আইয়ুব ২৬:১১ – আকাশের স্তম্ভ?

আইয়ুব ২৬:১১—“এই আয়াত বলে যে আকাশের স্তম্ভ রয়েছে”

আইয়ুব কিতাব একটি কাব্যিক লেখা, যার কারণে এতে অনেক রূপক, অলংকারবহুল ও অত্যুক্তিময় ভাষা আছে। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি আইয়ুব আক্ষরিক অর্থ মনে করেনি যে আকাশের স্তম্ভ আছে, কারণ কয়েক আয়াত আগে তিনি বলেছিলেন—

তিনি শূন্যে উত্তরের আসমান বিছিয়ে দিয়েছেন;
শূন্যের মধ্যে দুনিয়াকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। (আইয়ুব ২৬:৭)

অর্থাৎ আইয়ুব জানতেন যে আসমান শূন্যের উপর ঝুলছে, আবার তিনি জানতেন যে পুরো দুনিয়া শূন্যের উপর ঝলছে। সমালোচক যদি এই সব প্রমাণ গ্রহণ না করে, তাহলে মনে রাখতে হয় যে আইয়ুব কিতাবের শেষে আল্লাহ্‌ হযরত আইয়ুবকে ধমক দেয় সৃষ্টি সম্পর্কে “জ্ঞানহীন কথা” বলার জন্য (আইয়ুব ৩৮:১-৪)। এর পর হযরত আইয়ুব তওবা করেন, এবং আল্লাহ্‌ তাকে সম্মান করেন।

উল্লেখ্য যে কোরআন শরীফেও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে, এবার উল্কাপিণ্ড নিয়ে:

“আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করিয়াছি, এবং রক্ষা করিয়াছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হইতে। ফলে উহারা উর্ধ্ব জগতের কিছু শ্রবণ করিতে পারে না এবং উহাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হইতে- বিতাড়নের জন্য এবং উহাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেহ হঠাৎ কিছু শুনিয়া ফেলিলে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তাহার পশ্চাদ্ধ্বাবন করে। (সূরা সাফফাত ৩৭:৬-১০)

আইয়ুব ১০:৯-১০ – মানুষ পনিরের মত তৈরি?

তৈরি হয়েছে।”

এই উদ্ধৃতি হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতি আইয়ুবের অভিযোগের একটি অংশ, যেখানে আইয়ুব ভুল করে দাবি করেছেন যে তিনি আল্লাহ্‌র গোপন কথা জানেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাকে এইভাবে সমালোচনা করেছেন:

তখন মাবুদ ঝড়ের মধ্য থেকে আইয়ুবকে জবাব দিলেন। তিনি বললেন, “এ কে, যে জ্ঞানহীন কথা দিয়ে আমার পরিকল্পনাকে সন্দেহ করে?

আইয়ুব ৯:৬ – সমতল পৃথিবীর নিচে থাম?

আইয়ুব ৯:৬—“এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবীর থাম আছে, অর্থাৎ পৃথিবী সমতল।”

এই সব আয়াত কোন ভূতাত্ত্বিক বর্ণনা নয় বরং কাব্যিক ভাষা ও উপমা দিয়ে আল্লাহ্‌র সার্বভৌম ক্ষমতা বর্ণনা করছে।

আবার এখানে “পৃথিবী” শব্দের ভুলব্যাখ্যা হয়েছে, কারণ “পৃথিবী” (হিব্রু תּבל তেবেল এবং ארץ ‘এরেত্‌স ) দিয়ে সাধারণত আমাদের পুরো গ্রহ বোঝানো হয় না বরং “দেশ”, “মহাদেশ” বা “জমিন” বা “এলাকা” বোঝানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরো “জগত”-এর ধারণাটি এই শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না (যেমন পয়দায়েশ ৩৮:৯)। এই আয়াতগুলোতে আগেকার ভাষায় ‘পৃথিবীর স্থলভাগ’ বোঝানো হচ্ছে।

আইয়ুব ৯:৬ এবং জবুর ৭৫:৩ আয়াতে “থাম” এর মূল হিব্রু শব্দ עמוד ‘আম্মুদ, যার আরেকটি অর্থ “ভিত্তি” বা “মঞ্চ”। অর্থাৎ, বর্তমান পরিভাষায় এই আয়াত অনুবাদ করলে বলা হচ্ছে যে “মহাদেশীয় প্লেটগুলোর নিচে ভূগর্ভস্থ স্তর রয়েছে”। আল্লাহ্‌তা’লা প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষা, উপমা ও বাক্যালংকার ব্যবহার করেছেন। তিনি যদি সেকালের মানুষদেরকে বলতেন, “…তখন আমি মহাদেশীয় প্লেটগুলোর ভূগর্ভস্থ স্তরগুলো টিকিয়ে রাখি,” কেউ বুঝত না। একই ভাবে কোরআন শরীফেও বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার হয় না বরং প্রাচীন চলতি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল কথায়, এই আয়াতের উদ্দেশ্য হল মানুষের ভাষায় আল্লাহ্‌তা’লার সার্বভৌমত্ব বোঝানো, প্রকৃতির তথ্য বোঝানো নয়।

১ শামুয়েল ২:৮ আয়াতে হান্নার মোনাজাতের মধ্যে “থাম”-এর মূল হিব্রু শব্দ হচ্ছে “মাৎসুক”, যা কিতাবুল মোকাদ্দসে মাত্র ২বার ব্যবহার হয়েছে এবং যার অন্য অর্থ “অবস্থান” (১ শামুয়েল ১৪:৫)। তার অর্থ “ভিত্তি”ও হতে পারে। আবার মনে রাখা উচিত এটা আল্লাহ্‌র কিতাবে সংরক্ষিত একজন সীমিত জ্ঞানের মানুষের মোনাজাত, এটা আল্লাহ্‌র ঘোষণা হয়।

কোরআনেও কিছু আয়াত আছে যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে সমতল পৃথিবীর কথা বলে—

“এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে?

সূর্য দাঁড়িয়ে গেল?

ইউসা ১০:১২-১৩—“সূর্য কীভাবে “দাঁড়াতে” পারেন”?

এই কাহিনী আসলে সাহীহ্‌ বোখারীতেও পাওয়া যায় –

আবূ হুরায়রা (রা) রাসূলুল্লাহ্‌ (ছ) থেকে যে সকল হাদীস আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, এর মধ্যে এটি অন্যতম যে রাসূলুল্লাহ্‌ (ছ) বলেছেনঃ নবীদের মধ্যে কোন এক নবী জিহাদে রওয়ানা দিলেন … এরপর তিনি জিহাদে গমন করে আসরের নামাযের সময় কিংবা তার কাছাকাছি সময়ে যুদ্ধ ক্ষেত্রের নিকটবর্তী এক গ্রামে পৌঁছেন। তখন তিনি সূর্যকে লক্ষ্য করে বলেন, তুমিও আদিষ্ট এবং আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ্‌!

অবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা?

শুমারী ৫:১১-৩১—“তেঁতো পানির এই জেনার পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক নয়?”

আধুনিক দৃষ্টিতে এই পরীক্ষা অদ্ভুত, কিন্তু যারা আল্লাহ্‌র ক্ষমতা এবং কেরামতী বিশ্বাস করে তাদের কাছে এটার কোন সমস্য হওয়ার কথা না। এই তেঁতো পানি কোন রকম যাদু বা মানসিক কৌশল না, কারণ বার বার বলা হয়েছে যে এটা তার কাছে ক্ষতিকর হলে সেটা আল্লাহ্‌রই কাজ (১৬,২১,২৫ আয়াত)।

সাহীহ্‌ হাদীসের মধ্যে বেশ কিছু হাদীস আছে যেগুলো আপাতদৃষ্টিতে যাদুর সমর্থন করে। বোখারী শরিফে বলা হয় যে চুল এবং পরাগ দিয়ে নবীজী (স)-এর উপর যাদু করা হয়েছে। সাহীহ্‌ মুসলিমে বলা হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (ছ) একজনকে ঝাড়-ফুঁকের অনুমতি এবং উৎসাহ্‌ দেন। (সাহীহ্‌ মুসলিম, হাদীস নং ৫৫৭৮)। হযরত আয়েশা (রা) বলেছেন যে রাসূলুল্লাহ (ছ) তাঁকে [আয়েশাকে] বদ্‌ নজর লাগা থেকে রক্ষা পাওয়া জন্য ঝাড়-ফুঁক করার হুকুম করতেন (সাহীহ্‌ মুসলিম, হাদীস নং-৫৫৭১,৫৫৭৩)। সাহীহ্‌ বোখারী অনুযায়ী, “খারাপ স্বপ্ন দেখলে তার থেকে আশ্রয় চাইবে এবং নিজের বাম দিকে থুতু নিক্ষেপ করবে। তাহলে তার কোন ক্ষতি হবে না” (বোখারী হাদীস #৬৫০২)।

নারী বীর্য?

লেবীয় ১২:১—“এই আয়াতে ভুল আছে যে নারী বীর্য উৎপাদন করে”

কিছু সমালোচক দাবী করেছেন যে বাংলায় যেখানে “গর্ভবতী হয়” অনুবাদ হয়েছে তার পিছনে যে হিব্রু ক্রিয়াশব্দ আছে זָרַע তাজ্‌রিয়া তার অর্থ “বীজ উৎপাদন করা” অর্থাৎ বীর্য উৎপাদন করা যা বৈজ্ঞানিক ভুল। কিন্তু এটা তো সত্য, মেয়েদের অণ্ডাশয়ের মধ্যে যখন অন্ড হয় সেটা অবশ্যই ‘বীজ’ বলা যায় যতটুকু বীর্য ‘বীজ’ বলা যায়। এর মধ্যে তো কোন বৈজ্ঞানিক সমস্যা নাই।

প্রজনন নিয়ে কোরআনেরও কিছু জটিলতা আছে, কারণ সূরা তারিকে বলা হয়েছে:

“তাহাকে [মানুষকে] সৃষ্টি করা হইয়াছে সবেগে স্খলিত পানি হইতে,
ইহা নির্গত হয় মেরুদণ্ড ও পিঞ্জরা স্থির মধ্য হইতে” (সূরা তারিক ৮৬:৬,৭)

আগের যুগে মানুষ বিশ্বাস করত যে পিঠ বা বৃক্ক থেকে বীর্য আসে, কিন্তু বর্তমানে আমরা জানি বীর্য অণ্ডকোষের শুক্রাশয় থেকেই আসে। বর্তমান বিজ্ঞানের তথ্যের সঙ্গে এটা মিলানোর জন্য সাতটি আলাদা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ফড়িংয়ের কয়টা পা?

লেবীয় ১১:২১-২৩—“ফড়িংয়ের মত পোকাদের চার পা নয় বরং ছয় পা”

এটা আবার শুধুমাত্র অনুবাদসংক্রান্ত সমস্যা। উপরোক্ত ফড়িংদের চারটি সাধারণ পা আছে এবং লাফ দেওয়ার জন্য দু’টি অন্য রকম বড় পা। প্রাচীন কালে এগুলো হাটার পা হিসেবে গণ্য হত না, তাই এগুলোকে ‘চার-পা বিশিষ্ট’ পোকা বলা হত। আবার ‘চার পায়ে হাটা’ দিয়ে বোঝানো হত চার বা চারেরও বেশী পায়ের পোকা যেমন কীট এবং কেন্নো।

খরগোশ জাবর কাটে না

লেবীয় ১১:৫,৬—“খরগোশ এবং শাফন জাবর কাটে না”

এটা শুধুমাত্র অনুবাদের সমস্যা। বাংলায় যা অনুবাদ হয়েছে ‘জাবর কাটা’ হিব্রু ভাষায় তা হয় עָלָה גֵּרָה ‘আলাহ্‌ গেরাহ্‌ । এই শব্দ দিয়ে বোঝানো হয় গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ এবং শাফন যেভাবে আস্তে আস্তে তাদের খাবার দ্বিতীয় বার ছিবিয়ে খায়। আসলে খরগোশ এবং শাফন সত্যই এইভাবে করে। গরু-ভেড়ার মত করে তারা পেট থেকে সরাসরি খাবার ফিরে আনে না বরং সেটা পায়খানা করে আবার সেই পায়খানা দ্বিতীয়বার খায় যেন যা যা ঠিকমত হজম হয় নি সেটা আবার হজম করা যায়। এটা ইংরেজিতে বলা হয় refection। গরু-ছাগল পেট থেকে খাবার আবার সরাসরি মুখে এনে দ্বিতীয় বার তা ছিবিয়ে খায়, এবং সেটাকে ইংরেজিতে বলা হয় rumination

হিব্রু শব্দ ‘আলাহ্‌ গেরাহ্‌ দিয়ে বোঝানো হয় উভয় সম্পর্কিত জিনিস, refection এবং rumination। শুধুমাত্র আধুনিক যুগে এই দুই জিনিসের পার্থক্য বোঝা গেল। কিতাবগুলো টেক্‌নিকাল পরিভাষায় তো লেখা হয় নি, না হলে কোরআন এবং তওরাতে লেখা থাকত না “সূর্যোদয়” এবং “সূর্যাস্ত”। টেক্‌নিকাল অর্থে এটাও আবার ‘ভুল’, কারণ সূর্য ডুবে না বা উঠে না বরং পৃথিবী শুধু ঘুরছে।

কোরআন শরীফের ক্ষেত্রেও আয়াতগুলো অত আক্ষরিক ভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। সূরা যারিয়াতে লেখা আছে:

“আর প্রত্যেক বস্তু আমি সৃষ্টি করিয়াছি জোড়ায় জোড়ায়, যাহাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” (সূরা যারিয়াতে ৫১:৪৯)

কিন্তু কিছু কিছু প্রাণী আছে যেগুলোর স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গ নেই, যেমন নিউ মেক্সিকো ওয়িপ্‌টেইল লিজার্ডের (Cnemidophorus neomexicanus ) মত বেশ কিছু লিজার্ড প্রজাতি শুধু স্ত্রীলিঙ্গে হয় এবং নিজে নিজে গর্ভোৎপাদন করে ডিম পারে। আবার আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী একটি খুব ব্যাপক ছাতলা প্রজাতি আছে ( Schizophyllum commune ) যার অনেক বেশী লিঙ্গ আছে। এতে আমি কোরআনের সমালোচনা করছি না বরং শুধু দেখাচ্ছি যে কিতাব সবসময় আক্ষরিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে না।

বিশ্বব্যাপী বন্যা?

পয়দায়েশ ৭—“এখানে বলা হয়েছে যে মহাবন্যার পানি পুরো দুনিয়া ঢেকে ফেলেছে, কিন্তু বিজ্ঞানের তথ্য অনুযায়ী এটা অসম্ভব”

যারা এই রকম সমালোচনা করে তারা হয়ত জানে না যে ইতিহাস জুড়ে কোরআনের শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যাকারীরা একইভাবে কোরআন শরীফও ব্যাখ্যা করেছেন যে হযরত নূহের মহাবন্যা সর্বজনীন। ইবনে আব্বাস, ইবন কাসীর এবং আত-তাবারী সকলই কোরআন শরীফ এইভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। তারা এইভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন কারণ কোরআন শরীফ এইভাবে বলে:

“নূহ্‌ আরও বলিয়াছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক!’

জাহাজে প্রতিটি প্রজাতি?

পয়দায়েশ ৬:১৯—“হযরত নূহের জাহাজে প্রত্যেকটি জাতি প্রাণী ঢোকানো সম্বব না, কারণ বিশ্বে লক্ষ লক্ষ প্রজাতি আছে”

সমালোচকদের মনে করিয়ে দেওয়া উচিত যে কোরআন শরীফেও একই বর্ণনা পাওয়া যায় যে জাহাজে প্রতিটি প্রজাতি ছিল:

“অতঃপর আমি তাহার নিকট ওহী পাঠাইলাম, ‘তুমি আমার তত্ত্বাবধানে ও আমার ওহী অনুযায়ী নৌযান নির্মাণ কর, অতঃপর যখন আমার আদেশ আসিবে ও উনুন উথলিয়া উঠিবে তখন উঠাইয়া লইও প্রত্যেক জীবের এক এক জোড়া এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে …” (সূরা মু’মিনূন ২৩:২৭)

লক্ষ লক্ষ প্রজাতি আছে বটে, কিন্তু অধিকাংশই সমুদ্রে থাকে যাদের নৌকা ওঠার প্রয়োজন নেই। আবারও ডাঙার প্রাণীর মধ্যে শুধুমাত্র প্রধান ২৯০টা প্রজাতি ভেড়া থেকে বড়; অধিকাংশই ছোটখাট কীট বা পোকা। একজন তওরাত বিশেষজ্ঞ লিখেছেন—

জাহাজের মাপ স্থিতি এবং বহন-ক্ষমতার জন্য উত্তম ছিল। Hydrodynamic-ভাবে প্রমাণ করা হয়েছে যে ঐ মাপে সেটা উলটানো প্রায় অসম্ভব এবং বাইরে যত ঝড়তুফান হত ভিতরে মোটামুটি আরাম থাকত। প্রাচীন ‘ক্যুবিত’ মাপের জন্য আমরা যদি ন্যূনতম অনুমান ১৭.৫ ইঞ্চি ব্যবহার করি তাহলে জাহাজের মধ্যে ১২৫ হাজার ভেড়ার মত বড় প্রাণীর জন্য জায়গা হত। যেহেতু ডাঙার প্রাণীর মধ্যে (পাখি,সরীসৃপ, স্তন্যপ্রায়ী এবং উভচর প্রাণী) বিদ্যামান এবং লুপ্ত সর্বচ্চ ২৫,০০০ প্রজাতি আছে, এবং যেহেতু সেগুলো গড়ে ভেড়ার অনেক ছোট, সেহেতু খুব সহজেই সবগুলো নূহের জাহাজে ঢোকানো যেত, প্রাতিটি জোড়া আলাদা কক্ষে।

…প্রাণীগুলো অবশ্য কম বয়সি ছিল যেহেতু এরা জাহাজে এক বছর ধরে সেগুলো বংশবৃদ্ধি করে নি এবং মহাবন্যার পরে দুনিয়াতে আবার বংশবৃদ্ধি করল … যেসব প্রাণী জাহাজে ঢুকল সেগুলো হয়ত জাহাজের মধ্যে সারা বছর অচেতন অবস্থায় কাটাল।

আবার মহাবন্যা যদি কেবলমাত্র আঞ্চলিক হত (পয়দায়েশ ৭ অধ্যায় নিয়ে নিচের আলোচনা দেখুন), তাহলে হয়ত শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক প্রাণীগুলো জাহাজের ভিতরে ছিল।