মথি ৩:১৩-১৪ – তার তরিকাবন্দীর আগে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ঈসার সাক্ষাৎ হয়েছিলে?

মথি ৩:১৩-১৪—“তার তরিকাবন্দীর আগে ইয়াহিয়ার সঙ্গে ঈসার সাক্ষাৎ হয়েছিলে নাকি হয়নি (ইউহোন্না ১:৩৩)?”

ঈসার তরিকাবন্দী পর্যন্ত, ইয়াহিয়া ঈসাকে চিনতেন শুধু অন্য শহরের একজন দূর-সম্পর্কের আত্মীয় হিসেবে। তিনি হয়ত চিন্তা করতেন যে তিনি মসীহ্, কিন্তু পাক-রূহ্ যখন একটি কবুতরের মত হয়ে ঈসার উপর নেমে আসলেন তিনি স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলেন যে ঈসা সত্যিই আল্লাহ্‌র সেই ওয়াদাকৃত মসীহ্।

মথি ১:১৬ – মরিয়মের পিতা কি ইয়াকুব নাকি আলী?

মথি ১:১৬—“ঈসার মা মরিয়মের স্বামী ইউসুফের পিতা কি ইয়াকুব (মথি ১:১৬) নাকি আলী (লূক ৩:২৩)?

একটি সাধারণ ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মথিতে ঈসার আইনগত বংশতালিকা তার পিতা ইউসুফের মাধ্যমে, এবং লূকে ঈসার জন্মগত বংশতালিকা তার মা মরিয়মের মাধ্যমে আছে। তাহলে একটি স্বাভাবিক প্রশ্ন হল, “তাহলে কেন লূকের বংশতালিকায় ‘মরিয়ম আলীর ছেলে’ লেখা হয়নি বরং লেখা আছে ‘ ইউসুফ আলীর ছেলে’?”।…

দানিয়েল ৪:১০-১১ – পৃথিবী সমতল?

দানিয়েল ৪:১০-১১—“এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবী সমতল, কারণ গোলাকার পৃথিবী হলে কোন গাছে সব দিক থেকে দেখা যেত না।”

এখানে শুধু বর্ণনা করা হচ্ছে কীভাবে একজন পৌত্তলিক রাজা তার একটি অদ্ভুদ স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। হয়ত বাদশাহ্ বখতে-নাসার মনে করতেন যে পৃথিবী সমতল— তাতে কিতাবুল মোকাদ্দসের কী সমস্যা হয়?…

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“একটি অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী?”

ইহিষ্কেল ২৬ অধ্যায়—“এখানে ভবিষদ্বানী করা হয়েছে যে বখতে-নাসার টায়ার ধ্বংস করবেন, কিন্তু শুধুমাত্র মহামতি আলেকজান্ডার টায়ার শহর ধ্বংস করেছেন।”

এই ভবিষ্যদ্বানীতে কোথাও বলা হয়নি যে শুধুমাত্র বখতে-নাসার টায়ারের ধ্বংস করবে, কিন্তু ঠিক তার বিপরীত কথা বলা হয়েছে। এই ভবিষ্যদ্বানীর শুরুতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌ টায়ার শহর ধ্বংস করবে “অনেক জাতি” দিয়ে (২৬:৩)। এটা থেকে বোঝা যায় যে পরবর্তী ভবিষ্যদ্বানী বিভিন্ন জাতির মাধ্যমে হবে। আসলে যদি বখতে-নাসার একাই টায়ারের শহরের ধ্বংস করতেন, তাহলে ভবিষ্যদ্বানী ভুল হত।

প্রাচীন টায়ার শহরের আসলে দু’টি অংশ ছিল— একটি মূল ভূখণ্ডে ছিল, একটি এই মাইল দূরে অবস্থিত দ্বীপের উপরে। বাদশাহ্‌ বখতে-নাসার টায়ারকে আক্রমন করলেন, এবং মূল ভূখণ্ডের শহরটা ধ্বংস করলেন, কিন্তু তিনি দ্বীপের অংশটা ধ্বংস করতে পারেননি। এইভাবে ৭-১১ আয়াত পূর্ণ হয়েছে। ইহিষ্কেল তো জানতেন যে বখতে-নাসার টায়ারকে পুরপুরিভাবে ধ্বংস করেননি, কারণ ২৯:১৮ আয়াতে তিনি তাই লিখেছিলেন। ইহিষ্কেল বিশ্বাস করতেন যে বাকী ভবিষ্যদ্বানী অন্য এক জাতির দ্বারা একদিন পূর্ণ হবে।

টায়ারের বিরুদ্ধে মহামতি আলেকজান্ডারের যুদ্ধের ইতিহাস পড়লে দেখা যায় হেজকিলের ভবিষ্যদানী সুন্দর ভাবে পূর্ণ হয়েছে। জাতিরা মনে করত যে টায়ার ধ্বংস করা সম্ভব না। ইহিষ্কেল একটি অস্বাভাবিক কথা ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন যে টায়ার ধ্বংস করার পর সেখানে ভাংগা পাথরও থাকবে না, এবং ধুলা-ময়লা চেঁছে ফেলে হবে (২৬:৪)। মহামতি আলেকজান্ডার টায়ারকে পরাজিত করলেন দ্বীপ ও ডাঙার মধ্যে একটি উঁচু রাস্তা বানানোর মধ্য দিয়ে। এই বাঁধ তৈরি করার জন্য তিনি ভবিষ্যদ্বানীর কথামত টায়ার শহরের সমস্ত ভাংগা পাথর সেখানে সরিয়ে ফেললেন। কত আশ্চর্য একটি ভবিষ্যদ্বানী!…

ইহিষ্কেল ২৩ – অশ্লীলতা?

ইহিষ্কেল ২৩—“কিতাবুল মোকাদ্দসে ‘অশ্লীলতা’ রয়েছে”

এই অধ্যায়ে আল্লাহ্‌র প্রতি ইসরাইল ও সামারীয়ের অবিশ্বস্ততা দু’টি বেশ্যার অবিশ্বস্ততার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। আল্লাহ্‌র চোখে তাদের মূর্তিপূজা এবং অবিশ্বস্ততা যে কত জঘন্য, ভয়ংকর ও নোংরা, সেটা এই তুলনার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ ইসরাইল ও সামারীয়দের বোঝাতে চাচ্ছেন। তাদের লজ্জা জাগানোর জন্য তিনি সবচেয়ে জঘন্য পাপের সঙ্গে মূর্তিপূজা তুলনা করেছে। কোরআন শরীফে এমন তুলনা ব্যবহার করা হয়েছে। সূরা আল হুজরাত ৪৯:১২ আয়াতে মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সঙ্গে নিন্দা তুলনা করা হয়েছে। জেনা ও বেশ্যাগিরি যত জঘন্য, আপন ভাইয়ের মাংস খাওয়া একই রকম জঘন্য। দু’টি গ্রন্থের তুলনার উদ্দেশ্য একই— অসাড়-বিবেক লোকদের বিবেকে ধাক্কা দেওয়া। হেজকিলের এই অধ্যায়ের শেষে এইসব কথা মূল উদ্দেশ্য পাওয়া যায়—

“তোমাদের কুকাজের ফল তোমাদেরই ভোগ করতে হবে
এবং মূর্তিপূজার গুনাহের ফল বহন করতে হবে।
তখন তোমরা জানবে যে, আমিই আল্লাহ্ মালিক।”
(ইহিষ্কেল ২৩:৪৯)

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০ – একটি অপূর্ণ বিষ্যদ্বানী?

ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০—“এই আয়াতে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে যে দাউদের সিংহাসনে বসবার জন্য যিহোয়াকীম কেউ থাকবে না, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৬ অনুযায়ী যিহোয়াকীমের মৃত্যুর পরে তার ছেলে যিহোয়াখীন তার জায়গায় বাদশাহ্‌ হলেন।”

এখানে কোন পরস্পর-বিরোধী কথা নাই, বরং মূল হিব্রু শব্দ “ইয়াশাব” ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ইয়ারমিয়া ৩৬:৩০তে বলা হয়েছে যে যিহোযাকীমের পরে কেউ দাউদের সিংহাসনে “বসবে” (יושׁב “ইয়াশাব” ) না। এই ‘ইয়াশাব’ শব্দ দ্বারা বোঝানো হয় “রয়ে যাওয়া”, “থাকা”, “বাস করা”, “প্রতিষ্ঠিত হওয়া”—অর্থাৎ স্থিতিশীল ভাবে সিংহাসনে বসা।

যিহোয়াকীমের ছেলে যিহোয়াখীন কোনভাবেই সিংহাসনে “ইয়াশাব” করেনি—কারণ তার রাজত্বকালের মাত্র তৃতীয় মাসে বখতে-নাসারের বাহিনী জেরুজালেম দখল করলেন এবং যেহোয়াখীনকে নির্বাসনে পাঠানো হল। অর্থাৎ যিহোয়াকীমের বংশধরে যে সিংহাসনে থাকবে না সেই ভবিষ্যদ্বানী আসলে পূর্ণ হয়েছিল ।

কোরআন শরীফের মধ্যে সেরকম জটিল একটি ভবিষ্যদ্বানী রয়েছে:

“রোমকগণ পরাজিত হইয়াছে—নিকটবর্তী অঞ্চলে; কিন্তু উহারা উহাদের এই পরাজয়ের পর শীঘ্রই বিজয়ী হইবে” (সূরা রূম ৩০:২,৩)

প্রসিদ্ধ কোরআন অনুবাদক ইউসুফ আলীর কথা অনুযায়ী, আরবী শব্দ “শীঘ্রই” (بِضع বিধু’উন) এর অর্থ ৩ থেকে ৯ বছর; অথবা ইসলামি ফাউন্ডেশন কোরআনের টিকা #১৩৩০ অনুযায়ী ৩-১০ বছর। হযরত মুহাম্মদ (সা) নিজেই বলেছিলেন যে “শীঘ্রই” বোঝাচ্ছে ৩ থেকে ৯ বছর (আল-বাইজাওয়ী)। পারস্য রাজ্য রোমীয়দের পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করেছেন ৬১৪ অথবা ৬১৫ সালে। কিন্তু বিখ্যাত ইসলামি ঐতিহাসিক আত-তাবারী এবং আল-বাইজাওয়ী অনুযায়ী পারস্যদের পরাজয় হল ১৩-১৪ বছর পরে (৬২৮ সালে)। মনে হচ্ছে ইয়ারমিয়ার উপরোক্ত জটিলতা থেকে এই জটিলতা কম না।

ইশাইয়া ৩৪:৭—“রূপকথার একশৃঙ্গী অশ্বের উল্লেখ?”

ইশাইয়া ৩৪:৭—“কিতাবুল মোকাদ্দস কেন রূপকথার একশৃঙ্গী অশ্বের উল্লেখ আছে?”

মধ্যযুগীয় ইংরেজি King James Version বাইবেল অনুবাদে হিব্রু “רֵים রেম ” শব্দ ভুলভাবে অনুবাদ হয়েছে ‘unicorn’ দিয়ে। কিন্তু অন্যান্য প্রায় সকল অনুবাদগুলোতে এই হিব্রু শব্দের সঠিক ভাবে অনুবাদ হয়েছে “wild oxen”, এবং বাংলায় ‘বুনো ষাঁড়’ দিয়ে।

কোরআন শরীফে আমরা পড়ি যে হযরত সোলায়মান একটি ‘ইফ্রিত’-এর সঙ্গে কথা বলছিলেন (সূরা নাম্‌ল ২৭:১৫-৪৪)। বিখ্যাত কোরআন অনুবাদক মুহাম্মদ হামিদুল্লাহ বলেন যে ‘ইফ্রিত’ হচ্ছে “একটি মন্দ শয়তান যেটা বিভিন্ন রূপকথায় পাওয়া যায়”। Encyclopedia Britannica এর সজ্ঞা অনুযায়ী, ‘ইফ্রিত’ হচ্ছে ধুমের তৈরী একটি বড় পাখাওয়ালা জন্তু যারা মাটির নিচে বাস করে। আবার মি’রাজে নবীজী ‘আল-বুরাক’ নামে একটি সাদা পাখাওয়ালা অশ্ব চড়েছিলেন। এই দুই জন্তুর অস্তিত্ব নিয়ে কোন সমস্যা না থাকলে কিতাবুল মোকাদ্দসের বুনো ষাঁড়ের ব্যাপারে প্রশ্ন থাকার কথা নয়।

ইশাইয়া ১১:১২ – পৃথিবীর ‘চার কোণ’?

ইশাইয়া ১১:১২—“এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পৃথিবী সমতল, নাহলে ‘চার কোণ’ থাকত না”

…আর তিনি জাতিগণের নিমিত্ত পতাকা তুলিবেন, ইস্রায়েলের তাড়িত লোকদিগকে একত্র করিবেন, ও পৃথিবীর চারি কোণ হইতে যিহূদার ছিন্নভিন্ন লোকদিগকে সংগ্রহ করিবেন।
(ইশাইয়া ১১:১২)

এখানে “চারি কোণ” দিয়ে যে শুধু “চারদিক থেকে” (উত্তর, দক্ষীণ, পূর্ব, পশ্চিম) বোঝানো হচ্ছে তা খুবই স্পষ্ট। “কোণ” এর মূল হিব্রু শব্দ হল כּנף কানাফ , কার অন্য অনুবাদ “প্রান্ত”, “পোয়া”, সীমা”, এমনকি “পাখা”। প্রাচীনকালে যারা মনে করতে যে পৃথিবী সমতল, তারা আবার মনে করত যে পৃথিবী থালার মত গোল, তাই আক্ষরিকভাবে “কোণ” ব্যাখ্যা করলেও সেটা প্রাচীন কালের সমতল ধারণার সঙ্গে মিলে না। “চারি কোণ থেকে” শুধু “চারদিক থেকে”-এর একটি চলতি কথা। এমনকি বাইবেল সমালোচক আহমেদ দীদাত নিজেই তার লেখায় এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন – “to the four corners of the globe”.…

ইশাইয়া ৭:১৪ – কুমারীর সন্তান?

ইশাইয়া ৭:১৪—“এই ভবিষ্যদ্বানী পূর্ণ হয়নি, কারণ ‘আমলা’ শব্দার্থ অক্ষতযোনি স্ত্রীলোক নয় বরং কুমারী-বয়স, এবং ইঞ্জিল শরীফে ঈসাকে কেউ ‘ইমান্যুয়েল’ বলে ডাকেনি।”

এর প্রথম অভিযোগ- যে হিব্রু শব্দ עלמה আল্‌মা (জাকির নায়েকের কথামত “আম্‌লা” নয়!) শুধু যুব-বয়সী মেয়েকে বোঝায়, সেটা ঠিক না। হিব্রু ‘আল্‌মা’ শব্দ দিয়ে বোঝানো হয় একজন অক্ষতযোনি মেয়ে। যদি কোন নবী বলে যে একটি আশ্চর্য চিহ্ন দেখানো হবে, যে “একজন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হবে”, এর অর্থ সবাই চিনতে পারে—বিনা সঙ্গমে মেয়েটি গর্ভবতী হবে। তাই ঈসা মসীহ্‌র ২০০ বছর আগেই যখন হিব্রু থেকে গ্রীক ভাষায় এই কিতাবের অনুবাদ করা হল, তখন তারা সঠিকভাবে এটা অনুবাদ করেছেন “παρθένος” (অবিবাহিতা সতী মেয়ে) দিয়ে।

এই আয়াত নিয়ে দ্বিতীয় অভিযোগ হল যে ছেলেটিকে বলা হবে “ইম্মানুয়েল”, অর্থাৎ “আমাদের সঙ্গে আল্লাহ্‌”। এই নাম যে মা মরিয়ম দিবে নাকি অন্য কেউ দিবে সেটা মূল হিব্রুতে অস্পষ্ট। কিন্তু ইঞ্জিলে ঈসাকে এই নাম দেওয়া হয়েছে (মথি ১:২৩), এবং ইতিহাস জুড়ে লক্ষ লক্ষ ঈসায়ী ঈসাকে “ইম্মানুয়েল” হিসাবে চেনে। তাই কোন অর্থে এটা অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বানী হতে পারে?…

সোলায়মান – আল্লাহ্‌র কালামে ‘অশ্লীল কথা’?

সোলায়মান—“আল্লাহ্‌র কালামে এমন ধরনের অশ্লীল কথা থাকতে পারে না”

আল্লাহ্‌র কালামে জীবনের সমস্ত বিষয়ের জন্য হেদায়েত আছে। সোলায়মান কিতাব হল স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের একটি কবিতা, এবং এর মধ্যেকার সমস্ত বর্ণনা বিবাহের মধ্যে উপযুক্ত। এই কিতাবের দুই ব্যক্তির ‘প্রিয়’ এবং ‘প্রিয়া’ নাম থেকে বোঝা যায় এরা স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। কবিতা মধ্যে স্বামী তার স্ত্রীকে “স্ত্রী” বলেননি বরং তাকে “প্রিয়া” করে ডাকলেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলে সেটা কি খারাপ না ভাল?…