস নয়লেখক যাই দাবি করুক, এটি প্রচুর ঐতিহাসিক ভুল তথ্যে ভরাএমনকি ঈসায়ী বিশ্বাসের তীব্র প্রতিপক্ষ পযর্ন্ত লিখতে বাধ্য হন:

দা ভিঞ্চি কোড অবশ্যই প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত বানানো, উদ্ভাবিত এবং নির্মিত কল্পসাহিত্য”।

যদি বইটি পড়ে থাকেন অথবা চলচ্চিত্রটি দেখা হয়ে থাকে তাহলে বইটির কোন অংশ বাস্তব আর কোন অংশ কাল্পনিক তা ভালোভাবে এখানে জানতে পারবেন

সূচিপত্র

ঈসা কি বিবাহিত ছিলেন?

‘বিরোধসমূহ’ বুঝা

বিখ্যাত বাইবেল বিশেষজ্ঞ ড. গ্লীসোন আর্চার (পিএইচডি হার্ভার্ড) তাঁর সারা জীবনের কিতাবুল মোকাদ্দস অধ্যয়নের বিষয়টি নিম্নোক্ত ভাবে সংক্ষেপ করেছেন:

হার্ভার্ডের একজন আন্ডার গ্রাজুয়েট ছাত্র হিসাবে এপোলোজেটিকস ও পাককিতাবীয় প্রমাণাদির দ্বারা আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম; আর তাই আমি পাককিতাবীয় ভাষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞান অর্জনের জন্য পরিশ্রম করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য পড়ে আমি গ্রিক, ল্যাটিন ও সেইসঙ্গে ফরাসি ও জার্মান ভাষাতেও প্রশিক্ষণ নিলাম। সেমিনারিতে আমার প্রধান বিষয় ছিল হিব্রু, অরামীয় ও আরবি; আর স্নাতোকোত্তর বছরগুলিতে আমি সিরীয় ও অক্কাদীয় ভাষা এবং এই প্রত্যেকটি বিষয়গুলির উপর নৈর্বাচনিক পাঠের শিক্ষাদানের সঙ্গেও যুক্ত হলাম। আগে, হাইস্কুলে আমার শেষ দুই বছরে মধ্যরাজ্য মিসরীয় স্টাডিস বিষয়ে আমার বিশেষ আগ্রহ দেখা দিয়েছিল এবং পরে এই ক্ষেত্রে শিক্ষা দেওয়ার সময় এই আগ্রহ আরো বেড়ে গিয়েছিল। শিকাগোর ওরিয়েন্টাল ইসস্টিটিউটে আমি অষ্টাদশ শতকের রাজবংশীয় ঐতিহাসিক দলিলপত্র সম্বন্ধে বিশেষ অধ্যয়ন করি এবং সেইসঙ্গে কপ্টিক ও সুমেরীয় ভাষাগুলোও অধ্যয়ন করি। প্রাচীন ভাষায় এই অধ্যয়ন কাজের সঙ্গে আমি ল’-স্কুলের একটি পূর্ণ কোর্সের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম, এবং তার পর ১৯৩৯ সালে ম্যাসাচুসেট্স বার-এ ভর্তি হই। এতে আমি আইনী সাক্ষ্য-প্রমাণের ক্ষেত্রে একটি সামগ্রিক ভিত্তি লাভ করি।

আমি একের পর এক আপাত এই অসঙ্গতিগুলি নিয়ে কাজ করে এবং বাইবেলের তথ্যাদি ও ভাষিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, বা বৈজ্ঞানিক তথাকথিত অসঙ্গতি সম্বন্ধে গবেষণা করে দেখেছি, পাক-কিতাবের নির্ভরযোগ্যতার উপর আমার আস্থা শুধু বাড়তে থাকে। এই-ও পাই, যে পাক-কিতাবের বিরুদ্ধে মানব জাতির প্রতিটি অসঙ্গতির অভিযোগ স্বয়ং পাককিতাবীয় কথা অথবা বস্তুনিষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য দিয়ে পুরোপুরি সমাধান করা হয়েছে। তার দ্বারা পাককিতাব সম্বন্ধে আমার আস্থা ও বিশ্বাস বারবার নিশ্চিত ও দৃঢ় হয়েছে। প্রাচীন মিশরীয়, সুমেরীয়, বা অক্কাদীয় দলীল থেকে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সবই কিতাবুল মোকাদ্দসের তথ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ; আর তাই নাস্তিক বা সমালোচকদের বিদ্বেষমূলক যুক্তি বা দন্দ্বাহ্বান (চ্যালেঞ্জ) থেকে প্রশিক্ষিত বাইবেলের শিক্ষার্থীর কোন ভয় পাওয়া উচিত না।
এই বইয়ের পিছন দিকে এই উৎসগুলির একটি পূর্ণ তালিকা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ের উপর আরো বিস্তারিত আলোচনার জন্য শেষ দিকে সহায়ক গ্রন্থাবলীর একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে।

পাককিতাব সম্পর্কিত সমালোচকদের ভুল ব্যাখ্যাগুলি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়:

মূল ভাষাগুলি অগ্রাহ্য করা- আমি এই পর্যন্ত একজন-ও মুসলমান বাইবেল-সমালোচককে পাই নি যিনি বাইবেলের মূল ভাষাগুলি (হিব্রু ও গ্রিক) ভালভাবে পড়তে জানেন, যদিও বিশ্বে লক্ষ লক্ষ বাইবেল শিক্ষার্থী সেগুলি পড়তে জানেন। তাদের বিরোধগুলি প্রায়ই ইংরেজি শব্দের অর্থভিত্তিক, যেমন এরা দাবি করেন যে יום এর অর্থ কেবল ‘দিন’, অথবা ארץ এর অর্থ কেবল গোলক (গেস্নাব), অথবা גּרה עלה এর অর্থ কেবল rumination (জাবর কাটা) কিন্তু refection নয়।

পাককিতাবের সঙ্গে অপরিচিতি- যারা পুরো বাইবেলটি পড়েন নি কেবল তাদের কাছেই অনেক অসঙ্গতি দেখা দেয়। আমি একজন আগ্রহী বাইবেল-সমালোচকের সঙ্গে আলাপ করেছি যিনি যথেষ্ট পরিশ্রম করে পাককিতাব সম্পর্কিত অনেক অসঙ্গতি মুখস্থ করেছেন, কিন্তু তিনি স্বীকার করলেন যে তিনি বাইবেল বা কোরআন কখনও পড়েন নি।

কথিত “অসঙ্গতিসমূহ” যেগুলো কোরআন ও হাদিসেও দেখা যায়- সমালোচকরা যখন নবীদের ৯৫০-বছর বয়সের বর্ণনা, ২৪-ঘণ্টার সৃষ্টির দিনগুলি, ইউসার পক্ষে সূর্যের “স্থির হয়ে দাঁড়ানো’, অথবা আলোর আগেই গাছ-পালার সৃষ্টি বিষয়ে বাইবেলকে আক্রমণ করে, এরা ভুলে যায় যে এইসব বর্ণনা কোরআন শরীফ ও সহীহ হাদিসেও আছে।

অস্বীকৃত অনুলেখকের ভ্রম থেকে যুক্তি দেখানো- ঐতিহাসিক তথ্যাদিতে পাওয়া যায় যে, কোরআন শরীফ ও কিতাবুল মোকাদ্দস উভয় গ্রন্থেরই কিছু পাণ্ডুলিপিতে কপি করার সময় কিছু কিছু ছোট-খাঁটো ভুল হয়েছে, এবং তার পরিমাণ সমগ্র গ্রন্থের ১% এরও কম। এগুলি চিহ্নিত ও দূরীকরণের জন্য একটি বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে, যার নাম textual criticism। বিশেষ করে সাংখ্যিক অসাঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে, যে সংখ্যাগুলি দীর্ঘদিন ধরে অনুলেখকের ভ্রম বলে প্রমাণীত বলে চলে আসছে সমালোচকরা সেগুলি অনুলিপিকারদের ভ্রমগুলি থেকে ব্যবহার করে থাকেন। এই ধরনের অনুলেখকের ভ্রম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানার জন্য অনুলিপিকারদের ভ্রম প্রবন্ধটি দেখুন।

ভ্রমপ্রবণ মানুষের উদ্ধৃতিকে খোদায়ী উক্তি হিসাবে ভুলভাবে পড়া- বাইবেল ও কোরআন উভয় কিতাবেই অন্য মানুষের উক্তি দেয় যার মধ্যে মিথ্যা থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, “উজায়ের হচ্ছেন আল্লাহ্‌র পুত্র”, কিন্তু এটি নিতান্তই একটি উদ্ধৃতিমাত্র। বাইবেলের সমালোচকরা প্রায়ই এই ধরণের উদ্ধৃতি (যেমন নহিমীয়, আইয়ুব, ও হান্নার কথা) তোলে ভুলভাবে ব্যবহার করেন।

অপরিণত বিচার- কেপলার যখন তাঁর প্রকৃতি বিষয়ক অধ্যয়নে একটি আপাত অসঙ্গতি দেখতেন তখন তিনি প্রকৃতির নিয়ম বাদ দিতেন না; তিনি প্রকৃতির উপর আস্থা রাখতেন। কয়েক দশক আগেও বিজ্ঞানীরা বলতেন যে, মৌমাছি (bumble bee) এর পক্ষে ওড়া অসম্ভব হবে; কিন্তু তারা তখন একসঙ্গে পদার্থবিদ্যাকে ত্যাগ করেন নি, তারা বরং স্বীকার করেন যে, উত্তরটি তাদের জানা নেই , এবং পদার্থ বিদ্যার উপর তাদের বিশ্বাস অব্যাহত রেখেছিলেন।

ব্যাপকতর প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া বা লুকিয়ে রাখা – এটা সমালোচকদের একটা প্রচলিত উপায়- তাদের মতামতের বিপরীতে নিরানব্বইটি অনুচ্ছেদ অবহেলা করে তারা বাছাইকরা দু’একটি আয়াতের ভুলব্যাখ্যা দিয়ে নিজেদের ভ্রান্ত ধারণাটি উপস্থাপন করেন।

ইচ্ছাকৃত মিথ্যা- সমালোচকরা যেভাবে বলেছেন, সেভাবে কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য বলবে না যে, বাইবেলের বিপক্ষে পিঁপড়াদের ‘শাসনকর্তা’ বা ‘প্রধানকর্মী’ (foreman) আছে।

বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দেখুন:

<?…

বিসমিল্লাহ্‌র অর্থ এবং উৎস

This beautiful phrase declares God’s primary attribute– His great Mercy or Grace. God’s Mercy has been expressed in his provision of salvation by his own righteousness for mankind.

The above phrase is commonly known as the bismillah because in the Arabic it reads bismillah-ir-rahman-ir-rahim.…

বিজ্ঞান, কিতাব ও বিশ্বাস

আল্লাহ্‌র কালাম ও বিজ্ঞানের যথার্থ সম্পর্ক

সূচিপত্র:

প্রথম খণ্ড : বুকাইলিবাদের পরিচয়

বুকাইলিবাদ সম্পর্কে বিভিন্ন মুসলিম বুদ্ধিজীবীর ধারণা

বুকাইলিবাদের সমস্যাগুলি

বুকাইলিবাদের ইতিহাস

বেদ ও অন্যান্য ধর্মশাস্ত্রে “বৈজ্ঞানিক বিস্ময়”

কিছু “বৈজ্ঞানিক বিস্ময়’-এর বিশ্লেষণ

-বৈজ্ঞানিক বিস্ময় #১ : চাঁদের প্রতিফলিত আলো

-বৈজ্ঞানিক বিস্ময় # ২ : মাতৃগর্ভে ভ্রূণের পর্যায়সমূহ

-বৈজ্ঞানিক বিস্ময় # ৩ : পিপড়াদের মধ্যে যোগাযোগ

দ্বিতীয় খণ্ড : কিতাব ও বিজ্ঞানের সমন্বয়

সৃষ্টি ও বিজ্ঞান

তৌরাতে সৃষ্টির ধাপগুলো

সূর্যের পূর্বে উদ্ভিদজগত সৃষ্টি?

সমালোচকদের দাবির মূল সমস্যা

সমালোচকদের দাবির মূল সমস্যা

ইদানিং জাকির নায়েক ও আহমেদ দিদাতের মত কিছু টেলিভিশন প্রচারকগণ প্রচার করে যাচ্ছে যে ইঞ্জিল শরীফ পুরোপুরি পরিবর্তন হয়েছে ও ঈসা মসীহ্‌ আসলে কখনও ক্রুশবিদ্ধ হননি। এই ধরনের শিক্ষা দিয়ে এরা কোরআন, কোরআনের শ্রেষ্ঠ তাফসীরকারী, ইতিহাস ও যুক্তির বিপরীত কথা বলে, যেমন করে এই বইতে প্রমাণ করা হয়। এদের ভুলব্যাখ্যার মূল সমস্যা হল যে তাতে সেই মহান নবী ঈসা মসীহের জীবন অর্থহীন ও নিষ্ফল হয়ে যায়, তাতে ঈসার প্রিয় সাহাবীগণকে অধার্মিক ও অসৎ বলতে হয়, এবং শেষে আল্লাহ্‌তা’লাকে দুর্বল ও বলহীন বলতে হয় কারণ তাঁর পাঠানো নবীর কাজ তিনি সফল করতে পারেননি।

সমস্যা #১: তাদের কথায় হযরত ঈসাকে অপমান করা হয়

সকল মুসলমান ও ঈসায়ী বলেন যে ঈসা মসীহ্‌ ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠ নবী, মানব ইতিহাসের একজন মহৎ ব্যক্তি। কিন্তু এইসব প্রচারক, যারা দাবী করেন যে তারা ঈসা মসীহ্‌কে বিশ্বাস করেন, তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী ঈসা নবীর জীবন ও কাজ সব দিক দিয়ে পুরোপুরি নিষ্ফল ছিল। মসীহ্‌ সম্পর্কে তাদের ধারণাকে “নিষ্ফল নবী মতবাদ” বলা যায়। অন্য আরো ছোট নবীরা, যেমন হযরত দাউদ (আঃ), হযরত ইশাইয়া (আঃ), হযরত ইউনুস (আঃ) ও হযরত ইয়াকুব (আঃ) সফল হল, কিন্তু এদের কথা বিশ্বাস করলে, হযরত ঈসা একটি স্থায়ী বিশ্বাসী দল প্রতিষ্ঠিত করতে ও স্থায়ী কিতাব রাখতে সফল হননি।

সমস্যা #২: তাদের কথায় হযরত ঈসার সাহাবীদের অপমান করা হয়

শোনা যায় যে হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর সাহাবা তাঁকে নিয়ে কোন মিথ্যা বলতে পারেনি যেহেটু এরা আল্লাহ্‌র একজন রাসূলের কাছে ছিল। কোরআন শরীফে ঈসা মসীহের এই সাহাবীদের ধার্মিক “আত্মসমর্পনকারী” বলা হয়। তাহলে কেমন করে বলা যায় যে এরা মসীহ্‌র বাণী বিকৃত করেছিলেন এবং হযরত ঈসার বিষয় মিথ্যা বলেছিলেন?…