‘গসপেল অব বার্নাবাস’ কি প্রকৃত ইঞ্জিল ছিল না?

বাংলাদেশে ইদানিং কিছু কট্টরপন্থী টেলিভিশন প্রচারক দাবি করছে যে “গসপেল অব বার্নাবাস” নামক একটি রচনা হচ্ছে আসল ইঞ্জিল, যেটা খ্রিষ্টান চার্চ ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণের কাছ থেকে শত শত বছর ধরে লুকিয়ে রেখেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা একমত যে এই তথাকথিত ‘গসপেল’ রচিত হয়েছে মধ্যযুগেই, অর্থাৎ মসীহের দেড় হাজার বছর পরে। সেটা স্পেনে লেখা হয়েছে নাকি ইতালীতে লেখা হয়েছে, শুধু এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের কোন দ্বিমত রয়েছে। একজন বিশিষ্ট মুসলিম লেখক ও ইসলামি চিন্তাবিদ এইভাবে লিখেছেন:

As regards the “Gospel of Barnabas” itself, there is no question that it is a medieval forgery … It contains anachronisms which can date only from the Middle Ages and not before, and shows a garbled comprehension of Islamic doctrines, calling the Prophet the “Messiah”, which Islam does not claim for him.

ইঞ্জিলের নির্ভরযোগ্যার পক্ষে পাণ্ডুলিপির প্রমাণ

১. পাণ্ডুলিপির প্রমাণ

অন্যান্য সকল গ্রীক বা ল্যাটিন লেখার চেয়ে অনেক অনেক বেশী পুরানো পাণ্ডুলিপি রয়েছে কিতাবুল মোকাদ্দসের। তার জন্যে আরও অনেক বেশী সংখ্যক পাণ্ডুলিপি রয়েছে এবং আরও অনেক বেশী পুরানো পাণ্ডুলিপি রয়েছে। অন্যান্য ক্ল্যাসিকাল লেখকদের পাণ্ডুলিপির তুলনায়, ইঞ্জিল শরীফের জন্যে ১,০০০ গুণ বেশী পাণ্ডুলিপি রয়েছে। অর্থাৎ, আমরা যদি ইঞ্জিল শরীফের নির্ভরযোগ্যতা অস্বীকার করি, তাহলে প্রাচীন সভ্যতার অন্যান্য প্রত্যেকটি দলিল আরও বেশী করে অস্বীকার করতে হবে। মূল গ্রীক ইঞ্জিলের জন্য ৫,৭০০ এর বেশী পাণ্ডুলিপি বর্তমান রয়েছে।
বিভিন্ন প্রাচীন লেখার জন্যে পাণ্ডুলিপির প্রমাণের তুলনা

রচনা লেখার কত বছর পরে প্রথম পাণ্ডুলিপি
রচনা লেখার কত বছর পরে প্রথম পাণ্ডুলিপি প্রাচীন পাণ্ডুলিপির সংখ্যা
প্লেটো ১,৩০০ বছর
হোমারের ‘ইলিয়াদ’ ৪০০ বছর ৬৪৩
সিজারের ‘গ্যালিক যুদ্ধ’ ১,০০০ বছর ১০
লিবীর ‘রোমের ইতিহাস’ ৪০০ বছর ২৭
তাকিতুসের ‘পঞ্জিকা’ ১,০০০ বছর ২০
থুকিডাইডেসের ‘ইতিহাস’ ১,৩০০ বছর
হিরোডোটাসের ইতিহাস ১,৩৫০ বছর
ইঞ্জিল শরীফ ৫০ বছর ৫,৭০০(মূল ভাষায়)

৫,৭০০ হচ্ছে শুধু মূল গ্রীক ভাষায় পাণ্ডুলিপির সংখ্যা—প্রাচীন সিরিয়, মিশরীয়, ল্যাটিন, আর্মেনীয়, জর্জিয় এবং গথিক ভাষায় প্রাচীন অনুবাদে ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ পাণ্ডুলিপি আছে। ইঞ্জিলের জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শত শত বছর আগে থেকে তিনটি প্রধান পাণ্ডুলিপি রয়েছে—

কোডেক্স আলেকজান্ড্রিকাস


কোডেক্স আলেকজান্ড্রিকাস

– লণ্ডনে ব্রিটিশ যাদুঘরে অবস্থিত এই পাণ্ডুলিপি মসীহ্‌র পর পঞ্চম শতাব্দীতে লেখা হয়েছে। দু’এক পাতা ছাড়া এই পাণ্ডুলিপিতে পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস রয়েছে।

কোডেক্স সিনাইতিকুস

কোডেক্স সিনাইতিকুস – ব্রিটিশ যাদুঘরে অবস্থিত এই পুরো ইঞ্জিল শরীফের পাণ্ডুলিপি লেখা হয়েছে চতুর্থ শতাব্দীর শেষের দিকে।

কোডেক্স ভ্যাটিকানুস

কোডেক্স ভ্যাটিকানুস – রোমের ভ্যাটিকান গ্রন্থাগারে অবস্থিত এই চতুর্থ-শতাব্দীর পাণ্ডুলিপিতে পুরো ইঞ্জিল শরীফ আছে।

এগুলো দু’টি আলাদা text-type (অর্থাৎ এক মূল লিপি থেকে প্রতিলিপির গোষ্ঠী) থেকে এসেছে, কিন্তু তবুও সেগুলো সঙ্গতিপূর্ণ।

এই পূর্ণ পাণ্ডুলিপিগুলো ছাড়া, ইঞ্জিল শরীফের অনেক পাণ্ডুলিপির অংশ রয়েছে মূল লেখার ৪০-৬০ বছর পর থেকে। যেমন ধরুন, ১৩৫ খ্রীষ্টাব্দের p52 প্যাপিরাসে ইঞ্জিল শরীফের ইউহোন্না ১৮ অধ্যায়ের একটি অংশ আছে। নীল নদের ধারে আবিষ্কৃত এই পাণ্ডুলিপি দিয়ে প্রমাণ হয় যে ইউহোন্না সুখবর খুব তাড়াতাড়ি লেখার স্থান (ইফিষ শহর) থেকে অনেক দূরে ছড়িয়ে গেল। যেখানে ক্ল্যাসিকাল লেখকদের জন্য প্রথম ৫০০ থেকে কোন পাণ্ডুলিপি নেই, ইঞ্জিল শরীফের সমাপ্তির পরে প্রথম ১০০ বছর থেকে ১০-১৫ পাণ্ডুলিপি আছে এবং প্রথম ৩০০ বছর থেকে ৯৯ পাণ্ডুলিপি রয়েছে।

২.

জাকির নায়েকের যুক্তি কি নির্ভরযোগ্য?

দারুল উলুম দেওবন্দের দারুল ইফতা (ভারতবর্ষের শীর্ষস্থানীয় ইসলামী মাদ্রাসা) জাকির আব্দুল কারিম নায়েকের বিরুদ্ধে একটি আনুষ্ঠানিক ফতোয়া দিয়েছেন। ২০০৮ সালে এরা নায়েকের সম্বন্ধে বলেছেন—

“…একজন গাইর মুক্বাল্লিদীন প্রচারক …তার কথার উপর নির্ভর করা উচিত নয়”

“…তিনি নির্ভরযোগ্য নন, এবং মুসলমানদের তার কথা শোনা উচিত নয়।”

এরা আরো বলেন যে—

“…ভুল ধারণা ছড়িয়ে তিনি ইলম ও হিকমতের পথ থেকে সরে গেছেন এবং সরল মুসলমানদের ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”

আরো অনেক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে এই ধরনের বিরোধিতা প্রকাশ করেছেন। জুন ২০১০ সালে জাকির নায়েকের যুক্তরাজ্যে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেছে যুক্তরাজ্যের ২০লক্ষ সুন্নি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব British Muslim Forum সংগঠন। মাওলানা আহমাদ নিসার বেগ কাদরি, ব্রিটিশ মুসলিম ফোরামের ভাইস-চেয়ারমান বলেন—

“Dr.

জাকির নায়েকের পরিচয়

ডাঃ জাকির আব্দুল-করিম নায়েক মুম্বাই থেকে ‘পীস টিভি” নামক একটি চ্যানেল পরিচালনা করছে যার মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ওয়াহাবি প্রপাগান্ডা প্রচার করেন। নায়েকের ভুল তথ্য, ভুলব্যাখ্যা এবং কিতাব-বিরুদ্ধ মতবাদের কারণে অনেক বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্মীয় নেতারা জাকির নায়েকের বিরোধিত করে। ভারতের শীর্ষ ইসলামি বিদ্যালয় দেওবন্দ মাদ্রাসার মুফতিগণ তাঁর সম্বন্ধে বলেছেন—

“…একজন গাইর মুক্বাল্লিদীন প্রচারক …তার কথার উপর নির্ভর করা উচিত নয়”

“…তিনি নির্ভরযোগ্য নন, এবং মুসলমানদের তার কথা শোনা উচিত নয়।”

এরা আরো বলেন যে—

“…ভুল ধারণা ছড়িয়ে তিনি ইলম ও হিকমতের পথ থেকে সরে গেছেন এবং সরল মুসলমানদের ভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”

জাকির নায়েকের যুক্তি, দৃষ্টিভঙ্গি এবং ভুল তথ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার জন্য জাকির নায়েকের যুক্তি কি নির্ভরযোগ্য?’

সোলায়মান ৫:১৬ – মুহাম্মদের নাম?

জাকির নায়েক সোলায়মান পুস্তিকার ৫:১৬ আয়াতে মুহাম্মদকে নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বানী আছে বলে দাবি করেন:

“তাঁর মুখখানা খুব মিষ্টি, তাঁর সবই সুন্দর।
হে জেরুজালেমের মেয়েরা, উনিই আমার প্রিয়, আমার বন্ধু।” (সোলায়মান ৫:১৬)

যে প্রসঙ্গের মধ্যে এই কথাটি বলা হয়েছে, জাকির নায়েক তা খুব সাবধানে লুকিয়ে রেখে দাবি করেন যে যেহেতু “প্রেমিক” হিব্রু ভাষায় হয় מחמד (ম-হ-ম-দ, আরবীতে محمد), সেহেতু এটি মুহাম্মদকে নিয়ে একটি ভবিষ্যদ্বানী। অথচ এই আয়াতটি এমন একটা অধ্যায়ের অংশ যেখানে বিয়ের সময়ে একজন কনে তার বরের বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছেন। তথাপি নায়েকের নতুন অনুবাদ অনুযায়ী “প্রেমিক” এই বিশেষণকে বাদ দিয়ে একটা নাম বসাতে হবে যা এই বাক্যের ব্যাকরণের সঙ্গে খাপ খায় না:

‘তাঁর মুখখানা খুব মিষ্টি, וְכֻלֹּו מַחֲמַדִּיםতাঁর সবই মুহাম্মদ” (সোলায়মান ৫:১৬)

এই পুরো অধ্যায়টা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে এই আয়াতে মোহাম্মদের বিষয়ে কিছু বলা হয় নি এবং এটি কোন ভবিষ্যদ্বানীও নয়, বরং এমন ধরণের দাবি করা শুধুমাত্র মানুষকে ভ্রান্ত করার একটা চেষ্টা। নায়েকের এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে আমরা এই ধরণের আরও অনেক ‘ভবিষ্যদ্বানী’ কিতাবুল মোকাদ্দসে আবিষ্কার করতে পারি । হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর ঠিক আগে ও পরে মানী এবং মিরজা হুসেইন আলী (বাহাউল্লাহ) নামক দু’জন অ-মুসলিম নবী ‘কিতাব’ নিয়ে এসে দাবি করেছেন যে তারাও ঈসা নবীর পরে আগত নবী। জাকির নায়েকের এই সন্দেহজনক পদ্ধতি আমরা যদি এই লোকদের জন্য ব্যবহার করি, তাহলে আমরা দেখি যে, বাহাউল্লাহ্‌ (חסין) নামটি জবুর শরীফ ৮৯:৮ আয়াতে উল্লেখ করা আছে এবং মানী (מנּי) নামটা গোটা কিতাবুল মোকাদ্দসে ১৮টি জায়গায় উল্লেখ করা আছে!…

কিতাবুল মোকাদ্দস থেকে কি মুহাম্মদের কথা মুছে ফেলা হয়েছে?

যেহেতু মুহাম্মদ সম্পর্কে উপরোক্ত সব “ভবিষ্যদ্বানী” এত অসম্ভাব্য, কিছু কিছু লোক দাবি করে যে খ্রিস্টান ও ইহুদীগণ হিংসাপরায়ণ ভাবে মুহাম্মদ সম্পর্কে ভবিষ্যবাণীগুলো সরিয়ে ফেলেছে। নিচে এই দাবি করা যে সম্পূর্ণ অসম্ভব তার তিনটি কারণ তুলে ধরা হলো:

১. খ্রীষ্টান ধর্মের উৎপত্তি থেকেই তারা ইহুদী ধর্মীয়-নেতাদের বিপক্ষে, কারণ তারা খ্রীষ্টধর্মের মূল নবীকে অস্বীকার করেন। ঈসা নবী সম্পর্কে ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্যেও ইহুদীগণ ঈসা নবীকে তাদের ওয়াদাকৃত মসীহ্‌ হিসেবে মেনে নেন না যা কিনা তাদের মধ্যে অনেক ইহুদী-খ্রীষ্টান সংঘাতের সূত্রপাত ঘটিয়েছে। ইহুদীগণ যদি মুহাম্মদকে কে নিয়ে করা ভবিষ্যদ্বানীগুলো মুছে দিতে পারেন, তাহলে তারা কেন মসীহের সম্পর্কে একটা ভবিষ্যদ্বানীও মুছে ফেললেন না?…

মসীহের বিষয়ে তুলনামূলকভাবে সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বানী

আসুন আমরা হযরত মুহাম্মদের সম্পর্কে এইসব অসম্ভাব্য ভবিষ্যদ্বাণীগুলো, মসীহের সম্পর্কে তৌরাত, জবুর, এবং নবীদের কিতাবে পাওয়া কয়েকটি অকাট্য পরিষ্কার ভবিষ্যদ্বানীর সংঙ্গে তুলনা করি। আমরা প্রথমে ইশাইয়া কিতাবের ৫৩ অধ্যায়ের সেই বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে শুরু করবো। যারা ঈসা নবীর জীবনীর সঙ্গে সুপরিচিত, তাদের কাছে মসীহের বিষয়ে শত শত বছর আগে লেখা এই বর্ণনা কীভাবে হুবহু তার জীবনের সাথে মিলে যায় তা দেখলে সত্যিই আশ্চর্য লাগে:

আমাদের দেওয়া খবরে কে বিশ্বাস করেছে?

ইউহোন্না ১৪ – “পারাক্লেতস”

“তোমরা যদি আমাকে মহব্বত কর তবে আমার সমস্ত হুকুম পালন করবে। আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারী কে পাঠিয়ে দেবেন। সেই সাহায্যকারীই সত্যের রূহ্ । দুনিয়ার লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ তারা তাঁকে দেখতে পায় না এবং তাঁকে জানেও না। তোমরা কিন্তু তাঁকে জান , কারণ তিনি তোমাদের সংগে সংগে থাকেন আর তোমাদের দিলে বাস করবেন।” (ইউহোন্না ১৪:১৫-১৭)

“তোমাদের সংগে থাকতে থাকতেই এই সব কথা আমি তোমাদের বলেছি। সেই সাহায্যকারী, অর্থাৎ পাক-রূহ্‌ যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যা কিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন।” (ইউহোন্না ১৪:২৫-২৬)

“যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবেন। ইনি হলেন সত্যের রূহ্ যিনি পিতার কাছ থেকে আসবেন। আর তোমরাও আমার বিষয়ে সাক্ষ্য দেবে, কারণ প্রথম থেকেই তোমরা আমার সংগে সংগে আছ।” (ইউহোন্না ১৫:২৬-২৭)

নায়েক ও দিদাতের মত দা’ওয়া প্রচারকগণ দাবি করে যে এই আয়াতে মুহাম্মদের কথা বলা হয়েছে। তাদের কথা অনুসারে এখানে উল্লেখিত “পরামর্শদাতা”-ই হলেন হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)। আসুন তাহলে আমরা কিতাবের উদ্ধৃতি বিশ্লেষণ করে এই আসন্ন পরামর্শদাতাকে কীভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তার একটা তালিকা প্রস্তুত করে সেগুলো ভালভাবে বিশ্লেষণ করি:

“আরেকজন সাহায্যকারী” (১৪:১৬)

“চিরকাল থাকবার জন্য” (১৪:১৬)

“সত্যের রূহ্‌” (১৪:১৭)

দুনিয়ার লোকেরা তাঁকে দেখতে পায় না (১৪:১৭)

দুনিয়া তাঁকে গ্রহণ করে না , কিন্তু মসীহের সাহাবীদের কাছে তিনি পরিচিত (১৪:১৭)

তিনি তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকেন এবং তোমাদের দিলে বাস করবেন (১৪:১৭)

“পাক-রূহ্‌” (১৪:২৫)

আল্লাহ্‌র কাছে থেকে ঈসা তাঁকে পাঠিয়ে দেবেন (১৫:২৬)

“আরেকজন সাহায্যকারী” (১৪:১৬) — এখানে যে গ্রীক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তা হল “পারাক্লেয়তস্‌” (παράκλητος), যাকে ‘পরামর্শদাতা’, ‘সান্ত্বনাদাতা’, ‘সাহায্যকারী’, ‘প্রবক্তা’ হিসেবে অনুবাদ করা যায়। যারা দাবী করেন যে এখানে মুহাম্মদের কথা বলা হচ্ছে, তারা অনেকে বলেন যে মুহাম্মদই হলেন সেই ‘সান্ত্বনাদাতা’। অনেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে উদ্ভট দাবি করে বসেন যে, “পারাক্লেয়তস্‌” বাদ দিয়ে এখানকার আসল শব্দটি হলো “পেরিক্লূতস্‌” যার মানে “প্রশংসিত” আরবীতে যার অনুবাদ হবে “আহ্‌মাদ” (মুহাম্মদের পরিগ্রহন করা একটি নাম)। কিন্তু মুহাম্মদের পূর্বে গ্রীক ভাষায় হস্তলিখিত হাজার হাজার ইঞ্জিলের পান্ডুলিপির মধ্যে কোন-ও পান্ডুলিপিতে এই “পেরিক্লূতস্‌” শব্দটি নেই। দ্বিতীয়ত, উপরোক্ত এই “প্রশংসিত” শব্দটি এই বাক্যে ব্যবহার করলে বাক্যটি হয়ে যায়,

“আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন (ἄλλος) প্রশংসিত পাঠিয়ে দেবেন।”

যদি “আরেকজন আহ্‌মাদ”-এর কথা এখানে বলা হয়ে থাকে তাহলে প্রথম আহ্‌মাদটি কে?…

ইশাইয়া ২৯:১১-১৩ – “একজন অশিক্ষিত নবীর কাছে কিতাব”

ইশাইয়া ২৯:১১-১৩ উল্লেখিত তথাকথিত ভবিষ্যদ্বানী

কিতাবুল মোকাদ্দসে মুহাম্মাদ(সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বানী হিসেবে জাকির নায়েক উল্লেখ করতে পছন্দ করেন “বুক অভ আইজায়ার,অধ্যায় ১২, অনুচ্ছেদ ২৯” (আসলে অধ্যায় ২৯ , ১২ আয়াত !)। জাকির নায়েক যেভাবে উদ্ধৃতি দেন মনে হয় সেটা একটি আশ্চর্য ভবিষ্যদ্বানী:

“একজন নবীকে যিনি শিক্ষিত নয়, একটি কিতাব দেওয়া হবে।”

কিন্তু যদি আমরা যেকোন অনুবাদের কিতাবুল মোকাদ্দস নিজে খুলে দেখি, আমরা লক্ষ করবো যে নায়েক চতুর ভাবে “নবী” শব্দটা উদ্ধৃতির মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে যেখানে মূল হিব্রু ভাষায় সেই শব্দ নেই:

“…যে তেলাওয়াত করতে জানে না তাকে কিতাবটা দিয়ে যদি বলা হয়, “দয়া করে এটা তেলাওয়াত করুন,” তবে জবাবে সে বলবে, “আমি তেলাওয়াত করতে জানি না।” (ইশাইয়া ২৯:১২)

এখন যদি আমরা কিতাবে এই অধ্যায়ের প্রসঙ্গ মূল্যায়ন করি, তাহলে বোঝা যায় যে এখানে নবী ইশাইয়ার শ্রোতাদের অহেতুক অজুহাত নিয়ে বলা হচ্ছে। এখানে গোটা অনুচ্ছেদটা তুলে দেওয়া হল:

“…গোটা দর্শনটাই তোমাদের কাছে কেবল সীলমোহর করা গুটানো-কিতাবের মত হয়েছে। যে তেলাওয়াত করতে জানে তাকে যদি সেই কিতাবটা দিয়ে বলা হয়, “দয়া করে এটা তেলাওয়াত করুন,” তবে জবাবে সে বলবে, “আমি পারব না, কারণ এটা সীলমোহর করা হয়েছে।” কিংবা যে তেলাওয়াত করতে জানে না তাকে কিতাবটা দিয়ে যদি বলা হয়, “দয়া করে এটা তেলাওয়াত করুন,” তবে জবাবে সে বলবে, “আমি তেলাওয়াত করতে জানি না।” দ্বীন-দুনিয়ার মালিক বলছেন, “এই লোকেরা মুখেই আমার এবাদত করে আর মুখেই আমাকে সম্মান করে, কিন্তু তাদের দিল আমার কাছ থেকে দূরে থাকে।” (ইশাইয়া ২৯:১১-১৩)

তাহলে, এই আয়াতটি যদি একটা ভবিষ্যদ্বাণীই হতো (বিশ্লেষণে যদিও এটা আসলে কোনো ভবিষ্যদ্বানী নয়), তবে তো মানব জাতির ইতিহাস জুড়ে সকল শিক্ষিত (১১ আয়াত) ও অশিক্ষিত (১২ আয়াত) ব্যাক্তির দ্বারাই এই ভবিষ্যদ্বানী পূর্ণ করা সম্ভব!…

দ্বিঃবিঃ ১৮ – হযরত মূসার মত একজন নবী

তৌরাত শরীফের দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ অধ্যায়

অধিকাংশ বাইবেল বিশেষজ্ঞরা একমত যে, দ্বিতীয় বিবরণে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বানীটিতে ঈসা মসীহের কথা বলা হচ্ছে। শুধু খ্রীষ্টানরাই নয়, এমনকি হযরত ঈসা মসীহের জন্মেরও শত বছর আগে থেকেই ইহুদীগণ মনে করতেন যে এই আয়াতে তাদের সেই আসন্ন “মসীহ্‌” ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ইদানিং কালে কিছু ইসলামিক টেলিভিশন প্রোগ্রামগুলোতে দাবি করা হচ্ছে যে, দ্বিতীয় বিবরণের এই ভবিষ্যদ্বানীটি ঈসা মসীহ্‌কে নিয়ে নয় বরং হযরত মোহাম্মদের (স) বিষয়ে করা হয়েছে:

১৫”তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্ তোমাদের মধ্য থেকে, তোমাদের ভাইদের মধ্য থেকেই তোমাদের জন্য আমার মত একজন নবী দাঁড় করাবেন। তাঁর কথামত তোমাদের চলতে হবে। ১৬তুর পাহাড়ের কাছে যেদিন তোমরা সবাই মাবুদের সামনে জমায়েত হয়েছিলে সেই দিন তোমরা তোমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌র কাছে তা-ই চেয়েছিলে। তোমরা বলেছিলে, ‘আর আমরা আমাদের মাবুদ আল্লাহ্‌র কথা শুনতে কিংবা এই মহান আগুন দেখতে চাই না; তা হলে আমরা মারা যাব।’

১৭“মাবুদ আমাকে বলেছিলেন, ‘তারা ভালই বলেছে। ১৮আমি তাদের ভাইদের মধ্য থেকে তাদের জন্য তোমার মত একজন নবী দাঁড় করাব। তার মুখ দিয়েই আমি আমার কথা বলব, আর আমি যা বলতে তাকে হুকুম দেব সে তা-ই তাদের বলবে। ১৯সেই নবী আমার নাম করে যে কথা বলবে কেউ যদি আমার সেই কথা না শোনে, তবে আমি নিজেই সেই লোককে দায়ী করব।”
(তৌরাত শরীফ, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫-১৯)

তবে এই ভবিষ্যদ্বানীটিতে সঠিক নবীকে চিনে নেবার জন্য তিনটি প্রাথমিক শর্ত দেওয়া হয়েছে:

১.