যীশু কি মনুষ্যপুত্র নাকি ঈশ্বরপুত্র?
অভিযোগ:
যীশু কি মনুষ্যপুত্র নাকি ইশ্বরপুত্র???
যদি বলেন ইশ্বরেরপুত্র তাহলে বাইবেলে তাকে মনুষ্যপুত্র বলা হলো কেন? যেমন…
“মনে রেখো, মনুষ্যপুত্র সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন।”” (মার্ক ১০:৪৫)
যীশু খ্রীষ্টের এই নাম প্রথম বলা হয়েছে দানিয়েল ৭:১৩ পদে। এই নামটি যীশু খ্রীষ্ট নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন। যদিও অন্যেরা এই নাম খুব কমই ব্যবহার করত। এই নাম যীশু খ্রীষ্টের মানব হওয়া প্রকাশ করে। আরো কিছু সূত্র: দানিয়েল ৭:১৩, মথি ১৬:২৭-২৮, ২৬:৬৪, লূক ২১:২৭।
উত্তর:
ইঞ্জিল শরিফে ঈসাকে উভয়ই বার বার বলা হয়েছে, “মনুষ্যপুত্র” ও “ঈশ্বরপুত্র” – দুটোই ঠিক। “আল্লাহ্র পুত্র” রুপক বর্ণনা দিয়ে বোঝানো হচ্ছে যে পিতা ও পুত্রের যে বিশেষ ভালোবাসা ও বাধ্যতার সম্পর্ক থাকে সেটা আল্লাহ ও ঈসার মধ্যেও ছিল (সেটা শারীরিক কিছু বোঝায় না)। “মনুষ্যপুত্র” উপাধির দুটি অর্থ আছে:
- ১. ঈসা একজন মানুষ – আল্লাহ্র কালাম হওয়ার পাশাপাশি ঈসা সম্পূর্ণ একজন মানুষও ছিলেন।
- ২. তিনি দানিয়েলের ভবিষ্যদ্বানীর পূর্ণতা – দানিয়েল ৭:১৩ আয়াতের ভবিষ্যদ্বানী হয়েছে যে “ইবনে-আদম” নামক একজন আল্লাহ্র কাছে সমস্ত শক্তি, কর্তৃত্ব ও রাজত্ব করার ক্ষমতা পাবে:
“রাতের বেলায় আমার সেই স্বপ্নের মধ্যে আমি তাকিয়ে ইব্নে-আদমের মত একজনকে আকাশের মেঘের মধ্যে আসতে দেখলাম। তিনি সেই বৃদ্ধ জনের কাছে এগিয়ে গেলে পর তাঁকে তাঁর সামনে নিয়ে যাওয়া হল। সেই ইবনে আদমকে কর্তৃত্ব, সম্মান ও রাজত্ব করবার ক্ষমতা দেওয়া হল যেন সমস্ত জাতির, দেশের ও ভাষার লোকেরা তাঁর সেবা করে। তাঁর রাজত্ব চিরস্থায়ী; তা শেষ হবে না আর তাঁর রাজ্য কখনও ধ্বংস হবে না।(দানিয়েল ৭:১৩)
এটাও আশ্চর্য একটি দাবি।
ইঞ্জিলে কোনো সন্দেহ নেই যে ঈসা মসীহ্ “ইবনে-আদম” এর পাশাপাশি “আল্লাহ্র পুত্র” অপাধিটাও গ্রহণ করেছেন:
- ঈসা মসীহ্ বলেছেন: “আল্লাহ্ মানুষকে এত মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপর ঈমান আনে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। আল্লাহ্ মানুষকে দোষী প্রমাণ করবার জন্য তাঁর পুত্রকে দুনিয়াতে পাঠান নি, বরং মানুষ যেন পুত্রের দ্বারা নাজাত পায় সেইজন্য তিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন।” (ইউহোন্না ৩:১৬)
- ঈসা মসীহ্ বলেছেন: “পিতা পুত্রকে মহব্বত করেন এবং তাঁর হাতে সমস্তই দিয়েছেন। যে কেউ পুত্রের উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়, কিন্তু যে পুত্রকে অমান্য করে সে সেই জীবন কখনও পাবে না, বরং আল্লাহ্র গজব তার উপরে থাকবে।” (ইউহোন্না ৩:৩৫,৩৬)
- ঈসা মসীহের বিচারের সময় ইহুদি ধর্মীয় নেতারা “জিজ্ঞাসা করলেন, “তাহলে তুমি কি ইব্নুল্লাহ্?” তিনি [ঈসা] তাঁদের বললেন, “আপনারা ঠিকই বলছেন যে, আমিই সে-ই।“ (লূক ২২:৭০)
- হযরত ঈসার ব্যাপারে ফেরেশতা জিব্রাইল বিবি মরিয়মকে বলেছেন “তাঁকে আল্লাহ্তা’লার পুত্র বলা হবে। (লূক ১:৩১)
- হযরত ঈসা যখন একটি পাহাড়ের উপর গৌরবান্বিত হল “সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার পুত্র যাঁকে আমি বেছে নিয়েছি; তোমরা এঁর কথা শোন।” (লূক ৯:৩৫)
- ঈসা মসীহের তরিকাবন্দীর সময়ে “বেহেশত থেকে এই কথা শোনা গেল, “তুমিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমার উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট।” (লূক ৩:২২)
- ইউহোন্না ১:৪৯ আয়াতে যখন সাহাবী নথনেল ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আপনিই ইব্নুল্লাহ্” তখন ঈসা সেটা গ্রহণ করেছে তার “ঈমান” হিসেবে।
- হযরত ঈসা ইহুদি নেতাদের বললেন, “আমি সত্যিই আপনাদের বলছি, পুত্র নিজ থেকে কিছুই করতে পারেন না। পিতাকে যা করতে দেখেন কেবল তা-ই করতে পারেন, কারণ পিতা যা করেন পুত্রও তা-ই করেন। পিতা পুত্রকে মহব্বত করেন এবং তিনি নিজে যা কিছু করেন সমস্তই পুত্রকে দেখান। তিনি এগুলোর চেয়ে আরও মহৎ মহৎ কাজ পুত্রকে দেখাবেন, যেন পুত্রকে সেই সব কাজ করতে দেখে আপনারা আশ্চর্য হন। পিতা যেমন মৃতদের জীবন দিয়ে উঠান ঠিক তেমনি পুত্রও যাকে ইচ্ছা করেন তাকে জীবন দেন। পিতা কারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারের ভার পুত্রকে দিয়েছেন, যেন পিতাকে যেমন সবাই সম্মান করে তেমনি পুত্রকেও সম্মান করে। পুত্রকে যে সম্মান করে না, যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন সেই পিতাকেও সে সম্মান করে না।” (ইউহোন্না ৫:১৯-২০)
কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:
Leave a Reply