মেসাল ৬:৭ – পিপিলিকাদের নেতা বা মজুরসরদার আছে?

মেসাল ৬:৭—“এই আয়াত অনুযায়ী পিপিলিকাদের কোন নেতা বা মজুরসরদার নাই, কিন্তু তাদের রাণী ও মজুরসরদার আছে।”

পিঁপড়াদের “হুকুম দেবার কেউ নেই,
তার উপরে কোন পরিচালক বা শাসনকর্তা নেই” (মেসাল ৬:৭)

নায়েক বলেন যে সেটা বিজ্ঞান বিপরীত, কারণ পিঁপড়াদের মধ্যে একজন রানী থাকে এবং মজুরসরদার থাকে। পিঁপড়া সমাজের সম্পর্কে অল্প একটু গবেষণা করলে জানা যায়, পিঁপড়ার ‘রানী’ কোন রকম নেতা নয়। একটি উইকিপিডিয়া এইভাবে বর্ণনা করেছেন—

The term “queen” is often deceptive, as the queen ant has very little control over the colony as a whole.

পৃথিবীর কি ধ্বংস হবে নাকি চিরকাল থাকবে?

জবুর ১০২:২৬—“এখানে বলা হয়েছে যে পৃথিবী ধ্বংস হবে না, কিন্তু জবুর ৭৮:৬৯ তার বিপরীত কথা লেখা আছ।”

অভিযোগটা হল যে জবুর ১০২:২৬ এবং ইবরানী ১:১১ বলা হয়েছে যে আসমান জমীন ধ্বংস হয়ে যাবে, কিন্তু হেদায়েতকারী ১:৪ এবং ৭৮:৬৯ আয়াতে বলা হয়েছে যে দুনিয়া চিরকাল থাকবে। কেমন করে দু’টোই ঠিক হতে পারে?…

পৃথিবী কি স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে?

জবুর ৯৩:১—“এখানে বলা হয়েছে যে পৃথিবী স্থায়ীভাবে স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু বিজ্ঞান অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে।”

এখানে “পৃথিবী” শব্দের ভুলব্যাখ্যা হয়েছে, কারণ “পৃথিবী” (হিব্রু תּבל তেবেল এবং ארץ ‘এরেত্‌স ) দিয়ে সাধারণত আমাদের পুরো গ্রহ বোঝানো হয় না বরং “দেশ”, “মহাদেশ” বা “জমিন” বা “এলাকা” বোঝানো হয়। এই আয়াতে বলা হয়েছে যে আল্লাহ্‌র সার্বভৌম ক্ষমতায় জমিন মোটামুটি স্থিতিশীল ও স্থায়ী।

আইয়ুব ২৬:১১ – আকাশের স্তম্ভ?

আইয়ুব ২৬:১১—“এই আয়াত বলে যে আকাশের স্তম্ভ রয়েছে”

আইয়ুব কিতাব একটি কাব্যিক লেখা, যার কারণে এতে অনেক রূপক, অলংকারবহুল ও অত্যুক্তিময় ভাষা আছে। আমরা নিশ্চিতভাবে জানি আইয়ুব আক্ষরিক অর্থ মনে করেনি যে আকাশের স্তম্ভ আছে, কারণ কয়েক আয়াত আগে তিনি বলেছিলেন—

তিনি শূন্যে উত্তরের আসমান বিছিয়ে দিয়েছেন;
শূন্যের মধ্যে দুনিয়াকে ঝুলিয়ে রেখেছেন। (আইয়ুব ২৬:৭)

অর্থাৎ আইয়ুব জানতেন যে আসমান শূন্যের উপর ঝুলছে, আবার তিনি জানতেন যে পুরো দুনিয়া শূন্যের উপর ঝলছে। সমালোচক যদি এই সব প্রমাণ গ্রহণ না করে, তাহলে মনে রাখতে হয় যে আইয়ুব কিতাবের শেষে আল্লাহ্‌ হযরত আইয়ুবকে ধমক দেয় সৃষ্টি সম্পর্কে “জ্ঞানহীন কথা” বলার জন্য (আইয়ুব ৩৮:১-৪)। এর পর হযরত আইয়ুব তওবা করেন, এবং আল্লাহ্‌ তাকে সম্মান করেন।

উল্লেখ্য যে কোরআন শরীফেও বিশ্বতত্ত্ব নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে, এবার উল্কাপিণ্ড নিয়ে:

“আমি নিকটবর্তী আকাশকে নক্ষত্ররাজির সুষমা দ্বারা সুশোভিত করিয়াছি, এবং রক্ষা করিয়াছি প্রত্যেক বিদ্রোহী শয়তান হইতে। ফলে উহারা উর্ধ্ব জগতের কিছু শ্রবণ করিতে পারে না এবং উহাদের প্রতি নিক্ষিপ্ত হয় সকল দিক হইতে- বিতাড়নের জন্য এবং উহাদের জন্য আছে অবিরাম শাস্তি। তবে কেহ হঠাৎ কিছু শুনিয়া ফেলিলে জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ড তাহার পশ্চাদ্ধ্বাবন করে। (সূরা সাফফাত ৩৭:৬-১০)

আইয়ুব ১০:৯-১০ – মানুষ পনিরের মত তৈরি?

তৈরি হয়েছে।”

এই উদ্ধৃতি হচ্ছে আল্লাহ্‌র প্রতি আইয়ুবের অভিযোগের একটি অংশ, যেখানে আইয়ুব ভুল করে দাবি করেছেন যে তিনি আল্লাহ্‌র গোপন কথা জানেন। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাকে এইভাবে সমালোচনা করেছেন:

তখন মাবুদ ঝড়ের মধ্য থেকে আইয়ুবকে জবাব দিলেন। তিনি বললেন, “এ কে, যে জ্ঞানহীন কথা দিয়ে আমার পরিকল্পনাকে সন্দেহ করে?

আইয়ুব ৯:৬ – সমতল পৃথিবীর নিচে থাম?

আইয়ুব ৯:৬—“এই আয়াত অনুযায়ী পৃথিবীর থাম আছে, অর্থাৎ পৃথিবী সমতল।”

এই সব আয়াত কোন ভূতাত্ত্বিক বর্ণনা নয় বরং কাব্যিক ভাষা ও উপমা দিয়ে আল্লাহ্‌র সার্বভৌম ক্ষমতা বর্ণনা করছে।

আবার এখানে “পৃথিবী” শব্দের ভুলব্যাখ্যা হয়েছে, কারণ “পৃথিবী” (হিব্রু תּבל তেবেল এবং ארץ ‘এরেত্‌স ) দিয়ে সাধারণত আমাদের পুরো গ্রহ বোঝানো হয় না বরং “দেশ”, “মহাদেশ” বা “জমিন” বা “এলাকা” বোঝানো হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরো “জগত”-এর ধারণাটি এই শব্দটি দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব না (যেমন পয়দায়েশ ৩৮:৯)। এই আয়াতগুলোতে আগেকার ভাষায় ‘পৃথিবীর স্থলভাগ’ বোঝানো হচ্ছে।

আইয়ুব ৯:৬ এবং জবুর ৭৫:৩ আয়াতে “থাম” এর মূল হিব্রু শব্দ עמוד ‘আম্মুদ, যার আরেকটি অর্থ “ভিত্তি” বা “মঞ্চ”। অর্থাৎ, বর্তমান পরিভাষায় এই আয়াত অনুবাদ করলে বলা হচ্ছে যে “মহাদেশীয় প্লেটগুলোর নিচে ভূগর্ভস্থ স্তর রয়েছে”। আল্লাহ্‌তা’লা প্রাচীন জনগোষ্ঠীর ভাষা, উপমা ও বাক্যালংকার ব্যবহার করেছেন। তিনি যদি সেকালের মানুষদেরকে বলতেন, “…তখন আমি মহাদেশীয় প্লেটগুলোর ভূগর্ভস্থ স্তরগুলো টিকিয়ে রাখি,” কেউ বুঝত না। একই ভাবে কোরআন শরীফেও বৈজ্ঞানিক পরিভাষা ব্যবহার হয় না বরং প্রাচীন চলতি ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। মূল কথায়, এই আয়াতের উদ্দেশ্য হল মানুষের ভাষায় আল্লাহ্‌তা’লার সার্বভৌমত্ব বোঝানো, প্রকৃতির তথ্য বোঝানো নয়।

১ শামুয়েল ২:৮ আয়াতে হান্নার মোনাজাতের মধ্যে “থাম”-এর মূল হিব্রু শব্দ হচ্ছে “মাৎসুক”, যা কিতাবুল মোকাদ্দসে মাত্র ২বার ব্যবহার হয়েছে এবং যার অন্য অর্থ “অবস্থান” (১ শামুয়েল ১৪:৫)। তার অর্থ “ভিত্তি”ও হতে পারে। আবার মনে রাখা উচিত এটা আল্লাহ্‌র কিতাবে সংরক্ষিত একজন সীমিত জ্ঞানের মানুষের মোনাজাত, এটা আল্লাহ্‌র ঘোষণা হয়।

কোরআনেও কিছু আয়াত আছে যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে সমতল পৃথিবীর কথা বলে—

“এবং আকাশের প্রতি লক্ষ্য করে না যে, তা কিভাবে উচ্চ করা হয়েছে?

উযায়ের এবং নহিমিয়ার তালিকার মোট সংখ্যা

উযায়ের ২:৬৪—“উযায়ের ২:৬৪ এবং নহিমিয়া ৭:৬৬ উভয়ই বলে যে মোট সংখ্যা ছিল ৪২,৩৬০, কিন্তু সংখ্যাগুলো যোগ করলে উযায়েরে হয় ২৯,৮১৮ এবং নহিমিয়ায় ৩১,০৮৯।”

[As stated above, Nehemiah is simply recording faithfully the numbers he found written on some genealogical register, not vouching for their accuracy ( .”.I

উযায়ের ২ অধ্যায় এবং নহিমিয়া ৭ অধ্যায়ে নির্বাসিত লোকদের সংখ্যা

উযায়ের ২ অধ্যায়—“নির্বাসিত লোকদের সংখ্যা নহিমিয়ায় ঠিক নাকি উযায়েরে ঠিক?”

এই প্রশ্নটি কিতাবের পরস্পরবিরোধিতা নয়, বরং সমালোচনাকারীর অজ্ঞতা প্রকাশ করে।

প্রথমতঃ উযায়ের যথার্থ হিসাবের দাবি করেছেন (“…তাদের সংখ্যা এই” – উযায়ের ২:২), কিন্তু নহিমিয়া এমন কোন দাবি করেন নি, বরং তিনি শুধু একটি তালিকায় যা দেখেছেন তাই বিশ্বস্তভাবে লিপিবদ্ধ করছেন (“…যারা প্রথমে ফিরে এসেছিল সেই লোকদের বংশ-তালিকা পেলাম। সেখানে যা লেখা ছিল তা এই:…” – নহিমিয়া ৭:৫)। তিনি কখনও এই তালিকার নির্ভরযোগ্যতা দাবি করেনি, বরং একজন ভাল ঐতিহাসিক হিসেবে ঐতিহাসিক দলিল লিপিবদ্ধ করেছেন।

দ্বিতীয়তঃ ঘটনার পটভূমি থেকে জানা যায় যে হযরত উযায়েরের তালিকা গণনা হয়েছে জেরুজালেমে যাবার আগেই যখন তারা সবাই ব্যাবিলনে ছিলেন (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৫০ দশকে), কিন্তু হযরত নহিমিয়ার তালিকা লেখা হয়েছে জেরুজালেমে পৌঁছানোর কয়েক বছর পরে (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৪৫ দশকে)। সম্ভবত সফরের সময়ে একটি চলমান তালিকা ছিল যেটা বার বার সংস্কার করা হত। দলের মধ্যে কেউ মারা গেলে বা ব্যাবিলনে ফিরে গেলে, বা নতুন কেউ দলে যোগ দিলে তালিকাটা পরিবর্তন করা হত। তাই উযায়েরের তালিকা হচ্ছে এই চলমান তালিকার শুরুর একটি সঠিক কপি, আর নহিমিয়ার তালিকা হচ্ছে সফরের শেষে তালিকার সঠিক লিপি।

দুই তালিকার মধ্যে নামের অমিল থাকা স্বাভাবিক। হিব্রু এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংস্কৃতিতে একজনের ২ বা ৩টি নাম থাকত। তাই “হারীফ”-কে (নহিমিয়া ৭:২৪) উযায়েরে বলা হয় “যোরাহ্‌” (উযায়ের ২:১৮), এবং “সীয়”-কে (নহিমিয়া ৭:৪৭) উযায়েরে বলা হয়েছে “সীয়হা” (উযায়ের ২:৪৪)।

উযায়ের ২:৬৪—“উযায়ের ২:৬৪ এবং নহিমিয়া ৭:৬৬ উভয়ই বলে যে মোট সংখ্যা ছিল ৪২,৩৬০, কিন্তু সংখ্যাগুলো যোগ করলে উযায়েরে হয় ২৯,৮১৮ এবং নহিমিয়ায় ৩১,০৮৯।”

সহজ উত্তর হচ্ছে যে মোট সংখ্যায় নহিমিয়া তার তালিকায় বাড়তি ১১,২৭১ জনকে যোগ করেছিলেন এবং উযায়ের তার তালিকায় বাড়তি ১২,৫৪২ জনকে যোগ করেছিলেন। কোন না কোন কারণে, তারা এই বাড়তি লোকদের উল্লেখ করতে চান নি। মোট সংখ্যা যদি যোগফলের কম হত, তাহলেই সমস্যা হত, কিন্তু বেশী হলে সমস্যা নেই। হয়ত সেই বাড়তি ১২,৫৪২ জন হচ্ছে যারা ছেলে কিন্তু মোট হিসাবে ‘পুরুষ মানুষ’ হিসাবে গোণা হয়নি। আমরা জানি গোষ্ঠীর সংখ্যায় আছে শুধু ১২ বছর বয়সের উপর যারা। অন্য ব্যাখ্যাকারী বলেন যে এরা ছিলেন ইসরাইলের অন্যান্য গোষ্ঠীর লোক যারা দক্ষীণ এহুদা, বিনইয়ামীন ও লেবীয় রাজ্যের বাইরে ছিল, তাই এদের বিস্তারিত হিসাব দেওয়া হয়নি। তাদের পরিচয় যাই হোক, এদেরকে বাদ দেওয়ার জন্য কোন না কোন কারণ নিশ্চয়ই ছিল।

২ খান্দাননামা ৩৬:৯ – যেহোয়াখীন ৮ নাকি ১৮ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন?

২ খান্দাননামা ৩৬:৯—“এখানে বলা হয়েছে যে যেহোয়াখীন ৮ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন, কিন্তু ২ বাদশাহ্‌নামা ২৪:৮ আয়াতে বলা হয়েছে তিনি ১৮ বছর বয়সে রাজা হলেন।”

এই প্রথম আয়াতের অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে (যেমন সেপ্টুয়াজিন্ট, সীরিয়, এবং একটী হিব্রু পাণ্ডুলিপিতে) আসলে “১৮” লেখা আছে, যেটা ২ বাদশাহ্‌নামার সঙ্গে মিলে যায়। এটা কিন্তু স্পষ্ট যে “১৮”তে “১” সংখ্যা বাদ দেওয়া একটি কপি করার ভুল ছিল, তাই অধিকাংশ অনুবাদ “১৮” সংখ্যাটা ব্যবহার করা হয়েছে।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ:

২ খান্দাননামা ২২:২ – বাদশাহ্‌ অহসিয় ৪২ বছর বয়সে নাকি ২২ বছর বয়সে বাদশাহ্‌ হলেন?

২ খান্দাননামা ২২:২—“বাদশাহ্‌ অহসিয় ৪২ বছর বয়সে নাকি ২২ বছর বয়সে (২ বাদশাহ্‌নামা ৮:২৬) বাদশাহ্‌ হলেন?”

কিছু কিছু প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে (সেপ্টুয়াজিন্ট এবং সীরিয়) লেখা আছে “২২”, যেটা ২ বাদশাহ্‌নামার সঙ্গে মিলে যায়; অন্য কিছু পাণ্ডুলিপিতে লেখা আছে “৪২”। এটা অবশ্যই একটি কপি করার ভুল।


অন্যান্য সম্পর্কিত প্রবন্ধ: