আল্লাহ্‌ কথা নাকি মানুষের কথা?

“কোরআন শরীফ পুরোপুরি আল্লাহ্‌র কথা, কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দসে মিশ্রিত আছে আল্লাহ্‌র কথা, নবীদের নিজেদের কথা, এবং ঐতিহাসিকদের কথা”

আল্লাহ্‌র কালাম (كلمةﷲ) সম্বন্ধে একটি ভুল ধারণার কারণেই এই অভিযোগ তুলা হয়। অনেকে মনে করে যে একবচন উত্তম পুরুষ বাক্য ছাড়া কোন কিছু আল্লাহ্ কালাম হতে পারে না, শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র কণ্ঠের উক্তি হতে পারে। কিন্তু এই ক্ষুদ্র মাপকাঠি ব্যবহার করলে শুধু ইঞ্জিল নয় বরং কোরআন শরীফও অযোগ্য হয়ে পড়ে, কারণ এই ভুল মাপকাঠি অনুযায়ী কোরআনের মধ্যে আল্লাহ্‌র বাণী, মানুষের বাণী এমনকি ফেরেশতার বাণীও রয়েছে। কোরআন শরীফের অধিকাংশ আয়াত মানুষদের কাছে আল্লাহ্‌র কথা। কিন্তু সূরা ফাতিহা হচ্ছে বিপরীত; আল্লাহ্‌র কাছে মানুষদের কথা। আবার সূরা মরিয়মের মধ্যে বাহক ফেরেশতা জিবরাইলেরও একটি উক্তি আছে – “আমি আপনার পালনকর্তার আদেশ ব্যতীত অবতরণ করি না”।

তাই ‘আল্লাহ্‌র কালামের’ এই ভুল সংজ্ঞা চলবে না, যে আল্লাহ্‌র বাণী শুধু একবচন উত্তম পুরুষ উক্তি হতে পারে। ইঞ্জিল শরীফে বলা হয়েছে:

“এই কথা মনে রেখো যে, কিতাবের মধ্যেকার কোন কথা নবীদের মনগড়া নয়, কারণ নবীরা তাঁদের ইচ্ছামত কোন কথা বলেন নি; পাক-রূহের দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা আল্লাহ্‌র দেওয়া কথা বলেছেন। (ইঞ্জিল শরীফ, ১ পিতর ১:২১)

যেহেতু আল্লাহ্‌ অনেক সময় ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে তার ইচ্ছা বিশেষভাবে প্রকাশ করেন, সেহেতু এই গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস সঠিকভাবে লিখে রাখার জন্য তিনি বিশেষ কিছু কিছু মানুষকে লিখতে পরিচালনা করেছেন, যেমন তৌরাত শরীফের ক্ষেত্রে তিনি হযরত মূসাকে লিখতে পরিচালনা করেছেন।

আল্লাহ্‌র কালামের একটি সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার পর্যাপ্ততা এবং পরিপূর্ণতা – আল্লাহ্‌র প্রতি ভয়পূর্ণ জীবন কাটাতে যা যা জানা দরকার সবকিছু আল্লাহ্‌র কালামের মধ্যে পাওয়া যায়, অন্য কোথাও যেতে হয় না। হেদায়েত, দিক-নির্দেশনা, শরিয়ত এবং ইতিহাস, যথেষ্ঠ পরিমানে আল্লাহ্‌র কালামে রয়েছে, মানব জাতির জন্য আল্লাহ্‌র পরিপূর্ণ উপদেশ। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে সেগুলো অপর্যাপ্ত, যার কারণে মূল ধর্মগ্রন্থ বাদ দিয়ে অন্য ইতিহাস বইয়ের মধ্যে ব্যস্ত থাকতে হয়।

ইঞ্জিল শরীফের মধ্যে পাক-রূহ্‌-শাশ্বত ‘ঐতিহাসিকদের কথা’ থাকার আরেকটি কারণ হচ্ছে ঈসা মসীহ্‌র অনন্য ভূমিকা। আগের যুগে আল্লাহ্‌ বিভিন্ন নবীদের কাছে বিশেষ বাণী দিতেন, কিন্তু ঈসা মসীহ্‌ হচ্ছে আল্লাহ্‌র জীবিত কালাম, তার জীবনই ছিল মানুষের কাছে আল্লাহ্‌র শাশ্বত বাণী। এইজন্য ইঞ্জিল শরীফের ভূমিকা একটু আলাদা, সেটা হচ্ছে প্রধানত আল্লাহ্‌র এই জীবিত কালামের কথা এবং কাজের একটি পাক-রূহ-শাশ্বত লিখিত সাক্ষ্য।

    ১. হয়ত এইজন্য শ্রেষ্ঠ কোরআন পাঠক উবায় ইবন কা’ব তার কোরআন শরীফে সূরা ফাতেহা যোগ করেন নি, কারণ সূরা হিজরে ফাতেহা এবং কোরআন আলাদা করা হয়: “আমি আপনাকে সাতটি বার বার পঠিতব্য আয়াত এবং মহান কোরআন দিয়েছি।” (১৫:৮৭)

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *