কোরআনের সংকলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

১। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর জীবনকালে
কোন লিখিত কোরআন ছিল না

যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেছেনঃ “নবীজী (সা) ইন্তেকাল করলেন এবং তখনও কোরআন শরীফ এক জায়গায় একত্র করা হয় নি।” (আহ্‌মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ ‘আস্কালানী, ইবনে হাজর, ফাত-আল-বারি (কাইরো (১৯৩৯), ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৯ )

আলী (রা) থেকে বর্ণিতঃ আবু বকরের উপর আল্লাহ্‌র রহমত বর্ষিত হউক, যিনি পাণ্ডুলিপিগুলো সংকলন করতে পুরস্কৃত হয়েছিলেন, কারণ সর্বপ্রথম তিনিই কোরআন শরীফ দুই জিলদের মধ্যে সংকলন করেছিলেন।” (ইবনে আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ৫)

তার মারা যাওয়ার সময়ে হযরত মুহাম্মদ (সা) তার সাহাবাদের জন্য কোন লিখিত কোর’আন রাখেননি। ইয়ামামা যুদ্ধের পরে কোরআন হারিয়ে যাওয়ার আশংকায় হযরত আবু বকর (রাঃ) কোরআনের প্রথম লিখিত সংকলন করেনঃ

যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেছেনঃ যখন ইয়ামামার যুদ্ধে অনেক লোক নিহত হলেন সেই সময় আবু বকর (রা) আমাকে ডেকে পাঠালেন। তখন উমর ইবনে খাত্তাব তাঁর নিকটে উপস্থিত ছিলেন। তখন আবু বকর (রা) বললেন, উমর আমার কাছে এসে বলেছেঃ শাহাদত প্রাপ্তদের মধ্যে ক্বারীদের সংখ্যা অনেক। আমি আশঙ্কা করছি (ভবিষ্যতে যুদ্ধবিগ্রহে) আরো হাফেজে কোরআন শাহাদত লাভ করবেন এবং এভাবে কোরআনের বহু অংশ হারিয়ে যাবে। অতএব, আমি আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি, ‘আপনি কোরআন সংকলনের নির্দেশ দিন।’ তদুত্তরে আমি উমরকে বললামঃ যে কাজ আল্লাহ্‌র রসূল (স) করেননি সেই কাজ কিভাবে করবে? উমর (রা) উত্তরে বললেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! এটা হচ্ছে একটা উত্তম কাজ। উমর এ ব্যাপারে আমাকে পীড়াপীড়ি করতে থাকলেন যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ এ কাজের জন্য আমার অন্তর খুলে দিলেন এবং আমি এর কার্যকারিতার কল্যাণকর দিক উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম। অতঃপর আবু বকর (রা) আমাকে বললেনঃ তুমি একজন বিজ্ঞ যুবক, তোমার সম্পর্কে আমার কোন সংশয় নেই। এছাড়া তুমি নবী (স)-এর অহীর লেখক ছিলে। সুতরাং তুমি কোরআনের বিভিন্ন খণ্ডাংশ অনুসন্ধান করো এবং এর সবগুলো একত্রে গ্রন্থাকারে সন্নিবেশিত করো। আল্লাহ্‌র কসম! যদি তারা আমাকে একটি পাহাড় একস্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিত তাও আমার কাছে কোরআনের সংকলনের নির্দেশের চেয়ে কঠিন হতো না। অতঃপর আমি আবু বকর (রা)-কে বললামঃ ‘আপনি কিভাবে সেই কাজ করবেন, যা আল্লাহ্‌র রসূল (স) করেননি?’ আবু বকর (রা) উত্তর দিলেনঃ আল্লাহ্‌র কসম! এটা একটা উত্তম (কাজ)। আবু বকর (রা) এ ব্যাপারে আমাকে এতক্ষণ অনুপ্রেরণা দিতে থাকলেন, যতক্ষণ না আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাক অন্তকরণ খুলে দিলেন, যে কাজের জন্য আল্লাহ্‌ আবু বকর ও উমরের অন্তকরণ খুলে দিয়েছিলেন। সুতরাং আমি কোরআনের (লিখিত অংশসমূহ) সংগ্রহের কাজে আত্মনিয়োগ করলাম, যা খেজুর পাতা, প্রস্তর খণ্ড এবং লোকদের অন্তকরণ থেকে সংগ্রহ করতে থাকলাম। এমনকি আমি সূরা তওবার শেষাংশ আবি ঝুযাইমা আল আনসারীর নিকট থেকে সংগ্রহ করলাম এবং আমি এ অংশ তিনি ছাড়া আর কারো কাছে পাইনি।

৪৫০জন ক্বুর্‌রা’’(তেলাওয়াতকারী) ইয়ামামা যুদ্ধে মারা গেলেন, এবং কিছু সূত্র জানায় যে কোরআনের কিছু অংশ ছিল যেগুলো শুধু এরাই জানতেন—

যুহরি (র) বর্ণিনা করেছেনঃ “আমরা শুনেছি যে অনেক কোরআনের সূরা নাজিল হয়েছে কিন্তু যারা সেগুলো মুখস্থ করেছেন এরা ইয়ামামা যুদ্ধে মারা গেলেন। সেই আয়াতগুলো তখনও লেখা হয়নি, এবং এদের মৃত্যুর পরে সেগুলো আর ছিল না; তখনও ‘উমার বা ‘ওসমান কোরআনের পাঠ সংকলন করেননি।

বোখারী শরীফে উপরোক্ত ওসমানের যে আশঙ্কা যে “(ভবিষ্যতে যুদ্ধবিগ্রহে) আরো হাফেজে কোরআন শাহাদত লাভ করবেন এবং এভাবে কোরআনের বহু অংশ হারিয়ে যাবে” এই বর্ণনার সাথে মিলে যায়। হয়ত এই কারণে হযরত ‘উমারের সন্তান ‘আব্দুল্লাহ্‌ (একজন বিশ্বস্ত সাহাবী যিনি মুহাম্মদ(সাঃ)-এর সঙ্গে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন।) বললেন,

“কেহই না বলুক, ‘আমি পুরো কোরআন শিখেছি’; তিনি কেমন করে গোটা কোরআন শিখতে পারেন যেহেতু এর অনেকাংশ হারিয়ে গেছে? বরং তিনি বলুক, ‘যা বাকি রয়েছে তা শিখেছি।’” (ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতী, আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন, লাহোর, ইদারাহ্‌ ইসলামিয়াত, ১৯৮২, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫২৪)

ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং উবায় ইবন কা’ব (রাঃ)-এর মুসহাফ

কিন্তু যায়েদ ইবনে সাবেত দ্বারা সংকলিত এই মুসহাফ (কোরআনের কপি) ছাড়া অন্য মুসহাফও ছিল, এবং তা কোন আনুষ্ঠানিক মুসহাফ ছিল না, কারণ তা বাইতুলমালে (সাধারণ ভাণ্ডারে) না রেখে গৃহে গৃহে রাখা হত, এবং শেষে হযরত ‘উমারের মেয়ে হাফসার বিছানার নিচে কিতাবটি পাওয়া গেল।

আবার হুজুর (সাঃ) যায়েদ ইবনে সাবেতকে কোন শীর্ষ কোরআনের তেলাওয়াতকারী বলেননি, বরং তিনি ইবনে মাসউদ এবং উবায় ইবনে কা’ব-এর কাছে কোরআনের সঠিক পাঠ গ্রহণ করতে বললেনঃ

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী(স)-কে বলতে শুনেছি, চার ব্যক্তির নিকট থেকে তোমরা কোরআনের পাঠ গ্রহণ করঃ (১) ইবনে মাসউদ (২) আবু হুযাইফার মুক্ত গোলাম সালিম (৩) উবাই (ইবনে কা’ব) ও (৪) মুয়ায ইবনে জাবাল।” (সহীহ আল-বোখারী, ৩৫২৪ (জামে’ সহীহ্‌ আল-বোখারী অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, পৃষ্ঠা ৬৪৩)

সহীহ মুসলিমেও উল্লেখ আছে যে হুজুর (সাঃ) “ইবনে মাসউদ দিয়ে শুরু করল”, অর্থাৎ সেই চারজনের মধ্যে ইবনে মাসউদ সবচেয়ে শীর্ষ ছিল। হুজুর (সাঃ) বলতেন, “কোরআন যেভাবে নাজিল হয়েছে সেইভাবে যারা তা পাঠ করতে চায়, তারা ইবনে মাসউদের মতন করে পাঠ করুক।”

আব্দুল্লাহ্‌[ইবনে মাসউদ (রা)] বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আল্লাহ্‌র কিতাবের এমন কোন সূরা নেই যার সম্পর্কে আমি জানি না কখন কোথায় অবতীর্ণ হয়েছে। এবং আল্লাহ্‌র কিতাবে এমন কোন আয়াত নেই, যে সম্পর্কে আমি জানিনা, কার সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি যদি জানতাম এওমন কোন ব্যক্তি রয়েছে, যে আমার চেয়ে কোরআন ভাল জানে এবং সেখানে উট গিয়ে পৌঁছতে পারে, তবে আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছতাম।

যেহেতু মুহাম্মদ (সাঃ) সবাইকে ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কাছে কোরআন গ্রহণ করতে বলল, ইবন মাসউদ একজন শীর্ষ কোরআন-শিক্ষক হলেন। ইবন মাসউদ ইরাকের কুফা শহরে অবস্থান করতে লাগল এবং সেই দেশে তার মসহাফ প্রতিষ্ঠিত হল। তেমন ভাবে সিরিয়া প্রদেশে মুসলমানদের মধ্যে উবায় ইবন কা’বের মুসহাফ প্রতিষ্ঠিত হল। তুলনামূলকভাবে, যায়েদ বিন সাবেতের প্রথম মুসহাফ বিশ বছর ধরে তেমন প্রকাশ পায়নি।

হযরত ওসমান (রাঃ)-এর মুসহাফ

প্রায় বিশ বছর পরে, কোরআনের সঠিক পাঠ নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের বিতর্কের কারণে হযরত ওসমান (রা) একটি আনুষ্ঠানিক সংকলন করার উদ্দ্যোগ নেন:

অতঃপর উসমান (রা) প্রত্যেক প্রদেশে কোরআনের (লিখিত) কপিসমূহের এক একখানা গ্রন্থ (কপি) (এক এক প্রদেশে) পাঠিয়ে দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে নির্দেশ দিলেন অন্যান্য লিখিত (কোরআনের) যে কপিসমূহ রয়েছে, আলাদা আলাদা অথবা একত্রে সন্নিবেশিত সব যেন জ্বালিয়ে দেয়া হয়। যায়েদ ইবনে সাবেত (রা) বর্ণনা করেনঃ যখন আমরা কোরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম, তখন সূরায়ে আহযাবের একটি আয়াত আমার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল অথচ আমি সেই আয়াতটি আল্লাহ্‌র রসূলকে তিয়াওয়াত করতে শুনেছি। সুতরাং আমরা এটি (উদ্ধারের) জন্য অনুসন্ধান চালালাম। অতঃপর আমরা এটা খুযাইমা ইবনে সাবেত আনসারী (রা)-এর কাছে পেলাম।.

ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর প্রতিক্রিয়া

হযরত ওসমানের এই ঘোষনা যখন কুফাতে শোনা গেল যে এদের সব কোরআন পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হয়, আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিল—

কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি [মুহাম্মদের], যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্‌র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।” (ইবন সা’দ, কিতাবুল তাবাকাত আল-কবির, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৪)

তিরমীযী লেখেন—

যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্‌ ইবনে আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্‌র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)।

আব্দুল্লাহ্‌ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ “হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ। (জামিউত তিরমিযী, সোলেমানিয়া বুক হাউস, ঢাকা, পৃষ্ঠা ৮৫১)

ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন—

আমি সরাসরি আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্‌র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?” (ইবন আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ১৫)

ইবনে মাসউদের কোরআন হযরত উসমান (রা) জোর করে কেড়ে নিল এবং ইবনে মাসউদকে মসজিদের জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়ার হুকুম দিলেন। তাতে ইবনে মাসউদের পাঁজর ভেঙ্গে গেল।

ইবনে মাসউদের কোরআনের বৈশিষ্ট্য

ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ অনুযায়ী, ইবন মাসউদের মুসহাফের মধ্যে সূরা ফাতেহা, আল-ফালাক এবং আন-নাস ছিল না (এই তথ্যও ইমাম আহমাদ, তাবারনি এবং ইবন হিব্বানের মুসনাদে রয়েছে)। ইবনে মাসউদ এবং যায়েদ ইবন সাবেতদের মুসহাফের মধ্যে পার্থক্য নিয়ে ইবন আবি দাউদের কিতাবুল মাসাহিফে ১৯ পৃষ্ঠার পার্থক্যের কথা লেখা আছে। এর সঙ্গেও সূরার ক্রমের পার্থক্যও ছিল। অপরদিকে উপরোক্ত উবাই ইবনে কা’ব-এর কোরআনের মধ্যে তিনি বাড়তি দুটি সূরা যোগ করলেন—সূরা আল-হাফ্‌দ এবং সূরা আল-খাল:

সূরা আল-হাফ্‌দ
সূরা আল-হাফ্‌দ

সূরা আল-খাল
সূরা আল-খাল

আব্দুল মালিক বিন মারওয়ানের তথ্য অনুযায়ী, আলী ইবন আবি তালিবের কোরআনে আল-খাফ্‌য নামে বাড়তি একটি সূরা ছিল, যেটা বর্তমানকাল কোরআনগুলোতে নাই। আবার কিছু কিছু শি’আ আলেম দাবি করেন যে হযরত ওসমান কোরআন থেকে দুটি সূরা বাদ দিয়েছেন, সূরা ওয়িলায়াহ্‌ এবং নূরাইন।

হযরত উসমানের পাণ্ডুলিপির অস্তিত্ব

বর্তমান যুগে বিদ্যমান কোরানের জন্য সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি কী? সাধারণ ধারণার বিপরীতে, মুসলিম-অমুসলিম পণ্ডিতরা উভয়ই স্বীকার করেন যে ওসমানের সব কপিগুলো হারিয়ে গেছে। জনগণের ধারনায়, ইস্তানবুলে অবস্থিত তপকাপি পাণ্ডুপিলি এবং তাসখন্দে অবস্থিত সামারকন্দ পাণ্ডুলিপি উভয়ই হযরত ওসমানের তৈরী-করা পাণ্ডুলিপি। কিন্তু প্যালিওগ্রাফিক (অর্থাৎ হাতের লেখার বিশ্লেষণ) এবং বৈজ্ঞানিক কার্বন-ডেটিং পদ্ধতির পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে সেগুলো হযরত ওসমানের অনেক পরে লেখা, কারণ যে কুফী হাতের লেখা সেগুলোতে ব্যবহার করা হয় সেটা হযরত ওসমানের সময়কালে শুরু হয়নি। একটি ইসলামি ওয়েবসাইট এইভাবে লিখেনঃ

Is this [Topkapi] the Qur’ān that belong to the third caliph Uthmān? The answer is no. There are good number of other Qur’āns (such as the ones at St. Petersburg and Samarqand) having at times turned up in different parts of the Islamic world, almost all purporting to show the traces of the blood of the third caliph Uthmān upon certain pages, and thus the genuine Uthmānic Qur’ān, the imām, which he was reading at the time of his death. Moreover, the manuscript clearly shows the script, illumination and marking of vowels that are from the Umayyad times (i.e., late 1st century / early 2nd century of hijra). Furthermore, this manuscript was also briefly discussed by Ṣalāḥ al-Dīn al-Munajjid who did not consider it to be from the time of caliph Uthmān.

সামারকন্দ এবং তপকাপি পাণ্ডুলিপিগুলো অনেক পুরাতন কিন্তু সেগুলো হযরত ওসমানের কপি নয়।

প্রাচীন পান্ডুলিপির মধ্যে ভিন্নপাঠ

কোরআনের জন্যে বর্তমানকালে সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি হচ্ছে কিছু পাণ্ডুলিপির অংশ যেগুলো ১৯৭২ সালে ইয়েমেনের সা’আনা শহরে একটি পুরাতন মিনারে পাওয়া গেল।

ইয়েমেনের পুরাতত্ত্ব কর্তৃপক্ষরা এর গবেষণা ও পুনরুদ্ধার কাজের পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছেন সারলান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরআনের আরবী হাতের লেখা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গের্ড র. পুইন। অধ্যাপক পুইন এই পাণ্ডুলিপিগুলোর ব্যাপক বিশ্লেষণ করেছেন, এবং সেগুলোতে অস্বাভাবিক আয়াতের ক্রম ও লেখার পার্থক্য পাওয়া গেল। ১৯৯৯ সালে আটলান্টিক মনথ্‌লি পত্রিকায় পুইনের গবেষণা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ লেখা হয়ঃ

“Some of the parchment pages in the Yemeni hoard seemed to date back to the seventh and eighth centuries A.D., or Islam’s first two centuries — they were fragments, in other words, of perhaps the oldest Korans in existence. What’s more, some of these fragments revealed small but intriguing aberrations from the standard Koranic text. Such aberrations, though not surprising to textual historians, are troublingly at odds with the orthodox Muslim belief that the Koran as it has reached us today is quite simply the perfect, timeless, and unchanging Word of God.”

গোটা কোরআন শরীফের একত্রে সবচেয়ে প্রাচীন পাণ্ডুলিপি হচ্ছে লন্ডনের ব্রিটিশ যাদুঘরে অবস্থিত একটি কোরআন যেটা ১৫০ হিজরীতে লেখা হ্ল।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

  1. বোখারী শরীফ #৪৬১৬, (জামে’ সহীহ্‌ আল-বোখারী, অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, অধ্যায়-৫১, #৪৬১৬, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৫)
  2. ইবন আবি দাউদ, কিতাবুল মাসাহিফ, পৃষ্ঠা ১৫
  3. বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, #৪৬৩১, পৃষ্ঠা-২৩৮
  4. বোখারী শরীফ #৪৬১৭, (জামে’ সহীহ্‌ আল-বোখারী, অনুবাদ মাওলানা মোবারক করীম জওহর, খান ব্রাদার্স আণ্ড কোম্পানি, ৯ বাংলাবাজার ১১০০; ঢাকা ২০০৮, অধ্যায়-৫১, #৪৬১৬, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩৫)
  5. খুরশিদ আহ্‌মাদ খুরশিদ, হযরত উসমান কে সুরকারি খাতুত, পৃষ্ঠা ১০৬.
  6. The “Qur’ān Of Uthmān” At The Topkapi Museum, Islamic Awareness, http://www.islamic-awareness.org/Quran/Text/Mss/topkapi.html. Retrieved on June 16, 2009.
  7. Lester, Toby (January 1999). “What Is The Koran”. The Atlantic Monthly. http://www.theatlantic.com/doc/prem/199901/koran. Retrieved on 2008-12-02.

কোনো প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! নিচের ফর্ম দিয়ে যোগাযোগ করুন:

Enable javascript in your browser if this form does not load.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *